- আব্দুস সালাম ইবন হাশিম
সালাফের কাছে রমযান ছিলো পরম আরাধ্যের মাস। বসন্তে যেমন ফুলে ফুলে রাঙিয়ে উঠে বাগিচা, নয়া পত্রপল্লবে হরিত হয়ে ওঠে পৃথিবী ঠিক রমযান এলেও মহান সালাফগণ শোভিত হতেন ইবাদত বন্দেগীতে, রাঙিয়ে উঠতেন আল্লাহ ও লিল্লাহিওয়াতের রঙে। কিয়ামুল লাইল, সিয়ামুন নাহার, তিলাওয়াতুল কুরআন, আযকার, আদঈয়া, ইনাবাত ইলাল্লাহের এক স্বর্গীয় বাসন্তী জীবনে তারা বিলোল হতেন একটি মাসের জন্য। রমযানের রাতগুলোকে বিনিদ্র রেখে কিয়ামে নিমগ্ন হওয়ার গল্প জানবো আজকের পর্বে।
সালাতে বিনিদ্র রজনী
সারা বছরই মহান সালাফ কিয়ামুল লাইলের আমলে গুরুত্ব দিতেন। রমযান এলে এই আমল তাঁরা দশগুণ বাড়িয়ে দিতেন। প্রচণ্ড কষ্টকর হলেও তাঁরা যাওফে লাইলে এই আমলে ফানা হতেন। হাসান বসরী রা. তো অকপটে স্বীকার করেছেন ‘গভীর রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চাইতে কঠিন কোনো ইবাদাত আমি পাইনি’। তারপরও বসরার এই আলেমের তাহাজ্জুদের গল্প সবারই জানা।
উবাঈ ইবন কা’আব ও তামিম আদ দারী রাদি. রমযানে ১১ রাকাআত কিয়ামুল লাইল পড়াতেন। সাঈব ইবন ইয়াযিদ রাদি. বলেন, এই দুজন ক্বারী একশ আয়াতের কমে কোনো সূরা পড়তেন না। আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম যে, শেষে লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়ানো লাগতো। এভাবে ফযরের আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতাম।
আরও পড়ুন–সালাফের রমযান।। পর্ব-১
আব্দুল্লাহ ইবন আবু বকর রা. বলেন, বাবা বলেন, আমরা কিয়ামুল লাইল শেষ করে ঘরে ফিরে খাদেমদেরকে তাড়াতাড়ি সেহেরি দিতে বলতাম। কারণ ফজর হয়ে গেলো কিনা সেই শঙ্কা কাজ করতো।
ফুযাইল ইবন ইয়ায বলেন, তুমি সিয়ামুন নাহার ও কিয়ামুল লাইল যদি না করতে পারলে তাহলে তুমি বঞ্চিত, তুমার হাত শৃঙ্খলাবদ্ধ। পাপ তোমার হাতে শেকল পরিয়ে দিয়েছে।
শাদ্দাদ ইবনে আউস এর ঘটনা- তিনি যখন ঘুমাতে যেতেন গরম কড়াইয়ের মধ্যে ভাজা খুদের মত ছটফট করতেন। বিরবির করে বলতেন, আল্লাহ- জাহান্নাম তো আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। এটা বলে তিনি জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
মহান সালাফ এভাবেই রাতে তন্নতন্ন হতেন কিয়ামুল্ল লাইলের মুসল্লায়। তাঁদের থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরাও যদি এই আমলে ধ্যান দেই রোয হাশরের দিন আমরাও শামিল হতে পারব আকাবিরের কাতারে।
লেখক, পরিচালক- ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমী