দুশ্চিন্তা পেঁয়াজ ও বেগুন নিয়ে

দুশ্চিন্তা পেঁয়াজ ও বেগুন নিয়ে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে আগামী ১২ মার্চ। সেই হিসাবে আর এক মাসও নেই। ছোলার পাশাপাশি ইফতারির অপরিহার্য অনুষঙ্গ পিঁয়াজু ও বেগুনি। বাড়তি চাহিদার কারণে তখন এই দুই পণ্যের দামও বেড়ে যায়।

কিন্তু এবার ভরা মৌসুম থেকেই পেঁয়াজ ও বেগুনের বাজার চড়া। রমজানে এই দুটি পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ না হলে বাজার আরো চড়া হয়ে উঠতে পারে। কারণ প্রতিবছরই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

বিক্রেতারা অবশ্য বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে এবার রমজানে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম, যার প্রভাব পড়েছে দামে। তবে রমজানের আগে আগেই কৃষকরা হালি পেঁয়াজ তোলা শুরু করবেন। তখন আবার দাম কমতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় সরবরাহ কিছুটা কম।

এই সুযোগে দুই দফায় দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

রামপুরা কাঁচাবাজারের মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এখন পাইকারিতেই পেঁয়াজের দাম বাড়তি থাকায় কেজি ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যার কারণে ১১৫ থেকে ১২০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। বেসন কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’

অন্যদিকে ভরা মৌসুম থেকেই চড়া বেগুনের বাজার।

রাজধানীর খুচরা বাজারে গোল বেগুন ৮০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। তবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে লম্বা জাতের বেগুন পাওয়া যাচ্ছে।
বাড্ডার কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মেহেদি হাসান গতকাল বলেন, ‘এবার ভরা মৌসুমেও বেগুনের দাম তেমনভাবে কমেনি। গোল জাতের বেগুন কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং লম্বা জাতের বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি করছি। রমজানে যদি নতুন বেগুন বাজারে না আসে তাহলে বাড়তি দামেই ক্রেতাদের কিনতে হতে পারে। তবে প্রতিবছর বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা রমজান মাসকে সামনে রেখে বেগুন চাষ করেন। সেই বেগুন রমজানের শুরু থেকেই বাজারে পাওয়া যায়। এবারও সেই বেগুন বাজারে এলে দাম বেশি বাড়ার আশঙ্কা নেই।’

বেগুনি ও পেঁয়াজু তৈরিতে প্রয়োজন হয় বেসন। এই বেসন তৈরি হয় সাধারণত অ্যাংকর ডাল ও ছোলার ডাল দিয়ে। এবার এরই মধ্যে এই দুটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেসনের দামও কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। অ্যাংকর ডালের বেসন কেজি ১০০ টাকা এবং ছোলা ডালের বেসন কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইফতারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ছোলা। এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছোলা আমদানি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তাই এবার নতুন করে আর ছোলার দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার রোজা সামনে রেখে দুই-তিন মাস আগেই ছোলা আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এনবিআরের তথ্য মতে, গত তিন মাসে প্রায় ৮৪ হাজার টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। আরো ছোলা আমদানির পথে রয়েছে। রোজা শুরুর আগেই এসব ছোলা বাজারে চলে আসবে। ফলে সরবরাহে কোনো সংকট হবে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার মাসে দেশে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্য মাসগুলোতে গড়ে ১০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশের পাইকারি বাজারে ছোলার দাম ৮০ থেকে ৯৬ টাকা। আর খুচরা বাজারে মানভেদে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তো সব সময় সুযোগসন্ধানী। দুই-তিন বছর ধরে আমরা লক্ষ করছি রোজা আসার আগে আগেই কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম চড়া করে দেন। আবার রোজা কয়েকটি গেলেই জিনিসের দাম কিছুটা কমে। এবার সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে রোজার আগেই পণ্যের দাম কমে আসবে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়াতে সরকারকে নানা উদ্যোগ নিতে হবে।’

বগুড়া : উত্তরাঞ্চলের মধ্যে প্রসিদ্ধ সবজি বাজার বগুড়ার মহাস্থান হাটের সবজি বাজার গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮২ থেকে ৯০ টাকা। গোল বেগুন পাইকারিতে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। মহাস্থান হাটের বিসমিল্লাহ আড়তের স্বত্বাধিকারী বাবুল মিয়া বাবু জানান, মঙ্গলবার হাটে গোলাকার কালো বেগুন (মেন্টাল) এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণ এবং সবুজ রঙের গোল বেগুন ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এই বাজারে মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ আকৃতিভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *