পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ

পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে গতকাল সোমবার ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

মূল উপস্থাপনায় বলা হয়, ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কিন্তু সরকারি মূল্যস্ফীতির হিসাবে এ চিত্র উঠে আসছে না। একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়। ফাহমিদা খাতুন জানান, আমদানি করা অন্তত ২৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে উচ্চ হারে কর দিতে হয়। এগুলো কমানোর সুপারিশ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। পারলে এই ঈদেই বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। ৩ দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রথম ৬ মাসে। আগামী ছয় মাসে কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। চলতি অর্থবছর ৩ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। কিন্তু রাজস্ব আদয়ের বর্তমান গতি একই থাকলে রাজস্ব আদায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম হবে।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের রাজস্ব আহরণের ঘাটতি নিয়ে আইএমএফের যে আশঙ্কা, সেটা আমাদেরও মনে হচ্ছে। এনবিআরের সম্পদ আহরণের দুর্বলতা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের আওতা দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সরকারের ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চলতি মেয়াদের সর্বশেষ বাজেট হতে যাচ্ছে এটা। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও এটা পুনরুদ্ধার করা চ্যালেঞ্জ। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন হবে। এটা করতে গিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে।

অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও সুশাসন না হওয়াই বড় দুর্বলতা উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় ধরনের সংকট এখন আর বলা যাচ্ছে না। অর্থনীতির ভেতরের দুর্বলতা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা কারণ হয়ে থাকলেও বড় প্রতিবন্ধকতা নয়। অভ্যন্তরীণ নীতি সহায়তা ও সুশাসন না হওয়াই বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছয়টি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার বিষয় উল্লেখ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব কাঠামো, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, সামাজিক বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত আগামী বাজেটে বড় বিবেচ্য বিষয়।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকগুলো পণ্যের দাম নিম্নমুখী। কিন্তু আমাদের দেশে সেগুলোর প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বাণিজ্য ভারসাম্যে ঝুঁকি রয়েছে। রিজার্ভের তেমন উন্নতি দেখতে পারছি না। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। যদিও নন-গার্মেন্টেস পণ্যের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যার বাড়লেও সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স আসছে না। বৈদেশিক সাহায্য ১২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। যদিও আগের বছর প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছিল বৈদেশিক সহায়তা।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগেরও খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যায়নি। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে ঋণ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কিছু কিছু বাণিজ্য ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর বাইরে আবার টাকার সরবরাহ বাড়ছে। বাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করছি। সুশাসনের অভাব রয়েছে। আইএমএফ থেকেও ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের কথা বার বার বলা হচ্ছে।

আগামী বাজেটে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে সিপিডি। এর মধ্যে পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। সিপিডি বলছে, এই ধরনের সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সৎ করদাতারা নিরুত্সাহিত হন। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *