কানাডায় চিকিৎসাধীন কবি আসাদ চৌধুরী

কানাডায় চিকিৎসাধীন কবি আসাদ চৌধুরী

পাথেয় টুয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলা একাডেমি এবং একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে কানাডার লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার কবিকে দেখতে এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর নিতে হাসপাতালে যান। কবি আসাদ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে; তবে এখনো আশংকা পুরোপুরি কাটেনি।

তবে তিনি হাইকমিশনারের সাথে পূর্ণ জ্ঞানে পুরোপুরি চোখ মেলে তাকিয়ে হাত তুলে তাঁর সালামের উত্তর দিয়েছেন এবং তাঁর সাথে করমর্দন করেছেন। মান্যবর হাই কমিশনার কবির সহধর্মিনী ও কন্যার সাথে তাঁর চিকিৎসার বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডায় তাঁর প্রবাসী ছেলে ও মেয়ের সাথে বাস করছিলেন। তিনি গত বছর নভেম্বর থেকে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তিনি তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত।

এছাড়া তিনি তার ভরাট কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেও মানুষের মন জয় করেছেন। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অণুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ “সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু।”

কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। কবির পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া। তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যতাও ছিল। জনাব আরিফ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের পাশে দাঁডিয়ে বঙ্গবন্ধু কবির কাঁধে হাত রেখে কবিকে সাহস যুগিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীর বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রা এবং এখানকার সাহিত্যানুরাগীদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট করতে তাঁর অবদান অসীম ও অনস্বীকার্য। তাঁর শারীরিক এই অবস্থায় ক্যানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশী কমিউনিটি খুবই উদ্বিগ্ন ও তাঁর আশু রোগ-মুক্তি কামনা করছে। কবির পরিবার কানাডায় বসবাসকারী সমস্ত বাংলাদেশী ও বাংলাদেশের সবার কাছে প্রিয় কবির দ্রূত আরোগ্য ও সুস্হতার জন্য দো’আ চেয়েছেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন কবির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তাঁর পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং কানাডা প্রবাসী সকল বাংলাদেশীসহ বাংলাদেশের সবাইকে এই মহান কবির আশু রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া করার জন্য আহবান জানাচ্ছে। পরম করুনাময়ের কাছে আমাদের সবার একটাই চাওয়া প্রিয় কবি যেন সুস্হ্য হয়ে আমাদের মাঝে দ্রূত ফিরে আসেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *