পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, হামাসের কর্মকাণ্ড ও নীতি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। বার্তা সংস্থা ওয়াফার বরাতে বিবিসি বলছে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে ফোনালাপে এই মন্তব্য করেছেন আব্বাস।
নিউজ আউটলেট অনুসারে, আব্বাস উভয় পক্ষের বেসামরিক লোকদের হত্যার প্রত্যাখ্যান নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া উভয় পক্ষের বেসামরিক নাগরিক ও বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মাহমুদ আব্বাস ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর থেকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সভাপতি এবং ২০০৫ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রপতি। তিনি ফাতাহ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, যার সঙ্গে হামাসের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ক্ষমতাধর ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ভোরে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী বাহিনী হামাস। আক্রমণের পরপরই ফিলিস্তিনের ভূরাজনীতিতে দলটির শক্ত অবস্থান প্রতীয়মাণ হয়ে উঠেছে। তবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের একচ্ছত্র রাজত্ব থাকলেও, পুরো ফিলিস্তিনের রাজনীতি আছে জটিল অবস্থায়। সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ফাতাহ। তার পরেই আসে হামাসের নাম। হামাস ইসলামপন্থি আর ফাতাহ ধর্মনিরপেক্ষ।
হামাস অর্থ ‘উদ্যম’। এটি হারাকাত আল-মুকাওয়ামাহ আল-ইসলামিয়া বা ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইসরায়েলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ শুরুর পরপরই ১৯৮৭ সালে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় দলটি। ইমাম শেখ আহমেদ ইয়াসিন ও সহযোগী আবদুল আজিজ আল-রান্টিসি দলটি গঠন করেন। ২০১৭ সালে হামাস নতুন একটি ধারা প্রকাশ করে, যা ফাতাহর সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসরায়েলের রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানিয়ে বলা হয়, ‘হামাস বিশ্বাস করে যে ‘ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ ‘অবৈধ’।
ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পাঠানো নিয়ে বাইডেন কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছেন, আমি তাকে আশ্বস্ত করেছি যে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে এবং এই সংঘাত যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ওই অঞ্চলের অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।
বাইডেন আরও বলেন, তিনি ইসরায়েলে হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং হামাস যে ফিলিস্তিনের জনগণের ‘মর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে না’, সে বিষয়টি বলেছেন তিনি।
ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩০ মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানায় বিবিসি।
নিখোঁজ নাগরিকদের বিষয়ে রবিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে জারি করা এক বিবৃতিতে এক মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন সরকার তাদের অবস্থান নির্ধারণের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে এবং জিম্মি সংকটের প্রতিটি বিষয় নিয়ে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে কাজ করছে, যার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং বিশেষজ্ঞ মোতায়েন রয়েছে। জিম্মি নাগরিকদের পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার বিষয়ে ইসরায়েলি সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
ইরান ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে যে তারা যদি গাজায় সংঘাত বাড়ায়, তবে ইরানের সামরিক বাহিনীর জড়িত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান আল জাজিরাকে বলেছেন, যদি তারা গাজায় তাদের নৃশংসতা বন্ধ না করে, ইরান কেবল পর্যবেক্ষক হিসেবে বসে বসে দেখতে পারবে না। যদি যুদ্ধের পরিধি বিস্তৃত হয়, যুক্তরাষ্ট্রেরও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
কাতারের দোহায় হামাসের নেতার সঙ্গে আমিরাবদুল্লাহিয়ানের সাক্ষাতের এক দিন পর এই খবর আসে।
দুপক্ষের প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অতল গহ্বরের দ্বারপ্রান্তে। হামাসকে কোনও শর্ত ছাড়াই জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য তিনি দুটি আবেদন করেছেন। এমন খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার সংস্থার এই প্রধান বলেন, গাজায় পানি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ শেষের দিকে। জাতিসংঘের কাছে খাদ্য, পানি, খাদ্যবহির্ভূত জিনিসপত্র, চিকিৎসা সরবরাহ ও জ্বালানির মজুত রয়েছে। এই পণ্যগুলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঠানো যেতে পারে।
আন্তনিও গুতেরেস আরও বলেন, স্থল পর্যায়ে থাকা আমাদের নিঃস্বার্থ কর্মীদের এবং এনজিও অংশীদারদের এসব পণ্য নিরাপদে গাজায় সরবরাহ করতে হবে এবং কোনও বাধা ছাড়াই।
তিনি বলেন, এই দুটি উদ্দেশ্যের তাদের নিজেদের মধ্যে জরুরি। তাই এ নিয়ে দুপক্ষের দর-কষাকষি করা উচিত নয়।
এর আগে বিবিসি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। অর্থাৎ কোনও খাবার, জ্বালানি বা কোনও পণ্য ঢুকতে পারবে না অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে।
তিনি আরও জানান, অবরুদ্ধ গাজায় বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বন্ধ করে দেবে ইসরায়েল। পাশাপাশি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না খাদ্য ও জ্বালানিসহ যেকোনও পণ্য।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৩০০ জনের বেশি। আহত হয়েছেন তিন হাজার ৪০০ জন। অপরদিকে ইসরায়েলের বোমা হামলায় দুই হাজার ৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।