৭ দাবি, ৩ কর্মসূচি ঘোষণা হেফাজতে ইসলামের

৭ দাবি, ৩ কর্মসূচি ঘোষণা হেফাজতে ইসলামের

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: আজ বুধবার ঢাকায় ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ইঞ্জিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের অনুষ্ঠানে তাদের দাবীর ঘোষণাপত্র তৈরী করেছেন।

ঘোষণাপত্রে ৭টি দাবী এবং হেফাজতে ইসলামের ৩ পর্যায়ে কর্মসূচির কথা সেখা উল্লেখ করেছেন।

আমিরের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী, কেন্দ্রীয় নেতা মাহফুজুল হক, সালাহউদ্দিন (পীর সাহেব নানুপুর) উবায়দুল্লাহ ফারুক, ইসমাইল নূরপুরী, আবদুর রব ইউসুফী, মুফতি মুবারক উল্লাহ, মিজানুর রহমান সাঈদ, মুসতাক আহমদ, নাজমুল হক হাক্কানি, জুনায়েদ আল হাবিব, খুরশিদ আলম কাসেমি, মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, সাব্বির আহমদ রশিদ, মঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দী, মাওলানা আনোয়ারুল করিম, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, আব্দুল কাইয়ুম সুবহানি, আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), আব্দুল কাদের, মুফতি বশিরুল্লাহ, জহুরুল ইসলাম, আহমদ আলী কাসেমী, নাজমুল হোসাইন কাসেমী, জালাল উদ্দিন আহমদ, আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, নায়েবে আমির মাওলানা আইনুল বাবুনগরী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা এয়াকুব ওসমান, মীর ইদ্রিস প্রমুখ।

খলিল আহমদ কাসেমী বলেন, আমাদের দাবিগুলো সরকার যত দ্রুত মেনে নিবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল।

জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে প্রমাণতি হয়েছে স্বাধীনতার পর শাপলা চত্বরে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড আপনারা চালিয়েছেন। এর বিচার দেশের মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কী অপরাধ? রমজান মাসে ইফতারের আগে এমনকি ইতিকাফে বসা অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছেন। আমাদের ফাঁসির সেলে ও কারাগারে রাখা হয়েছে। এ দেশের কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে একজন আলেমও জড়িত নন। অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নিন। নচেত কীভাবে আঙুল বাঁকা করতে হয় হেফাজতে ইসলাম তা জানে। নভেম্বরের মধ্যে মুক্তি না দিলে সরকার পালানোর পথ পাবে না।

মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, অবিলম্বে হেফাজতের সব নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা বন্ধ, অমুসলিম ঘোষণা ও নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে হেফাজতের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আবদুল হামিদ বলেন, এই শেখ হাসিনার সরকার কানেও শোনে না, চোখেও দেখে না। এটা বৈবী সরকার। এদেরকে সরাতে মুগুর লাগবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে। প্রয়োজনে গুলি খাবো তবুও আপস করব না।

নাজমুল হোসাইন কাসেমী বলেন, এই সরকারের আমলে আমাদের অনেক আলেম গায়েবি ও বায়বীয় মামলার আসামি। পাপিয়া ও পরী মণিরা কারাগারে ডান্ডাবেরি খায় না।

তিনি আরও বলেন, এই সরকার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সমস্ত মুসলমানদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকুন।

মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, নির্বাচনের আগে আলেমদের মুক্তি না দিলে নির্বাচনে তার জবাব দেওয়া হবে। আলেমদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

মীর ইদ্রিস বলেন, দ্বীন কায়েমের জন্য হেফাজতে ইসলাম ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু এই সরকার আলেমদের মুক্তি দেওয়ার নামে কথা রাখেননি। তাদের আর হোমিও চিকিৎসা দিয়ে লাভ নেই তাদের এলোপ্যাথি চিকিৎসা দিতে হবে। আলেমরা কাপড়ের টুপির বদলে লোহার টুপি পড়তে প্রস্তুত। আলেমদের মুক্তি না দিলে আগামী নির্বাচনে খবর আছে।

সদ্য কারামুক্ত নেতা নূর হোসাইন নূরানি বলেন, আল্লাহ যদি কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তাহলে কিন্তু বংশে বাতি দেওয়ার কেউ থাকবে না।

এয়াকুব ওসমান বলেন, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে হেফাজত যদি আবার শাপলা চত্বরে যায় আপনারা পালানোর পথ পাবেন না।

অন্য বক্তারা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মামলাবাজ ও জালেম। তারা আলেমদের নিয়ে প্রতারণা করছে। ইসরাইলের কারাগার ও বাংলাদেশের কারাগারের কোনো পার্থক্য নেই। সেখানে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের গুলি করে মারা হচ্ছে। বাংলাদেশের আলেমদের কারাগারে নিক্ষেপ করছে। আলেমদের নিয়ে টালবাহানা করলে আলেমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত আছে। অতএব আলেমদের মুক্তি নিয়ে মুনাফেকি বন্ধ করুন। তাদের পক্ষে যারাই থাকবেন তাদের বিজয় সন্নিকটে ইনশাআল্লাহ। তারা অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রয়োজনে সময় বেঁধে দিন। এই সময়ের মধ্যেই মুক্তি না দিলে কিসের নির্বাচন কিসের কী? হেফাজতে ইসলাম যা করার তাই করবে।

তারা আরও বলেন, আলেমদের মুক্তি না দিয়ে ভোটের জন্য জনগণের কাছে যাবেন না। হেফাজতে ইসলামকে সরানো যাবে না। বরং ওই সরকার (ইমরান এইচ সরকার) সরে গেছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম রয়ে গেছে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হোক।

তারা বলেন, ফিলিস্তিন ইসইস্যুতে সংসদে বিল পাস করুন। প্রয়োজনে হেফাজতের মাধ্যমে এক কোটি মুজাহিদ ফিলিস্তিন যেতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে ইসরাইলি পণ্য বর্জনের দাবি জানান বক্তারা।

তাদের দাবীসমূহ হলো

১. ইহুদিবাদী অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর নির্বিচারে হামলা, ধারাবাহিক নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নৃশংসতার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে। এই হানাদার দখলদার বাহিনী গাজায় হাজারও শিশু, নারী এবং বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলছে। তাই আজকের সম্মেলন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর অবিলম্বে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ ও ইসরায়েলের সঙ্গে সব পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, তাদের সব পণ্য বর্জন করা ও বাণিজ্যিকভাবে তাদের বয়কট করার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের প্রতি জোরাল আহ্বান জানাচ্ছে।

২. প্রায় তিন বছর ধরে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় কারাগারে বন্দি আছেন হেফাজতের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ফখরুল ইসলাম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ আরও অনেক আলেম। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাদের এত দীর্ঘ সময় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সরকার বন্দি করে রেখেছে। আজকের সম্মেলন কারাবন্দি সব হেফাজত নেতাকর্মীদের আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।

৩. ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

৪. ইসলামবিরোধী সব অপশক্তি প্রতিরোধ, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও মজলুম মানবতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বস্তরের আলেম ও তৌহিদি জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

৫. আল্লাহ, রাসুল সা. ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।

৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

৭. ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া অনুযায়ী ভারতের মাওলানা সাআদ সাহেবের বিভিন্ন বয়ান শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং চরম বিতর্কিত ও তার মনগড়া চিন্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই বাংলাদেশে মাওলানা সাদ সাহেবের আগমন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুরায়ি নেজামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। সরকার এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আজকের সম্মেলন জোর দাবি জানাচ্ছে।

যেসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে

১. আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কারাবন্দি হেফাজতের সব নেতাকর্মীর মুক্তি ও হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

২. আগামী ৩ মাসের মধ্যে সারা দেশে হেফাজতে ইসলামের জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হবে।

৩. আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, বি.বাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে শানে রেসালাত সম্মেলন করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য সকল জেলাতেও অনুষ্ঠিত হবে।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *