হিরো আলম আর মামুনুল হকে সরগরম ছিল আদালতপাড়া

হিরো আলম আর মামুনুল হকে সরগরম ছিল আদালতপাড়া

হিরো আলম আর মামুনুল হকে সরগরম ছিল আদালতপাড়া

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সরগরম ছিলো আদালত মাওলানা মামুনুল হক ও হিরো আলমের মামলা নিয়ে। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী ২০২০ সাল এখন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। করোনা মহামারির মধ্যেও খুন, দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা ঘটনার মামলায় ব্যস্ত ছিল ঢাকার আদালত পাড়া। বছরের শেষ দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিচারাঙ্গন নতুন করে সরগরম হয়। ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামের নেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, মুফতি ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

অন্যদিকে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যে সহযোগিতার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দেন আদালত। এছাড়া মারধরের অভিযোগে হিরো আলমের বিরুদ্ধে এবং চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।

বিদায়ী বছরে ঢাকার আদালত পাড়ায় যেসব মামলা আলোচনার কেন্দ্রে ছিল, তা নিয়ে তিন পর্বের সালতামামির আজ পড়ুন প্রথম পর্ব।

মামুনুল-বাবুনগরী-ফয়জুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা : ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে হেফাজত নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, জুনায়েদ বাবুনগরী ও সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে গত ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে এ মামলাটি করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা ও সুযোগ-সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশ্যে বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধর্মের লেবাসে সাধারণ মুসলমানদের উসকানি দিয়ে, ক্ষেপিয়া তুলে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘৃণা এবং শত্রুর ভাব সৃষ্টি করেছেন। ফলে আসামিদের নির্দেশে মধুদার ভাস্কর্য ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মিত ভাস্কর্যসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে। এ প্রচারণা ও উসকানি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

মামুনুল হকদের সহযোগিতা: খালেদা-তারেকের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ : ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যে সহযোগিতা করার অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মানহানির মামলা করা হয়। মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। মামলা গ্রহণ করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় পরদিন ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার মামলাটি খারিজ করে দেন ।

অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা : গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নাসরিন আক্তার নামে এক প্রসূতির অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে গত গত ২২ ডিসেম্বর মামলা করা হয় । এতে আসামি হিসেবে হাসপাতালটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আছে হাসপাতালটিরও নাম।

ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে মামলা করেন প্রসূতির স্বামী এস এ আলম সবুজ। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বাদী এস এ আলম সবুজ উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার গত ২৪ সেপ্টেম্বর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি হন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি করলেও সেখানে চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে ঘটনাটি আপস করার কথা বলা হয়। কিন্তু পরে তারা আর পাত্তা দেননি।

হিরো আলমের বিরুদ্ধে জুনিয়র মিশার মামলা : শুটিংয়ের টাকা না দিয়ে মারধর করার অভিযোগে আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের বিরুদ্ধে ২৩ জুলাই মামলা করেন জুনিয়র আর্টিস্ট নয়ন মণ্ডল ওরফে জুনিয়র মিশা। ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুর রহমানের আদালতে এ মামলা করা হয়। পরে আদালত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার পর জুনিয়র মিশা বলেছিলেন, আমি হিরো আলমের সঙ্গে ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবিতে সেকেন্ড ভিলেন (দ্বিতীয় খলনায়ক) হিসেবে অভিনয়ের জন্য ১৫ হাজার টাকা চুক্তি করি। চুক্তি অনুযায়ী গাজীপুরের মনপুরা শুটিং স্পটে অভিনয় করতে যাই। যেখানে কিছু দিন অভিনয় করি। এর মধ্যে ঢাকায় আসার সময় তিনি আমার হাতে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেন, টাকা পরে দেব। আমি বাসায় এসে কিছুদিন পর তার মোবাইলে ফোন দেই। তিনি ফোনে আমাকে একদিন বলেন, কিসের টাকা পাবি তুই। তুই কোনো টাকা পাবি না। এরপর তিনি আমার ফোন ধরতেন না। পরে গাজীপুরে ছবির শুটিংস্থলে আমি যাই। টাকা চাইলে হিরো আলম আমাকে শুটিংয়ের দা দিয়ে আঘাত করেন। কিল-ঘুষি মারেন। আমি সেখান থেকে চলে আসি। এরপর ১৯ জুন এফডিসিতে মানববন্ধনে অংশ নিতে যাই। হিরো আলম আমাকে সেখানে মারধর করেন। হিরো আলমের লোকজনের ভয়ে আমি জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *