রাজধানীর যানজট কমাবে যেসব প্রকল্প

রাজধানীর যানজট কমাবে যেসব প্রকল্প

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাজধানীর যানজট নিরসন, সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তাই সড়ক, রেল, নৌ─সব মাধ্যম নিয়ে সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। জনবান্ধব টেকসই যোগযোগব্যবস্থা বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়েও গেছে কাজ। সড়ক প্রশস্তকরণ, ফ্লাইওভার নির্মাণ, মেট্রোরেল ব্যবস্থা, এক্সপ্রেসওয়েসহ আরও কিছু মেগা প্রকল্প এখন জনগণের জন্য উন্মুক্ত। প্রথমবারের মতো এগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে রাজধানীবাসীসহ পুরো দেশের মানুষ।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

যানজট এড়িয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যেতে দেশে প্রথমবারের মতো নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশ যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অংশের উদ্বোধন করবেন। রবিবার থেকে এটা উন্মুক্ত হবে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য।

এক্সপ্রেসওয়েটি কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলে আশা করছেন রাজধানীবাসী।

১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে, যেগুলোসহ এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করবে। তবে পরবর্তী কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পথচারী এই ওয়েতে চলাচল করতে পারবে না।

ঢাকা মেট্রোরেল

ইতোমধ্যে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। বহুল প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম এই মেট্রোরেলের সুফলও পাচ্ছে নগরবাসী। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬-এর প্রথম অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২০ অক্টোবর মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের উদ্বোধন করবেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তা কমলাপুর পর্যন্ত যাবে। ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটারের এই মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।

মেট্রোরেল-৬ ছাড়া আরও পাঁচটি মেট্রোরেল রুট নির্মিত হবে রাজধানীজুড়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকাকে মেট্রোরেলের নগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের। এরই মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১-এর কাজ শুরু হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন-৫ (হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা) নির্মাণকাজ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ধাপে ধাপে বাকি মেট্রোরেলের কাজ শুরু হবে।

১৫ বছরে ৭টি ফ্লাইওভার

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজধানীজুড়ে একে একে সাতটি ফ্লাইওভার চালু হয়েছে, যা রাজধানীর চলাচলের পথকে আরও সহজ ও সময়সাশ্রয়ী করে দিয়েছে। বিনা যানজটে দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া যাচ্ছে। এসব ফ্লাইওভারের মধ্যে রয়েছে কালশী ফ্লাইওভার, বিমানবন্দর-মিরপুর রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার এবং বনানী ওভারপাস, কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভার, বিজয় সরণি-তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সংযোগ সড়ক ও রেলওয়ে ওভারপাস, তেজগাঁও-মগবাজার-মৌচাক-শান্তিনগর ফ্লাইওভার এবং যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার।

ঢাকামুখী প্রবেশ পথগুলো প্রশস্তকরণ

ঢাকার প্রবেশপথগুলোকে প্রশস্ত এবং কিছু নতুন রুট তৈরি করার সুবিধা পাচ্ছে রাজধানীবাসী। এতে ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমন ঝামেলামুক্ত হওয়াসহ এর আশপাশের অঞ্চলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে যানবাহন প্রবেশ ও বহির্গমনের নতুন রুট হিসেবে হাতিরঝিল-রামপুরা-বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-শেখের জায়গা-আশুলিয়া-ডেমরা মহাসড়কের শেখের জায়গা থেকে আশুলিয়া হয়ে ডেমরা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ১০৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

আরেক নতুন রুট হিসেবে শিরনিরটেক থেকে গাবতলী সেতু পর্যন্ত ৯২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

দেশের পূর্বাঞ্চলের যানবাহন ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়া নির্বিঘ্ন করতে ১২৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর উত্তরা, গাবতলী ও আশুলিয়া পয়েন্টে যানজট দূর করতে ও ঢাকা প্রবেশের নতুন রুট হিসেবে ৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিরুলিয়া-আশুলিয়া মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ মহাসড়কের তুরাগ নদীর ওপর ১৮৬ দশমিক শূন্য ৪ মিটার দীর্ঘ বিরুলিয়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের নির্বিঘ্ন যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ১৩০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।

ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট

ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। প্রকল্পটি চালু হলে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। আর পদ্মা সেতুর সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তৈরি করা হয় এই এক্সপ্রেস হাইওয়ে। এটি দেশের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *