পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভালো ছাত্র হিসেবে সুনাম ছিল রাজধানীর ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবায়ের হাসান রাফিতের (১৮)। অমায়িক ব্যবহারের কারণে শিক্ষকদের প্রিয় ছিল জোয়াবের। এজন্য তাকে নিয়োজিত করা হয় ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে। তবে, এই দায়িত্ব পালন করাই কাল হয়েছে তার। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সহপাঠী চৌধুরী রাজিন ইকবালের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে সে। ক্লাসের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে যাওয়ায় রাজিনের হামলার শিকার হয় জোবায়ের।
এরপর কলেজের অধ্যক্ষ রাজিন ও তার বাবাকে স্কুলে ডেকে আনেন এবং রাজিনকে শাসন করেন। এ ঘটনায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে জোবায়েরকে হত্যার পরিকল্পনা করে রাজিন। প্রায় এক মাস জোবায়েরের সঙ্গে ভালো বন্ধুর অভিনয় করে বাসায় ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রাজিন।
গত শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় কমার্স কলেজের পাশে সরকারি হাউজিং ভবনের তৃতীয় তলায় রাজিনের বাসা থেকে জোবায়েরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আর হত্যাকাণ্ডের আসামি রাজিনের বাবার নাম ইকবাল আহম্মেদ চৌধুরী। তিনি পেশায় আইনজীবী। রাজিনের মা ঢাকার বাইরের একটি কলেজের শিক্ষিকা।
জোবায়ের হাসান রাফিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারই সহপাঠী মূল আসামি রাজিনকে (১৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে রাজিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪-এর সহকারী পরিচালক এএসপি জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, গত ৬ জুলাই সন্ধ্যার দিকে ঢাকা কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী চারতলা বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় একটি বাসায় কলেজ শিক্ষার্থী জোবায়েরের মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-৪ ও র্যাব-৯ এর অভিযানিক দল হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার মূলহোতা রাজিনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার রাজিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে সে জানায়, জোবায়ের ও সে ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজিনের কাছ থেকে কলেজের শিক্ষক একটি দাবা বোর্ড বাজেয়াপ্ত করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সে কলেজের উপদেষ্টা বরাবর নিয়মিত শিক্ষার্থী উল্লেখ করে দাবা বোর্ডটি গ্রহণের জন্য আবেদন করে।
জোবায়ের ক্লাস ক্যাপ্টেন, আর রাজিন নিয়মিত ছাত্র কি না এবং আবেদনটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী উল্লেখ করাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়।
পরবর্তী সময়ে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করা হয় এবং অভিভাবকদের কাছে বিষয়টি অবহিত ও সতর্ক করা হয়। এ ঘটনার জেরে রাজিনের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং জোবায়েরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই দুপুরে রাজিন কমার্স কলেজের পার্শ্ববর্তী নিজ ভাড়া বাসায় কৌশলে জোবায়েরকে ডেকে আনে।
এএসপি জিয়াউর রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে জুবায়ের সেখানে পৌঁছালে তাদের মধ্যকার পূর্বের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে জোবায়েরকে ধারালো বটি দিয়ে কোপানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করে রাজিন। পরে হত্যার বিষয়টি রাজিন তার বাবাকে জানালে দ্রুত তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানার আগেই রাজিনকে তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। পরবর্তী সময়ে মরদেহটি সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ অবগত হলে হত্যাকারীর বাবাও কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তার রাজিনের বাবা মাইক্রোবাসযোগে ছেলেকে নিয়ে হবিগঞ্জে যান। পরে নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে রাজিনকে রেখে নিজেও অন্যত্র আত্মগোপন করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।