ট্রায়ালের জন্য চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার রুটের ট্রেন প্রস্তুত

ট্রায়ালের জন্য চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার রুটের ট্রেন প্রস্তুত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙা স্টেশনের পর এবার ট্রায়ালের জন্য প্রস্তত চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার রুটের ট্রেন। ইতোমধ্যে পটিয়া রেল স্টেশনে ট্রায়াল রানের উদ্বোধনের জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছে ছয়টি বগি ও একটি ২২শ সিরিজের ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব একেকটি বগিতে যাত্রী বসতে পারবে ৬০ জন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসে এ ট্রেন ছুটে চলবে সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের দিকে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী অক্টোবরে প্রথম ট্রায়াল ট্রেন যাত্রা শুরু করবে বহুল কাঙ্ক্ষিত দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন ধরে। কালুরঘাট সেতু পার করে ছয়টি বগি ও ইঞ্জিন পটিয়ায় নিয়ে রাখা হয়েছে দেড় মাস আগেই।

অক্টোবরে ট্রায়াল করা হলেও রাজধানী ঢাকা থেকে ট্রেনে করে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম-পটিয়া হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার যেতে পারবেন যাত্রীরা আগামী বছরের শুরুর দিকে। কম খরচে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ট্রেনে করে নির্বিঘ্নে পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।

এ লক্ষ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের কাজ প্রায় পর্যায়ে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এবার দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের সংস্কার কাজও শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে।

কক্সবাজার সেকশনের রেললাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে। পটিয়া স্টেশনে ট্রায়াল ট্রেনও অবস্থান করছে। কালুরঘাট ব্রিজ পুরোপুরি খুলে ফেলার আগেই একটি ট্রেন পার করে ট্রায়ালের জন্য দেড়মাস আগ থেকেই পটিয়ায় এনে রাখা হয়েছে। এই ট্রেন দিয়েই অক্টোবরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে প্রথমবার ট্রায়াল হবে। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ৬/১২ লোডের ২০১৯ সালে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের অবমুক্ত হওয়া একটি ট্রেন পটিয়াতে ট্রায়ালে ট্রেন হিসেবে অবস্থান করছে। যেটি আগামী অক্টোবরে কক্সবাজার অংশের কাজ শেষ হলে পটিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো রেল সড়কে চূড়ান্ত ট্রায়াল দিবে ছয়টি বগি সম্বলিত ট্রেনটি।

পটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, লাল-সবুজের চকচকে দৃষ্টিনন্দন বগিগুলো। এই ট্রেনটি কক্সবাজারে প্রথম ট্রায়ালে যাবে। ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। ফলে ওই সেতু দিয়ে ট্রেন এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তাই তার আগেই ছয়টি নতুন বগি এবং একটি ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন আনা হয় পটিয়া প্রান্তে। নতুন বগিগুলো এখন পটিয়া রেলস্টেশনের সামনে রাখা আছে। আগামী অক্টোবর মাসে এসব বগি ও ইঞ্জিনের মাধ্যমে কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথে ট্রায়াল রান এবং উদ্বোধন করা হবে। এজন্য বগি ও ইঞ্জিন এনে আগ থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতুটি দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে। সেতুটি আরো মজবুত করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে এ সেতুতে।

তিনি আরো বলেন, আপাতত ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাবে একটি ট্রেন। সে হিসেবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে কোনো সময়ে ট্রেনটি ছাড়া হবে ইতোমধ্যে এ নিয়ে দুটি প্রস্তাবনা রেল ভবনে পাঠানো হয়েছে। দুটি প্রস্তাবনার মধ্যে যেকেনো একটি ধরেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রথম প্রস্তাবনা ঢাকা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ভোর সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছবে। ফিরতি পথে সকাল ১০টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছবে। ফিরতি পথে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১০টায় ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছাবে। তবে ভাড়া এখনো নির্ধারন করা হয়নি।

এদিকে, প্রকল্পের কাজ শুরু ২০১০ সালে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় বিশেষ কোচও কেনা হবে।

প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করছি অক্টোবরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রান করা যাবে। ট্রায়াল রানের পরও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনে যেতে আরো দুই-তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার- এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ও স্টেশনের কাজ প্রায় ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশনে প্লাটফর্ম ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ প্রস্তুত করা হয়েছে। ১০০ কিলামিটারের মধ্যে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ ধরা হলেও ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজটি পুরোপুরি শেষ করতে চায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *