হেফাজত ক্লাইমেক্স : শক্তির যাঁতাকলে খণ্ডিত ইনসাফ

হেফাজত ক্লাইমেক্স : শক্তির যাঁতাকলে খণ্ডিত ইনসাফ

হেফাজত ক্লাইমেক্স

শক্তির যাঁতাকলে খণ্ডিত ইনসাফ

।। রশীদ জামীল ।।

মুফতি ফয়জুল্লাহ’র অভিযোগগুলোকে হয়তো গায়ের জোরে দমিয়ে দেয়া যাবে, তাঁর দাবিগুলোকে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবর্তনে উড়িয়ে দেয়া যাবে, কিন্তু কথা কি শেষ হবে? অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে প্রশ্নপত্র পুড়িয়ে ফেললেই কি প্রশ্ন শেষ হয়ে যায়? অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে?

মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাঈনউদ্দিন রূহি, আনাস মাদানিকে নিয়ে কথা আছে। কথা তো আরো অনেককে নিয়েই আছে। কথা সবার জন্য সমান হবে না কেন? লোম বাছতে শুরু করলে কম্বল কতখানি অক্ষত থাকবে? আর বাছতে চাইলে তো ভালোভাবে বাছা দরকার।

২.

প্রশ্ন উঠলে জবাব দিতে হয়। জবাব না দিয়ে গালি দেওয়া মানে প্রশ্নের সামনে নীতিগত আত্মসমর্পন। মুফতি ফয়জুল্লাহ রীতিমতো সাংবাদিক সম্মিলন করে বেশ কিছু স্পর্শকাতর অভিযোগ করেছেন। সবগুলো অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত না-ও হতে পারে। কিছু অভিযোগ অমূলকও হয়ে থাকতে পারে। সবচে স্পর্শকাতর অভিযোগ ছিল আমিরে হেফাজতকে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। তিনি বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। গুরুতর অভিযোগ। পাশ কাটানোর সুযোগ নেই।

যে অভিযোগটি অবশ্যই হেফাজতের আগামীর জন্য সুখকর হবে না, সেটি হলো, আজকের কাউন্সিলে মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং এবং সংশ্লিষ্টদের ইনভাইট না করা। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা দায়িত্বশীলদের অনেককে মাইনাস করে পছন্দের লোকজন নিয়ে কাউন্সিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে’। স্পষ্টত: বলয়-কেন্দ্রীক বল প্রয়োগের আঙুল তুলেছেন।

মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগ না করলে অথবা তাঁকে বরখাস্ত করা না হয়ে থাকলে অবশ্যই তিনি কাউন্সিলের দাওয়াত পাওয়ার অধিকার রাখেন। একই কথা অন্যদের বেলায়ও প্রযোজ্য। সত্য সবার জন্য উচ্চারিত হওয়া দরকার। এটাই ইনসাফের দাবি।

মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাঈনউদ্দিন রূহি, আবুল হাসনাত আমিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন, অথবা তাদেরকে সাংগঠনিক নিয়মে সংগঠন থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে- মর্মে কোনো সংবাদ আমরা পাইনি। সুতরাং, তাদেরকে মাইনাস করে কাউন্সিল করার অর্থ বিভাজনকে সাংগঠনিক রূপ দেয়া। এই অবস্থায় হেফাজতের আজকের কাউন্সিলকে কোনোভাবেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ভাবা যাবে না। সঙ্গত কারণে একদম স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক বলারও সুযোগ কম।

৩.

কথাগুলো আজ অনেকেরই ভালো লাগবে না। কিচ্ছু করার নেই। সদ্যন্ত ফ্রান্স দূতাবাসমূখী আন্দোলনে আমরা হেফাজতের পরীক্ষিত নেতা মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাসকে দেখিনি। অথচ, হেফাজতের জন্য সবচে দীর্ঘ সময় জেল খেটেছেন তিনি। আজকের কাউন্সিলেও তিনি উপেক্ষিত। তাঁর দৃশ্যমান অপরাধ, ৫ই মে ২০১৩ ট্র্যাজেডির জন্য তিনি হেফাজত নেতৃত্বের অদূরদর্শীতাকে দায়ী করে পত্র-পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। অদৃশ্য এবং মূল কারণ রাজনীতির রাজকাহনে ঘেরা। বুঝিয়ে বলার দরকার আছে?

‘দূতাবাস ঘেরাও’ হেফাজতের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল না। ঢাকা মহানগরির উদ্যোগ ছিল। আমাদের জানায় গলদ না থাকলে অদ্যাবধি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরির মহাসচিবের নাম আবুল হাসানাত আমিনি। ঘেরাও কর্মসুচির কোথাও তাকে চোখে পড়েনি!

এতো এতো ক্লিয়ার কাহিনি করার পর বিবিসি বাংলা বিভাজনের সংবাদ প্রচার করলে আমরা তখন প্রতিবাদ করি কোন যুক্তিতে?

৪.

নেতৃত্বের কোন্দল আগেই ছিল। একজন আহমদ শফির কারণে এতদিন ধামার নিচে চাপা পড়ে ছিল বিষয়টি। এখন সেটা নোংরাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। শুরু হয়েছে শক্তির মহড়া। চলছে প্লাস মাইনাসের খেলা। ভুলে যাওয়া হচ্ছে বীজ গণিতের সূত্র: প্লাসে মাইনাসে মাইনাসই হয়। আপাতত এরচে বেশি বলতে চাই না। হজমে সমস্যা হবে।

৫.

সুতরাং,

ত্রিধাবিভক্ত নেতৃত্বের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আজকের কাউন্সিল আগামীতে হেফাজতের জন্য ক্লাইমেক্স হিশেবে বিবেচিত হয় কি না- সেটাই হবে দেখবার বিষয়।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট

মতামত একান্তই লেখকের। এতে সম্পাদকের কোনো দায় নেই

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *