পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : গাজা দখল এবং ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লীগের পাল্টা প্রস্তাবকে অনুমোদন করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। শুক্রবার (৭ মার্চ) দুই জন মন্ত্রী এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
কায়রোতে এক শীর্ষ সম্মেলনে আরব লীগের পক্ষে পরিকল্পনাটি অনুমোদন করার তিন দিন পর সৌদি আরবের জেদ্দায় এক জরুরি বৈঠকে ৫৭ সদস্যের ওআইসি থেকেও একই সিদ্ধান্ত এলো।
ট্রাম্পের ব্যাপকভাবে নিন্দিত পরিকল্পনার পরিবর্তে সম্প্রতি মিশর একটি বিকল্প প্রস্তাব করে। প্রস্তাবের অধীনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যত প্রশাসনের অধীনে গাজা উপত্যকা পুনর্নির্মাণের কথা জানানো হয়।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বলেন, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার জরুরি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিশরীয় পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এটি এখন একটি আরব-ইসলামিক পরিকল্পনায় পরিণত হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়।
ট্রাম্প গাজাকে ‘দখল’ করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসেবে পরিণত করার পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের মিশর বা জর্ডানে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করতে হুমকিও দেন।
ক্যামেরুনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেজুন এমবেলা নিশ্চিত করেছেন, ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের নতুন ঘটনাবলীর আলোকে ওআইসি জরুরি বৈঠক ডেকেছিল। বৈঠকে সমন্বিত এবং বহুপাক্ষিক পদ্ধতির মাধ্যমে সংঘাতের চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে চুক্তির যুদ্ধবিরতির পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এমবেলা বলেন, এই পদ্ধতিটি কেবলমাত্র দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কাঠামোর মধ্যেই প্রযোজ্য এবং প্রাসঙ্গিক হতে পারে, যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে পাশাপাশি বসবাস করবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক শান্তি নিশ্চিত হবে।
জরুরি বৈঠকে গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু টাঙ্গারা গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনাকে ‘উস্কানিমূলক, নৃশংস এবং অমানবিক’ বলে নিন্দা করেছেন। ইসরায়েলি পার্লামেন্টে সম্প্রতি গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার কাজ নিষিদ্ধ করে আইন পাসের বিষয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ওআইসির মহাসচিব হিসেইন ইব্রাহিম তাহা গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন পরিকল্পনার প্রতি তার সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভূমিতে থাকার অধিকারের প্রতিও অটল রয়েছেন।
তিনি ‘একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি অর্জন, দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা বিতরণ, বাস্তুচ্যুতদের তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে সহায়তা করা, ফিলিস্তিনি সরকারকে তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলা এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ঐক্য রক্ষা করার জন্য’ আরও সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার কায়রোতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে আরব লীগের নেতারা গাজার পুনর্গঠনের জন্য একটি ট্রাস্ট তহবিল ঘোষণা করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটিকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেলাত্তি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর দ্বারা গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে পরিকল্পনাটিকে একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনায় পরিণত করা। আমরা এটাই চাইব এবং আমেরিকানসহ সকলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের বলেন, এই পরিকল্পনা ওয়াশিংটনের ‘প্রত্যাশা পূরণ করে না’।
তবে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এই পরিকল্পনাকে ‘মিশরীয়দের পক্ষ থেকে সদিচ্ছার প্রথম পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন।
কায়রোর আল-আহরাম সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাবা সাইফ আল্লাম বলেন, মিশর তার প্রস্তাবের জন্য বিস্তৃত সমর্থন চাইছে। এটি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত জোট গঠনের প্রচেষ্টা।
ট্রাম্প গাজা নিয়ে পরিকল্পনা ঘোষণার ফলে ইতোমধ্যেই আরব দেশগুলোর মধ্যে বিরোধীরাও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সৌদি আরব দুই সপ্তাহ আগে আলোচনার জন্য আরব নেতাদের আতিথেয়তা দিয়েছে। শুক্রবারের বৈঠকে ওআইসি সিরিয়াকেও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে।