পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: আগামী বছরের পবিত্র হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টাদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জনস্বার্থে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ থেকে গত ২ নভেম্বর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৮ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ থেকে হজ প্যাকেজ (হিজরি-১৪৪৫/ খ্রিস্টাব্দ ২০২৪/০) গেজেট আকারে জারি করা করা হয়।
লিগ্যাল নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান বলেন, লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে প্রকাশিত হজ প্যাকেজ ও গেজেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে এর প্রতিকার চেয়ে রিট আবেদন করা হবে।
নোটিশের অনুলিপিটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরবের বাদশা ও আইসি ইরানের প্রধানমন্ত্রী, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো অপারেশন (ওআইসি), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, কাতারের সরকারপ্রধানসহ বিশ্বের মুসলিম সব দূতাবাসকে পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান বলেন, নোটিশে হজের মোট খরচ ৪ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সেখানে সরকার সাধারণ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হজের মত একটি পবিত্র ভ্রমণে অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ বাধা সৃষ্টির নামান্তর।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ (হিজরি-১৪৪৫) এর হজে যাত্রীপ্রতি খরচ অত্যন্ত অযৌক্তিক এবং যা মানুষের নাগালের বাইরে।
এতে বলা হয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা অনেক বেশি। এতে বোঝা যায় যে, সরকার হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়ির মালিকদের অনুকূলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, গেজেটে বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৪ টাকা। যা অত্যন্ত অতিরিক্ত। এটা হজযাত্রীদের জন্য প্রতারণা। আর জমজমের পানির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা খুবই আপত্তিকর। এই বরকতময় পানি বিক্রি করে কোনো সরকার আর্থিক সুবিধা নিতে পারে না।
সৌদির মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা এবং আবার ‘ডি’ ক্যাটাগরির অধীনে মিনায় পাঁচদিন থাকার জন্য সার্ভিস চার্জ বাংলাদেশি টাকায় ৬২ হাজার ২৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা অতিরিক্ত। হজযাত্রীদের ওপর এ ধরনের অর্থ আরোপ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ বা সৌদি সরকার মহান আল্লাহর মেহমানদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জনে খুবই আগ্রহী।
এছাড়া এ বছরের হজ প্যাকেজে বাংলাদেশি টাকায় ৯ হাজার টাকা ভিসা ফি, ইলেক্ট্রনিক সার্ভিস, গ্রাউন্ড সার্ভিস ফি, ক্যাম্প ফি হিসেবে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সৌদি সরকার এই ভিসা ফি আরোপ করতে পারে না। কারণ, সব হজযাত্রী সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য পবিত্র মক্কা ও মদিনায় যাচ্ছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, গেজেটে বিমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা, যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে বর্তমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ৭৬ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। প্রতি বছর সরকার হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে বিমানের টিকিট কিনতে বাধ্য করে, যেন ওই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোকে অবৈধ সুবিধা দেওয়া যায়। একই সঙ্গে হজযাত্রীদের স্বাধীনতা ও পছন্দ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও প্রতি হজ গাইডের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা অপ্রাসঙ্গিক। সরকার হজযাত্রীদের এই টাকা অযৌক্তিকভাবে পরিশোধ করতে বাধ্য করে।
নোটিশে বলা হয়েছে, বাড়ি ভাড়া, পরিবহন খরচ, স্বাস্থ্য বিমা, সার্ভিস চার্জ এবং জমজমের পানিতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা বেআইনি ও অনৈতিক। উভয় সরকারই হজযাত্রীদের ওপর এ ধরনের ভ্যাট আরোপ করতে পারে না। কারণ, হজযাত্রীরা ভ্রমণকারী নন, তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর মেহমান।
এতে নোটিশদাতার পক্ষে বলা হয়, আমরা হজযাত্রীদের সাধারণ এবং বিশেষ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। এটা স্পষ্ট যে এই হজ প্যাকেজ প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এবং হজযাত্রীদের সেবার জন্য তৈরি করা হয়নি। বরং এটি মুনাফা অর্জনের নগ্ন স্বার্থে হজযাত্রীদের শোষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার ইসলামী চেতনা ও নৈতিকতা বজায় না রেখে হজযাত্রীদের উসকানি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে বলেও নোটিশে দাবি করা হয়।
সূত্র: জাগো নিউজ