পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে ১৩ রোহিঙ্গা মুসলমানকে মিয়ানমারের পরিবর্তে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। মঙ্গলবার সৌদি এয়ার (এসভি ৮০২) বিমান যোগে সব মিলিয়ে ১৩ রোহিঙ্গা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। বর্তমানে তারা ঢাকা ইমিগ্রেশন হেফাজতে আছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, এই রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে অনুপ্রবেশকারী বা অবৈধভাবে অবস্থানকারী। তাদেরকে মিয়ানমারের পরিবর্তে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রোববার ‘মিডল ইস্ট আই’ নামে একটি ওয়েবসাইটে পাঠানো ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, জেদ্দার সুমাইসি নির্বাসন কেন্দ্রের বাইরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ওই রোহিঙ্গাদের। এদের মধ্যে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যেতে অস্বীকৃতি জানান তাদের হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়।
আল জাজিরা বলছে, এদের বেশিরভাগই হজ পালনের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিল। কিন্তু পরে দেশে ফিরে না গিয়ে তারা সৌদিতে অবৈধভাবে থেকে যায় এবং সেখানে কাজ করতে শুরু করে।
একজন রোহিঙ্গা ব্যক্তি এই ভিডিও ধারণ করেছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। ওই ব্যক্তি বলেন, ছয় বছর ধরে সৌদি আরবে কারাবন্দি ছিলেন এমন মানুষদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে আছি। এখন তারা আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমার জন্য দোয়া করুন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রোহিঙ্গা নাগরিক মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘তারা আমাদের কারাকক্ষে এলো রাত ১২টার দিকে। এসেই বলল ব্যাগ গুছিয়ে বাংলাদেশের জন্য তৈরি হতে। এখন আমাকে হাতকড়া পরানো হয়েছে এবং এমন একটা দেশে পাঠানো হচ্ছে যেটা আমার দেশ না। আমি রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি নই।’
নাই সান লুইন নামে একজন রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী জার্মানির ফ্রাংকফুট থেকে আল জাজিরাকে জানান, এসব রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই ২০১২ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সে সময় রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হলে একটু ভালো জীবনের আশায় তারা মূলত দেশত্যাগ করেছিলেন। সেসময় থেকেই তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের অর্থ সহায়তাও পাঠাতেন।
মানবাধিকার কর্মী নে সান লুইন আল জাজিরাকে আরো বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর এসব রোহিঙ্গার বেশিরভাগই ২০১২ সালে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছিল। তারা ভারতীয়, পাকিস্তানী, বাংলাদেশি কিংবা নেপালি পরিচয়ে সৌদিতে ছিল। আর এ কারণেই তাদের জন্য কোনো আইনি সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে সৌদি কর্তৃপক্ষ ওই চার দেশের দূতাবাসের সঙ্গেই কথা বলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া আর কেউ তাদের গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। ফলে তাদের বাংলাদেশেই ফেরত পাঠালো সৌদি আরব।