উচ্চবিত্তরা সুবিধা পেলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আয়-ব্যয়ের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন তাতে উচ্চবিত্তরা সুবিধা পেলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

শুক্রবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় তাদের মনে হয়েছে নবীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবীণ বাজেট তৈরি করা হয়েছে।

বাজেটের এই লক্ষ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় বলেন, ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য বাজেটে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে ১১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি লাগবে, যা ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ করতে হবে।

আর তাতে করে ‘পুঁজির উৎপাদনশীলতা কমে যাবে’ বলে মন্তব্য করেন সিপিডিরি সম্মানীয় ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ধরা হয়েছে যে মূল্যস্ফীতির হার ৫.৬ শতাংশ থাকবে, আমরা অবশ্যই এটার ব্যাপারে গভীর সংশয় প্রকাশ করছি। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির যে পরিস্থিতি এবং দেশের ভেতরে যে প্রবণতা সেটা এটাই বলছে।

তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি যে, বিড়াল বড় হতে পারে, বিড়াল ছোট হতে পারে কিন্তু তাকে ইঁদুর ধরতে হবে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার উঁচু হতে পারে, প্রবৃদ্ধির হার নিচু হতে পারে, কিন্তু প্রবৃদ্ধিতে গরিব মানুষের দারিদ্র্যবিমোচন হতে হবে, তাদের বেশি পেতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে পূর্ব-পশ্চিম ভাগ তৈরি হয়েছে। এক দিকে সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা; অপর দিকে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী। একদিকে উন্নততর বাংলাদেশ, আরেকদিকে দরিদ্রতর বাংলাদেশ।… আমরা দেখছি, সম্পদ, ভোগ এসব ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে।

অর্থনীতির এই গবেষক বলেন, যারা সবচেয়ে গরিব, গত পাঁচ বছরে তাদের ৬০ শতাংশ আয় কমেছে। অন্যদিকে সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশ মানুষের ৫৭.৪ শতাংশ আয় বৃদ্ধি ঘটেছে। এখানে যার পুঁজি আছে, তারা আয় করার বেশি সুযোগ পাচ্ছে যার শ্রম ও উদ্যোগ আছে তার তুলনায়। শ্রম ও উদ্যোগের তুলনায় পুঁজি এবং সম্পদকে বেশি পুরস্কৃত করছেন। এটা মেধাভিত্তিক অর্থনীতির জন্য ভালো খবর বলে মনে হচ্ছে না।

দেবপ্রিয় বলেন, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স, রফতানি আয়, মুদ্রাস্ফীতি ও সামাজিক সুরক্ষার জায়গাগুলোকে দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী দিক।

পাশাপাশি রাজস্ব আদায় ও এডিপি বাস্তবায়নে দুর্বলতা, কৃষকের প্রণোদনামূলক দাম না পাওয়া, বৈদিশিক আয়-ব্যয়ে চাপ ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিকে তিনি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ এখনও স্থবির হয়ে রয়েছে। কর্মসংস্থানে প্রবৃদ্ধির হার এবং গরিবের আয় বৃদ্ধির হার দুর্বল, উৎপাদনশীলতা ও মানবসম্পদের গুণগতমান দুর্বল। এ কারণ বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর বিরোধিতা করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, ব্যাংক খাতে যে ধরনের নৈরাজ্য চলছে, সেটা সমাধান না করে এ ধরনের সুবিধা দেয়া… আগে যেভাবে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, সেটাকে ধরে রাখা হয়েছে। এর ফলে তারল্য বাড়বে না বলেই আমাদের সন্দেহ।

বাজেটে ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করে দেবপ্রিয় বলেন, আনুতোষিক ব্যয়ে ৭৫ লাখ টাকা সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেটা উচ্চবিত্তের মানুষরা পাবেন। এটা আমাদের কাছে বৈষম্যপূর্ণ মনে হয়েছে। যখন নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তকে সুবিধা দিলাম না, কিন্তু উচ্চবিত্তকে আনুতোষিক ব্যয়ে সুবিধা দিচ্ছি, এটা অর্থনীতির সাম্যনীতিতে ঠিক হলো না।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

ফলে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করেছেন মুহিত।

 

patheo24/106

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *