পারমাণবিক শক্তি শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব: প্রধানমন্ত্রী

পারমাণবিক শক্তি শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব: প্রধানমন্ত্রী

পাথেয় টুয়েন্টিফোর ডটকম: পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‌পরমাণু শক্তি আমরা শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব। আমরা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমরা ‘‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’’ প্রণয়ন করেছি এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এ কর্তৃপক্ষ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।’

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ক্রেমলিন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে গতকাল জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। রাশিয়া থেকে আসা এ ইউরেনিয়াম গত ২৯ সেপ্টেম্বর রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছায়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসিও ভিয়েনা থেকে গতকালকের ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন, আনন্দের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে শামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।’

অচিরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।‘

রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এ স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।’

বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং গতকালের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং বিশেষ আতিথেয়তার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।‘

সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২ সালে কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এ কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সংযুক্ত হল।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একই রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে, সে জন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতে প্রেরণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যেকোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এ প্লান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এসডিজি পুরস্কার, ‘চ্যাম্পিয়ান অব দি আর্থ’ পুরস্কার, ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কার অর্জন করেছি। তাছাড়া জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিকসংক্রান্ত স্বীকৃতিসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, সর্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ-স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে দেশে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সুফল নিয়ে এখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করছে। আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক তরুণ প্রজন্মই “‍স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *