- আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
আজ থেকে সতের বছর আগে ১ এই বাংলার দামাল ছেলেরা, কিষান-কিষানীরা ছাত্র যুবক, মেহনতী মানুষেরা এক দারুন আবেগে ফুসে উঠেছিল। সাগর সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এইদিনে। স্বাধীনতার লাল সূর্যটা হেসে উঠেছিল বিজয় গর্বে। কিষানী ভেবেছিল তার গোয়ালে দুধের গাই আসবে, কিষান মনে করেছিল সোনালী ধানে আবার তার উঠান ভরে উঠবে। গাঁয়ের নতুন বউ আশায় ছিল রেশমী চূড়ীর রিণ-রিণীতে ভরে উঠবে মন, মধুরে বাজবে মল। মেহনতীরা স্বপ্ন দেখেছিল তাদের শ্রমের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। জুলুমের দিন আজ শেষ।
কিন্তু, কিন্তু.. আজ আমরা কী দেখছি? ছমীরনের গায়ে কি কাপড় উঠেছে? শরফত আলীর পেটে কি দুবেলা ভাত জুটছে? শবমেহেরদের কি ইজ্জতের জন্য আর লাশ হতে হচ্ছে না? কেন এমন হল? কে এর জন্য দোষী? কেমন করে অন্যের স্বপ্নেরা সব হারিয়ে গেল নিকষ আঁধারে?
সর্বত্র যেখানে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মার খাচ্ছে চরম ভাবে সেখানে সুখী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব কেমন করে?
দোষী আমি, আপনি, আমাদের সমাজ। আমাদের সিষ্টেম। স্বাধীনতা অর্জন কঠিন বটে কিন্তু এর সুফল ঘরে তোলা তো আরো কঠিন। সর্বত্র যেখানে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মার খাচ্ছে চরম ভাবে সেখানে সুখী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব কেমন করে? আমরা আজ সবাই সকলের হাতে মার খাচ্ছি ভীষণভাবে। আমরাতো আজ সহযোগী নই কেউ কারো। প্রত্যেকেই যেন সঙ্গীন উঁচিয়ে আছি প্রত্যেকের দিকে দিকে। ক্রেতা শোষিত হচ্ছে খুচরা বিক্রেতার কাছে, খুচরা বিক্রেতা শোষিত হচ্ছে মহাজনের কাছে, মহাজন শোষিত হচ্ছে শিল্পপতির কাছে, শিল্পপতি শোষিত হচ্ছে প্রশাসন যন্ত্রের কাছে, প্রশাসন যন্ত্রের সদস্যরা আবার শোষিত হচ্ছে ক্রেতা হিসাবে। সর্বত্রই শোষণের রাজত্ব।
ইসলামের মধ্যেই কেবল সেই সঞ্জিবনী শক্তি বিদ্যমান যা রুগ্ন ও মুমূর্ষ সমাজকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।
এর বিপরীত আমরা একটা সমাজের চিত্র আঁকতে পারি। সেখানে রাষ্ট্রপ্রধানকেও সামান্য একজন মানুষের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারেন না। সমাজের সকল সদস্যের জন্য চাপাতি রুটির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি বলে নিজে তা গ্রহণ করতে অস্বিকার করেছেন। বা সমাজের একজন সাধারণ মহিলাও আল্লাহর কাছে জবাবদেহি করার চেতনায় এতটুকু উদ্বুদ্ধ যে অপর কেহ দেখতে না পেলে কি হবে, আল্লাহ তো দেখছেন বলে দুধে পানি মিশানো থেকে বিরত থাকছেন। জানমালের নিরাপত্তা খাওয়া পড়া ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা যেখানে সকলের পাওনা ছিল। অথচ এরাই কিছুদিন পূর্বে ছিল প্রতারক ও দুর্নীতির শিকার। কেমন করে সম্ভব হয়েছিল তা। হ্যাঁ, সে ছিল একটি ব্যবস্থা যা গোটা সমাজ ও সমাজ সদস্যদের আমূল পাল্টে দিয়েছিল। সে ব্যবস্থাটির নাম হচ্ছে ইসলাম। আর এই ইসলামের মধ্যেই কেবল সেই সঞ্জিবনী শক্তি বিদ্যমান যা রুগ্ন ও মুমূর্ষ সমাজকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।
প্রত্যেক যুগের চন্দ্র ও সূর্য, মাটি ও বাতাস বার বার প্রত্যক্ষ করছে এই সত্যটিকে। সুতরাং আমাদেরকেও যদি কাংখিত স্বর্গে পৌঁছাতে হয়। ললিত স্বপ্ন ও বাস্তব করতে হয় তবে মানুষ গড়ার সেই নববী কাঠামোতেই ফিরে আসতে হবে আমাদের। দূসরা কোন পথ পৃথিবী দেখেনি, আর দেখবেওনা কখনো। সুতরাং এই বিজয় দিবসকে ফলপ্রসূ করতে হবে। আজ আমাদের অঙ্গীকার হোক সেই সিস্টেমে ফিরে যাওয়ার, সেই কাঠামোর রূপায়ণের। নইলে যে উপায় নেই।
সম্পাদকীয়, মাসিক পাথেয়, ডিসেম্বর ‘৮৮
১. ১৯৮৮ সাল হিসেবে