স্মরণে ফেদায়ে মিল্লাত

স্মরণে ফেদায়ে মিল্লাত

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

খুব স্মরণ হয় সেই মহান মনীষী, তামাম ইসলামী দুনিয়ার অবিসংবাদিত আধ্যাত্বিক রাহবার, তৎকালিন বিশ্বের ইসলামী রেঁনেসার অগ্রদূত, আওলাদে রাসূল, ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.) এর কথা।

২০০৬ সনের ৬ ফেব্রুয়ারী দিল্লির এ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে গিয়েছিলেন। রেখে গিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ ভক্তকুল। কেঁদে বুক ভাসিয়ে ছিল এই  জগতের লক্ষ-কোটি জনতা। সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী ছিলেন ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের অগ্রসেনানী, কুতুবুল আলম সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.) এর বড় সাহেবজাদা।

সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এদেশ কে স্বাধীন করেছিলেন। ‘যাদের ত্যাগে এদেশ পেয়েছি’, সেসব মনীষীদের অন্যতম এক পুরোধা সাইয়্যেদ মাদানী। তিনি ছিলেন ইলমে হাদীসের মহাসাগর। আবার আধ্যাত্মিকতার উচ্চমার্গের এক ব্যক্তিত্ব। যাকে বলা হয় কুতুবুল আলম তথা বিশ্বকুতুব। ফকীহুন নফস, কুতুবে রব্বানী রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহী (রহ.) এর আজাল্লে দরজার খলিফা। প্রত্যেক লাইনে হযরত মাদানীর খেদমতের অবদান ছিল।

সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানীর ইন্তেকালের পর তাঁর বড় সাহেবজাদা সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী নিজ পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেন। নিজ পিতার  মতো দেশ-বিদেশের আলেম এবং ইসলামী চিন্তাবিদগণের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। সারাটা বছর তিনি সফর করতেন। পৃথিবীর এমন কোনো মহাদেশ নেই যেখানে ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী সফর করেননি। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন তিনি।

আমাদের বাংলাদেশে বহুবার সফর করেছেন। প্রত্যেক বছরে কয়েকবার আসতেন তিনি। নিজের পরিবার-পরিজনদের সময় দেওয়া তাঁর হত না। সারাটা জীবন শুধু মুসলিম মিল্লাতের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি মুলতঃ বিশ্বের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতেন। দাওয়াত-তবলীগের কাজ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের দরজায় নক করতেন।

সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ছিলেন। মৃত্যু পর্যন্ত আকাবির আছলাফের সংগঠন জমিয়তের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। খেদমতে খালক তথা মানব সেবায় তাঁর অবদান বিশ্বব্যাপি। বিভিন্ন দেশে খৃষ্টান মিশনারীর মোকাবেলায় সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। হিন্দুস্থানে গেলে দেখা যায় মাদানী সাহেবেদের খেদমতের বহু নমুনা।

দেওবন্দ-দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশের বহু জায়গায় রয়েছে, মুসলিম ফান্ড (সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা) মাদানী আই হসপিটাল, মাদানী টেকনিক্যাল কলেজ, মাদানী হসপিটাল, এরকম বহু চিকিৎসা কেন্দ্র, শিক্ষালয়, এবং জনসেবা মুলক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশে খৃষ্টান মিশনারীর মোকাবেলায় ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। আমাদের বাংলাদেশে বহু ইসলামী স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাইয়্যেদ আসআদ  মাদানীর পরামর্শে। বর্তমানে বহু আলেম-উলামা স্কুল-কিন্টার গার্টেন স্কুল, কলেজ পরিচালনা করছেন, এর মূল পরামর্শ দাতাই ফেদায়ে মিল্লাত। যিনি জেনারেল শিক্ষিত মানুষের মাঝে দ্বীনি শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিনব ফূর্মুলা তৈরী করেন। তাঁরই পরামর্শে এখন শত শত স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠেছে। যেখানে জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারছে।

সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী এর সাথে আলেম উলামা সহ সর্বস্তরের সাধারণ জনতার সম্পর্ক ছিল। বিজ্ঞ রাজনৈতিক,ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সকল পর্যায়ের মানুষ তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখত। তিনি মানুষের রুহানী চিকিৎসা দিতেন। তাঁর চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ মানুষ সঠিক রাস্তায় পরিচালিত হয়েছেন। আজ সেই মহান মানুষটির কথা খুব স্মরণ হয়। আসুন, আমরা তাঁর জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতে সুউচ্চ মাকাম দান করেন। আমিন।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

আরও পড়ুন: মাহফিল আয়োজক কমিটির সাতকাহন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *