পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সূর্যটা চোখের আড়াল হতেই নেমে আসে আঁধারের কায়া। তমসাচ্ছন্ন রাত্রিকে তখন ৩৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল উপর থেকে রূপালী আলোর বন্যায় ভাসিয়ে দেয় রাতের সম্রাজ্ঞী চাঁদ। নদীর জলে, গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায় খেলা করে চাঁদের রূপালী হাসি। সেই হাসি মন কাড়ে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষেরা অপেক্ষায় থাকেন পূর্ণ চাঁদের পূর্ণিমার। গায়ে চাঁদের আলো মাখতে, একান্তভাবে রাতটাকে উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়েন দূর-দূরান্তে।
কেমন হবে বলুন তো যদি সেই চাঁদ চলে আসে একদম হাতের নাগালে! যেন আপনি চাইলেই ধরতে পারেন, ছুঁতে পারেন হাতের স্পর্শে! ঠিক এমনটা না হলেও মাঝে-সাঁঝে কিন্তু চাঁদ নেমে আসে আমার আপনার অনেকটা কাছে। বলতে গেলে হাতের কাছেই। বিশাল চাঁদটাকে আপনার তখন মনে হবে যেন ঝুলে আছে গাছের ডালে কিংবা বাড়ির ছাদেই। চাঁদের এই নিজের কক্ষ ছেড়ে নিচে আসাকে বলা হয় সুপার মুন। সুপারমুনের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে— ‘পেরিগি মুন’। পেরিগি অর্থ হচ্ছে ‘পৃথিবীর নিকটতম’। চাঁদ যখন পূর্ণ পূর্ণিমায় থাকে এবং বার্ষিক প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে তখন একে সুপারমুন বলা হয়। পৃথিবীর কাছাকাছি আসায় এই চাঁদকে স্বাভাবিক পূর্ণিমার চাঁদের তুলনায় বড় ও বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
রবিবার (০৯ ফেব্রুয়ারির) আকাশে তিন বছর পর রূপালী আলোর বন্যায় পৃথিবীকে হাসাতে ও ভাসাতে আবারও নেমে আসবে চাঁদ আমার আপনার একদম কাছে। নাসার তথ্যমতে, আজ (রবিবার- ০৯ ফেব্রুয়ারি) রাতের আকাশে দেখা যেতে পারে সুপারমুন।
ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃথিবীতে পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হয়েছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের। তবে আদ্যিকাল থেকে সারা পৃথিবীর কবি-শিল্পীদের চোখে চাঁদ আর পৃথিবীর সম্পর্ক রোমান্সে রঙিন। জ্যোৎস্নার আঙুল দিয়ে ছোঁয়াছুঁয়ি চললেও সেই রোমান্স চিরবিরহের বলেই চিরজীবী। চিরবিরহ, কেননা কখনওই তাদের মিলন হয় না, হওয়ারও নয়। তাই উভয়ের কাছাকাছি আসাটুকুই প্রাপ্তি। দীর্ঘ ব্যবধানে একটু বেশি কাছে আসাটা বাড়তি প্রাপ্তি পৃথিবীর। উভয়ের মধ্যে দূরত্ব কমে কী ভাবে? কে-ই বা কার কাছে আসে?
বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার (অনেকটা ডিমের মতো) কক্ষপথে পাক খায় চাঁদ। পৃথিবীকে এক বার পাক খেতে তার সময় লাগে সাড়ে সাতাশ দিন। এই সাড়ে সাতাশ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর কাছে চলে আসে এবং এক বার পৃথিবীর থেকে দূরে চলে যায়। দূরত্বটা যখন সব থেকে কমে যায়, সেটাকে বলে ‘অনুসূর’ অবস্থান এবং তারা যখন একে অপরের থেকে সর্বাধিক দূরত্বে থাকে, সেই অবস্থানের নাম ‘অপসূর’। চাঁদই কাছে আসে পৃথিবীর। কিন্তু সেই কাছে আসাটা যে কখনওই মিলনের পূর্ণতা পায় না, তার কারণ উভয়ের কক্ষপথ পৃথক।
তবে চাঁদ নিয়ে এতো মাতামাতির সাথে সাথে আশংকাও কিছু কম নয়। বিরল এসব সুপারমুনের কারণে পৃথিবীতে উল্কাপাতসহ নেমে আসে নান ধরণের বিপর্যয়। এমনকি বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবী ধ্বংসও হবে এই সুপারমুনের কারণেই। সুখের বিষয় হল, অধিকাংশ বিজ্ঞানী এ আশংকাকে নাকচ করে দিয়েছেন। তাই আপনি নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারেন আজকের রাতটাকে। আজকের সুপারমুনকে।
উল্লেখ্য, বাংলায় চাঁদ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ চন্দ্র থেকে এসেছে। এছাড়াও শশধর, শশী প্রভৃতিও চাঁদের সমার্থক শব্দ। চন্দ্র পৃষ্ঠের ভূমিরূপকে পৃথিবী থেকে খালি চোখে খরগোশ বা শশকের ন্যায় লাগে। তাই শশক ধারক রূপে কল্পনা করে শশধর নামটি দেওয়া হয়েছে।
/এএ