পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশে বর্তমানে চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। এই ঢেউয়ে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার পর সম্মুখ সারির জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা আবারও ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, পুলিশ সদস্য, পাসপোর্টসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। শুধু চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫০০ জন।
অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে ক্রমাগত বিধি-নিষেধের নির্দেশনা জারি করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। অভিযোগ পাওয়া গেছে, দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পরও অনেকে সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে। সচিবালয়ের প্রবেশপথেও প্রতিদিন লেগে থাকে ভিড়। জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হওয়ায় বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ তাদের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর করোনায় আক্রান্ত কর্মীদের তালিকা করেছে। তাদের তালিকা অনুযায়ী, গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে কর্মরত ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ৪৬২ জন, পুলিশের ৮২৪ জন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ২০৬ জন, কারাগারে ৬৮৭ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ওই বিভাগের অধীন যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোয় কতজন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কতজন সুস্থ হয়েছেন এবং কতজন বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার একটা তালিকা করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, সেই তালিকাও করা হয়েছে।
সচিবালয়ের চিত্র : গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা গেছে, সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশপথের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আসাদুল ইসলাম সচিবালয়ে প্রবেশ করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। তিনি জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তাঁর জরুরি কাজ রয়েছে। করোনার কারণে ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁকে। সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে এসে নিয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, এর আগে টাকা দিয়ে কয়েকবার প্রবেশ করেছেন তিনি। তবে কাকে কত টাকা দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন, সেই তথ্য জানাননি তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য বর্তমানে কোনো পাস দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এর পরও অনেককে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। কিভাবে কী হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। করোনার এ অবস্থায় এটা তো আমাদের জন্য ঝুঁকি। ’
ওই দিন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের মতো কড়াকড়ি নেই। এবার করোনায় সুস্থতার হার বেশি বলে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও খুব একটা ভয়ে নেই। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যে পরিমাণ কাজ তাতে রোস্টার করা হলেও সেটা মানা সম্ভব হচ্ছে না। ’
চিকিৎসক ও নার্স : ডক্টর ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. নিরূপম দাস গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট হাজার ২৫৩ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের তাণ্ডব শুরু হওয়ার পর গত ১৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১০০ চিকিৎসক। আর দেশজুড়ে ৪০০ জন নার্স ওমিক্রন আসার পর আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ৩০০ জন। এ পর্যন্ত ২০৪ জন চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন।