৬১ নেতাকে আল্টিমেটাম দিল বিএনপি

৬১ নেতাকে আল্টিমেটাম দিল বিএনপি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও কঠোর হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় প্রার্থীদের বহিষ্কারের দিকে এগিয়ে বিএনপি। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ৮০ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি।

এবার দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী হওয়ায় আরও ৬১ জনের তালিকা করেছে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএনপি।

সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বৃহস্পতিবার (২ মে) তাদের কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পত্রপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

অবশ্য প্রার্থী হওয়ার পর চেয়ারম্যান পদে ৮জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে শোকজের জবাব যাই হোক না কেনো, এসব নেতাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় দলটির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী প্রথম ধাপের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যদি ভোট সুষ্ঠু হয় এবং বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা বিজয়ী হন তাহলে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও বিএনপি থেকে প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে বিএনপিতেই এমন আলোচনা চলছে। তবে তৃণমূলের বাস্তবতা আসলে কতটা বিবেচনায় নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড, সেই আলোচনাও রয়েছে দলটির ভেতরে। সেইসঙ্গে গণহারে দল থেকে এই বহিষ্কার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে; এতে দল আরও দুর্বল হচ্ছে কি না, এসব প্রশ্নও রয়েছে বিএনপিতে। তবে কঠোর অবস্থানেই থাকছেন দলটির নেতৃত্ব।

জানা গেছে, এই মুহূর্তে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে জোর আলোচনা, প্রথম ধাপের ফলাফল যদি বিএনপির চিন্তা-ভাবনার হিতে বিপরীত হয়। তখন বহিষ্কার বার্তাও পদধারী ও সাবেক নেতাকর্মীদের ভোটে অংশ নেওয়া থেকে কতটা বিরত রাখতে পারবে? একদিকে ভোটে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীর তালিকা বড় হবে, অন্যদিকে বহিষ্কার সংখ্যাও বাড়বে। তবে হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত কঠোর অবস্থানেই থাকছেন বলেও জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই নেতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবে তাদের দলে ফেরানো হবে। তিনি বলেন, তৃতীয় বা চতুর্থ ধাপের প্রার্থী সম্পর্কে আগাম কোনোকিছু বলা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যমতে, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান মনে ২০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬জনসহ মোট ৬১ জন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এসব নেতাদেরকে বহিষ্কারের চিন্তা হচ্ছে বিএনপিতে। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী এবার কমবেশি ৪৮০ উপজেলা পরিষদে চার ধাপে ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে সব ধাপের নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও বিএনপি নেতাদের অনেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী। ফলে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের অবস্থানে থাকা দলটির বহিষ্কারের সংখ্যা দীর্ঘ হবে। নেতাদের ধারণা, উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপ পর্যন্ত বহিষ্কারের সংখ্যা আড়াই-তিনশত হতে পারে। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে কিছু নেতা বহিষ্কার হলেও তাতে তাদের দলের কোনো ক্ষতি হবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য দলের কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করার পরও যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, তাদের বিরুদ্ধে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের অধীনে যারা নির্বাচনে গেছেন, তারা দলের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা সংখ্যা খুবই সামান্য। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির তৃণমূলের হাজার হাজার নেতাকর্মী সুসংগঠিত রয়েছেন। ফলে তারাও ভোট বর্জনের পক্ষে।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের দেওয়া বিএনপির শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে- ‘গত ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপির নেতা হিসেবে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী ২১ মে ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ২য় দফায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আপনার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। আপনার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেনো দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্রপ্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবরে নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না এটা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। এরপরও যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন আমরা তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি একাধিকবার। দুই একজন সাড়া দিলেও অধিকাংশ নেতা নির্বাচনে আছেন। ফলে ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে।

এদিকে শোকজের চিঠি পেয়েও মাঠের প্রচারণা চালাচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, দল বহিষ্কার করবে, এটা জেনেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। তারপরও দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা মেনে নেব। হাইকমান্ডের উচিত ছিল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা নির্বাচন করতে চায় তাদের মতামত নেওয়া। দলীয় প্রার্থী না থাকায় মাঠে থাকলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হতো। হার-জিত যাই হোক পরের দিন থেকেই আন্দোলন-সংগ্রাম জোরদার হতো। দীর্ঘদিন দল করে বহিষ্কারের পর আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, ঠিক তেমনি ভোট না করায় বিএনপির চরম ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের দালালি নয়, ভোট করলে এক দফার আন্দোলন আরও নতুন গতি পেত। তার মতো আরও কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী একই মন্তব্য করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *