পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : হজকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে একত্রিত হন পুরো বিশ্বের মুসলিমরা। এ যেন পবিত্র কোরআনের সুরা হজে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে বলা বাণীর বাস্তবায়ন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূরদুরান্তের পথ অতিক্রম করে।’ (সুরা হজ : ২৭)
আল্লাহ তায়ালার এই আদেশের পর খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, এটা তো জনমানবহীন প্রান্তর। এখানে ঘোষণা শোনার মতো কেউ নেই। যেখানে ঘনবসতি আছে সেখানে আমার আওয়াজ কীভাবে পৌঁছবে? আল্লাহ উত্তরে বলেছিলেন, তোমার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা দেওয়া। সারা বিশ্বে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার। এ কথা শুনে হজরত ইবরাহিম (আ.) তখন মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন। আল্লাহ তা উচ্চ করে দেন।’
এরপর থেকে আজ পর্যন্ত হজ চালু রয়েছে। ইসলামপূর্বে যুগেও তৎকালীন মানুষেরা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী হজ পালন করতেন, কাবাঘরকে সম্মান করতেন। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামর্থ্যবান উম্মতের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। হজের মূল কার্যক্রম পালন করতে হয় ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত।
এই দিনগুলোতে যেসব আমল করতে হয় তুলে ধরা হলো-
৮ জিলহজ
হজের মূলকার্যক্রম শুরু হয় ৮ জিলহজ থেকে। এ দিন হাজীদের দুইটি কাজ করতে হয়।
১. মক্কার হারাম শরিফ বা বাসা বা হোটেল থেকে হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া এবং জোহরের নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছা।
২. মিনায় অবস্থান করা। জোহরের নামাজসহ ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব এবং সেখানে অবস্থান করা সুন্নত।
৯ জিলহজ
৯ জিলহজকে বলা হয় ‘ইয়াউমে আরাফা’ বা আরাফা দিবস। এ দিন বিশেষ ফজিলতপূর্ণ এবং এ দিনেই অধিক সংখ্যক জাহান্নামিকে মুক্তি দেওয়া হয়। আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় হজের মূল কার্যক্রম।
এ দিন চারটি কাজ করতে হ-১. ফজরের পর মিনায় গোসল বা ওজু করে সকাল-সকাল আরাফার ময়দানের উদ্দেশে রওনা হওয়া। রওনার সময় তাকবির বলা-‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
২. জোহরের আগেই আরাফার ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হওয়া এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা। আর এটাই হলো হজের অন্যতম রোকন।
৩. আরাফার ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শোনা এবং নিজ নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা।
তওবা-ইসতেগফার, তাকবির, তসবিহ, তাহলিল ও রোনাজারিতে আত্মনিয়োগ করা ৪. সন্ধ্যায় মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হওয়া। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।
১০ জিলহজ
হজের প্রধানতম কর্মব্যস্ত দিন। এ দিনে হাজিদের পাঁচটি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়-
১. মুজদালিফায় অবস্থান; মুজদালিফায় সারারাত খোলা আকাশের নিচে মরুভূমির বালুর ওপর অবস্থান করা। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার আগে কিছু সময় অবস্থান করা এবং সূর্য ওঠার আগেই মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া।
২. পাথর সংগ্রহ, মিনায় জামরায় (শয়তানকে মারার জন্য) মুজদালিফায় অবস্থানের সময় রাতে কিংবা সকালে কঙ্কর সংগ্রহ করা।
৩. কঙ্কর নিক্ষেপ; ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসেই বড় জামরায় ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা। আর তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করা।
৪. কোরবানি করা, বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেই মিনায় কোরবানির পশু জবাই করা।
৫. মাথা মুণ্ডন করা, কোরবানির পর পরই মাথা ন্যাড়া করার মাধ্যমে হজের ইহরাম থেকে হালাল হবে হাজি। মাথা মুণ্ডানোর মাধ্যমে হাজি ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১ ও ১২ জিলহজ
এ দুদিন মিলে মোট তিনটি কাজ করতে হয়-
১. তাওয়াফে জিয়ারত, হজের সর্বশেষ রোকন হলো তাওয়াফে জিয়ারত। ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কুরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।
২. কঙ্কর নিক্ষেপ; ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন মিনায় অবস্থান করা এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা। তবে যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে, তবে তাকে তাওয়াফের পর আবার মদিনায় চলে আসতে হবে এবং মিনায় অবস্থান করতে হবে।
৩. মিনায় রাতযাপন ও ত্যাগ; ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনার ময়দানেই রাতযাপন করা এবং যারা মিনা ত্যাগ করবেন তারা ১২ তারিখ সূর্য ডোবার আগেই মিনা ত্যাগ করবে। সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারলে সে রাত (১৩ জিলহজ) মিনায় অবস্থান করা। উল্লেখ্য, যদি কেউ ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে কিংবা থাকার ইচ্ছা করে তাকে ১৩ জিলহজ ৭টি করে আরও ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।
বিদায়ি তাওয়াফ
সারা বিশ্ব থেকে আগত সব হজ পালনকারীর জন্য দেশে রওনা হওয়ার আগে পবিত্র কাবা ত্যাগের আগে বিদায়ি তাওয়াফ করা আবশ্যক। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ি তাওয়াফ হিসেবে আদায় হয়ে যায়।