হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. নববী আনুগত্যের এক প্রবাদ পুরুষ

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. নববী আনুগত্যের এক প্রবাদ পুরুষ

  • মুহাম্মাদ আইয়ুব

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর সত্তা ছিল সকল সুন্দরের সমষ্টি। তিনি ছিলেন নবীতে বিলীন। কথায় ও কাজে নবীজীর জীবন্ত আদর্শ। বিগত চৌদ্দশো বছর ধরে দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের লক্ষ কোটি মসজিদের মিম্বার থেকে প্রত্যেক জুমুআর খুতবায় এ কথা সমস্বরে ঘোষিত হচ্ছে যে, আম্বিয়ায়ে কেরামের পর জগতের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.।

ইসলাম গ্রহণের আগেও তাঁর জীবন ছিল জাহেলি যুগের ভ্রান্ত রুসুম, অশ্লীলতা, মন্দ, পাপাচার, ঘৃণ্যতা থেকে নিষ্কলুষ পবিত্র। আর ইসলাম গ্রহণের পরে তো হয়েছিলেন পোড় খাওয়া নিখাঁদ স্বর্ণ।

হযরত আবু বকরের আকাশচুম্বী খ্যাতি ও সফলতার রহস্য হল নবীজীর প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা ও নিঃশর্ত আনুগত্য। তাঁর ধ্যানজ্ঞান আগ্রহ খেয়ালের পুরোটা জুড়েই ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি, নবীজীর অনুরাগ আর মুসলমানদের কল্যাণী জীবন। স্বাধীন পুরুষদের ভিতর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করেন।

কঠিন থেকে কঠিনতর পাহাড়সম বিপদসংকুল মূহুর্তেও নবীজীর সঙ্গ ছাড়েননি, ছিলেন নবীজীর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে। ইসলামের প্রথম খলিফা ছিলেন তিনি। হিজরতের সময় বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন নবীজীর সাথে গুহায় রাত্রি যাপন করে। তিনি ছিলেন উম্মুল মুমীনীন এবং প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. সম্মানিত পিতা। ছিলেন মৃদুভাষী ও প্রচণ্ড ধৈর্য্যশীল। নবীজীর (সা.) এর ইন্তেকালের পর মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর খেলাফতের সময় ধর্মত্যাগের ফেতনা ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসছিল মুসলিম জাহানের দিকে, কিন্তু তাঁর সীমাহীন দৃঢ়তা পাহাড়সম অবিচলতা ও ধৈর্য্যে কেটে যায় ধর্মদ্রোহী কালো মেঘের ঘনঘটা, খুলে যায় বিজয়ের কাঙ্ক্ষিত দরজা।

হযরত সিদ্দিকে আকবার( রাঃ) কুরাইশের শাখা গোত্র বনু তামিমের সম্মানিত সদস্য ছিলেন। তাঁর পেশা ছিল ব্যবসা। নবীজীর সঙ্গে হিজরত করেছিলেন। নিজের সমস্ত সহায় সম্পত্তি আল্লাহর পথে উজাড় করে দিয়েছিলেন। উইলিয়াম মুরের মতো কট্টর ওইয়ারিয়েন্টালিস্টও একথা বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, মুহাম্মাদের অনুসরণে আবু বকরই ছিল সবচেয়ে মজবুত, দৃঢ় আর অবিচল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তেইশ বছরের নবুওয়তি জিন্দেগীতে এমন কোন গভীর ঘটনা নেই যেখানে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়।

ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর প্রায় সবটা সময় নবীজীর সান্নিধ্যে কেটেছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের শেষ সময়কার দিনগুলোতে ইমামতির দায়িত্ব তাঁকেই দেয়া হয়েছিল।

তাই এই দুই মহান সত্তাকে একে অপরের থেকে আলাদা করে গবেষণা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি মুহাম্মদি চরিত্র ও ইসলামী শিক্ষার এক জীবন্ত ও বাস্তবিক প্রতিচ্ছবি ছিলেন।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর মুখ থেকে অথবা তাঁর আচরণে নবীজীর জন্য পীড়াদায়ক এমন কোন বিষয় প্রকাশ পায়নি। হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক সন্ধির সময় তিনিই এক মাত্র ব্যক্তি যিনি সহমত পোষণ করেছিলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আর হযরত ওমর রা. কে পরামর্শ দিয়েছিলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণে বিলীন হয়ে যাও।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর সাথে নবী পরিবারের ছিল গভীর হৃদ্যতা। ফাদাকের বাগান বিষয়ে সাধারণ রীতি অনুসারে মতানৈক্য হওয়া সত্ত্বেও হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. সায়্যিদাতুন নিসা ফাতেমাতুয যাহরা রা. এর সাথে বড় মধুর আচরণ করেছিলেন এবং তাঁর মন জয়ের চেষ্টা করেছেন আপ্রাণ।

ফাদাকের আয় নবী পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করেছেন। বহুবার এমন হয়েছে যে, তিনি ঘর থেকে বের হয়েছেন আর ফাতেমা রা. এর সন্তান হযরত হাসান রা. অথবা হযরত হুসাইন রাঃ কে খেলাধুলার অবস্থায় তাঁর সামনে পড়েছে তখন মুহাব্বতের আতিশয্যে তাদের স্বীয় কাঁধে উঠিয়েছেন।

ইবনে সা’দের রেওয়ায়েত মুতাবেক হযরত ফাতেমা রা. এর ইন্তেকালের সময় তাঁর কাছে মাফ চেয়ে তাঁর হৃদয়ের আয়না পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তারপর তাঁর জানাযার নামাজও তিনিই পড়িয়েছেন।

একবার ইরাক থেকে খুব সুন্দর ও মূল্যবান একটি পোষাক আসলে তিনি তা হযরত হাসান রা. কে উপঢৌকন হিসেবে দেন। উম্মাহাতুল মুমিনীনের সুখ শান্তি আরামের ও নবীজীর স্মৃতি ধরে রাখার ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখতেন এবং তাদের কোন কষ্ট হতে দিতেন না।

যে সকল মুসলিম গোলাম বাদীদের নিজ সম্পদে ক্রয় করে আল্লাহর জন্য স্বাধীন করেছিলেন পরবর্তীতে কখনো তাদের থেকে অনুগ্রহের চিন্তা করেননি।

হযরত সিদ্দীকে আকবর রা. এর জীবন ছিল বিলাসিতা ও লৌকিকতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। সবসময় মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং সাধারণ মুসলমানদের খাবার খেতেন যা বাইতুল মাল থেকে সামান্য পরিমাণ বরাদ্দ ছিল।

যুল কালা’ তিময়ারী ইয়ামানের প্রাচীন শাহী খান্দানের ছিলেন। আর তিনি ছিলেন মুসলমান, তবে সবসময় বাদশাহী শান শওকতে থাকতেন। নিজ এলাকার মুরতাদদের শায়েস্তা করে মদীনায় আসলেন। তাঁর শাহী চলাফেরা দেখার জন্য মদীনায় হৈচৈ পড়ে গেল। অথচ তিনি স্বয়ং খলীফার সাদাসিধে দুই পোশাকের জীবন যাপন দেখে খুব প্রভাবিত হলেন এবং বাকী জীবন এমন অনাড়ম্বরভাবে কাটিয়ে দিলেন।

সরলতা, বিনয়, নম্রতা, দীনতা, সৃষ্টিকূলের সেবা, ন্যায়পরায়নতা, ভারসাম্যতা, কল্যানকামীতা, হৃদয়ের কোমলতা যেন তার স্বভাবের ভাজে ভাজে অতি যত্নে রাখা হয়েছিল।

যুহদ ও তাকওয়ার ছিলেন জীবন্ত আদর্শ। যশ খ্যাতি থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতেন। সহজসরল জীবনযাপনের অবস্থা এই ছিল যে, নিজের কাজ সব সময় নিজ হাতে করতেন। যদি উটের পিঠে আরোহন করার পর তার রশি নিচে পড়ে যেত তাহলে নেমে রশি নিজ হাতে উঠাতেন। বলতেন এ কথা যে, আমার নেতা ও মনিব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে হুকুম দিয়েছেন মানুষের কাছে কিছু চাইবে না। নিজ হাতে ঘর ঝাড়ু দেয়া ও চুলায় আগুন জালাতে লজ্জাবোধ করতেন না।

খলীফা হওয়ার আগে এলাকার বিধবা, এতীম অসহায়দের খোঁজ খবর রাখতেন, তাদের প্রয়োজন পুরা করতেন, বকরী চরিয়ে দিতেন, দুধ দোহন করতেন নিজ হাতে।

যখন খলীফা হলেন তখন এক এতীম মেয়ে আফসোস করে বলল, হায়! এখন আমাদের বকরীর দুধ কে দোহন করে দিবে? এটা শুনে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বললেন, খোদার কসম! খেলাফত আমাকে সৃষ্টিকূলের খেদমত থেকে পৃথক করতে পারবে না।

তাঁর খেলাফতের সময় হযরত ওমর রা. এক অন্ধ বৃদ্ধার খোঁজ খবর রাখতেন। ঘটনাচক্রে কয়েকবারব এমন হল যে, অন্য এক লোক তার আগে এসে বৃদ্ধার সব কাজ ঠিকঠাক করে যায়! একদিন হযরত ওমর রা. গোপনে লক্ষ্য করতে লাগলেন কে আসে? কে আসে? তারপর যা দেখলেন তা ছিল তাঁর অনুমেয়। বিষ্ময়ে দেখলেন হযরত আবু বকর রা. আসলেন এবং বৃদ্ধার কাজকর্ম নিজ হাতে সেরে গেলেন।
হযরত ওমর রা. জোরে বলে উঠলেন, আমার ধারনাই সঠিক প্রমাণিত হল যে, এটা আপনিই হবেন। তিনি জনতার কল্যানকামিতা ও খেদমতে সর্বাগ্রে থাকতেন।

অসুস্থের সেবা, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো আর দুর্বলদের প্রয়োজনে কোন কাজ হাত থেকে ছুটে যেতে দিতেন না। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম গণকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কে কে আজ রোজা রেখেছ? কে আজ জানাযার সাথে হেঁটেছ? আজ কে মিসকিনকে অন্ন দিয়েছ? তোমাদের কে আজ অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ খবর নিয়েছ? এই সবগুলোর উত্তরে শুধু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বললেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি এমন করেছি, আমি এই কাজে শরীক থেকেছি ইত্যাদি।

তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে লোক এক দিনে এত নেক কাজ করেছে সে নিশ্চয় জান্নাতে যাবে। আরেকবার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম আবু বকর জান্নাতে যাবে। একবার সিদ্দিকে আকবর রা. এর আশেপাশে সাহাবাদের একটা দল ছিলেন। এক সাহাবী এসে বললেন, হে খলিফাতুর রাসূল! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বললেন, আমাকে কেন সালাম দিলে অন্যদের কেন দিলে না? বিনয় নম্রতায় তাঁর কোন সমকক্ষ ছিল না। লোকেরা আল্লাহর রাসূলের খলীফা হিসেবে সম্মান ইজ্জত করলে খুব কষ্ট পেতেন।

বলতেন, আমাকে লোকেরা অহেতুক অতিরিক্ত সম্মান করে। খলিফা হওয়ার পর যখন প্রথমবার হজ্ব করতে গেলেন তখন লোকজন ইজ্জতের খাতিরে উনার সাথে না চলে পিছনে পিছনে চলতে থাকল। বিষয়টি তাঁর পছন্দ হলো না তাই ঘোষণা দিয়ে বললেন, সবাই এদিক সেদিক বিক্ষিপ্ত হয়ে আপন আপন গতিতে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে চলাফেরা কর। নিজের দান সদকা সব সময় গোপন রাখার চেষ্টা করতেন কখনো কারো উপর অনুগ্রহের দাবী তুলতেন না এবং এনিয়ে কোনো ঢাকঢোলও পিটাতেন না। ইন্তেকালের সময়ও অসিয়ত করেছিলেন যে, তাঁর সম্পদের এক পঞ্চমাংশ যেন ফকির মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করা হয়।

যে সকল মুসলিম গোলাম বাদীদের নিজ সম্পদে ক্রয় করে আল্লাহর জন্য স্বাধীন করেছিলেন পরবর্তীতে কখনো তাদের থেকে অনুগ্রহের চিন্তা করেননি।

হযরত বেলাল হাবশী রা. কে তিনি আযাদ করেছিলেন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মসজিদে নববীর বিশেষ মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করেছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর তিনি আর কখনো আযান না দেয়ার শপথ করেছিলেন। একবার মসজিদে নববীতে তাঁর এর সাথে অন্যান্য সাহাবাদের (রা.) একটা মজলিস বসেছিল, হযরত বেলাল রা. উপস্থিত ছিলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসঙ্গ চলাকালীন আযানের সময় হয়ে গেল। সাহাবীদের বারংবার অনুরোধে তিনি হযরত বেলাল রা. কে আযান দিতে বললে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হে আবু বকর! আপনি আমাকে আজাদ করেছেন বলে আমাকে আযান দিতে বলছেন? নাকি খলিফা হওয়ার সুবাদে হুকুম করছেন?

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. লজ্জিত হয়ে উত্তর দিলেন যে, হে বেলাল! এটা আদেশ নয় অনুরোধ।

তখন হযরত বেলাল রা. আযান দিলেন না এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে হযরত সিদ্দীকে আকবর রা. খলিফা হওয়া সত্ত্বেও হযরত বেলাল রা. কে ভালো মন্দ কিছুই বললেন না। হযরত বেলাল রা. এর সাথে সম্পর্ক সেই আগেকার মতই মুহাব্বতেরই রইল।

ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর প্রায় সবটা সময় নবীজীর সান্নিধ্যে কেটেছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের শেষ সময়কার দিনগুলোতে ইমামতির দায়িত্ব তাঁকেই দেয়া হয়েছিল। তারপর তাঁকেই নবীজীর ইন্তেকালের পর ইসলামি সালতানাতের প্রথম খলিফা নির্বাচন করা হয়। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারী, ধৈর্য্যশীল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সবচেয়ে বেশি অনুগত ছিলেন।

ইসলামের নাজুক ও কঠিন সময়েও সকল সাহাবীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও তিনি হযরত উসামা ইবন যায়েদ (রা.) এর বাহিনীকেকে আরব সিমান্তে পাঠিয়েছিলেন, কেননা এই বাহিনীকে যে স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন! ইত্তেবায়ে রাসূলে পূর্ণতার কারণেই মুরতাদদের ফিতনা তিনি সমূলে উৎপাটন করতে পেরেছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুব অসুস্থ ছিলেন তখন নামাজের ইমামতির জন্য তাঁকে বলা হয়েছিল।

একবার নামাজের সময় তিনি মদিনার বাহিরে ছিলেন, হযরত বেলাল রা. তাঁকে না পেয়ে হযরত ওমর রা. কে ইমামতির জন্য বললেন, তখন হযরত ওমর রা. বললেন, আল্লাহ এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেন যে, নামাজের ইমামতি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. করেন। এটা হযরত সিদ্দীকে আকবর রা. এর উপর নবীজীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ ছিল যে, তিনিই মুসলমানদের প্রথম খলীফা হবেন। নবীজীর জীবদ্দশায় তিনিই বিভিন্ন লোককে কুরআন লিপিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত করেছিলেন।

তবে এটা গ্রন্থাকারে প্রস্তুত ছিল না। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর খেলাফতের সময় ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ সাহাবী শহীদ হয়ে যাওয়ার কারণে হযরত ওমর রা. এর পরামর্শে তিনি হযরত যায়েদ রা. কে কুরআন শরীফ গ্রন্থাকারে একত্রিত করার দায়িত্ব দিলেন। হযরত যায়েদ রা. নবীজীর সময় থেকে এ যাবত কালের সকল লিপিবদ্ধ কাগজ, চামড়া, পাথর একত্রিত করে গ্রন্থের রূপ দেন।

হযরত উসমান রা. তাঁর খেলাফতের সময় কুরআন শরীফ ঐ সহিফা থেকে কপি করে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে দেন। তিনি ৬৩৪ খৃষ্টাব্দের ২৩ আগষ্ট মদিনা মুনাওয়ারায় ইন্তেকাল করেন।

ইন্তেকালের আগে সকল মুসলমানদের হযরত ওমর রা. কে পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করতে উৎসাহিত করে যান। লোকেরা তাঁর কথামতো হযরত ওমর রা. কে খলিফা নির্বাচন করেন। ওফাতের সময় তিনি বেতন হিসেবে বাইতুল মাল থেকে যা কিছু গ্রহণ করেছিলেন ওয়ারিশদের মাধ্যমে বাইতুল মালে ফিরিয়ে দেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬১ বছর।

হযরত সিদ্দীকে আকবর রা. কে মৃত্যুর পর নবীজীর রওজার পাশে দাফন করা হয়। যা ছিল বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়।

লেখক: শিক্ষক, অনুবাদক ও মাদরাসা পরিচালক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *