আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যৌতুক হিসেবে কত কিছু দাবি করে বর। নগদ টাকা, দামি গাড়ি- আরও কত কী! তবে এবার যেন এ ঘটনার ব্যতিক্রম কিছুই ঘটল। যৌতুক হিসেবে বর দাবি করেছেন ১০০১টি সবুজ চারাগাছ। ভারতের উপকূলীয় জেলা কেন্দ্রপাড়ার সরোজকান্ত বিসওয়াল বিয়েতে চারাগাছই যৌতুক চেয়েছেন।
বিসওয়াল পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি কেন্দ্রপাড়া জেলার চৌদ্দকুলাটা গ্রামের জগন্নাথ বিদ্যাপীঠের বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নেন। বিয়ের পাত্রী রেশমিখেরা পাইতালও পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা।
বিসওয়াল বলেন, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বিয়েতে কোনো যৌতুক নেব না। কিন্তু আমার হবু শ্বশুর যৌতুক দিতে নাছোড়বান্দা। তাই যখন দেখলাম যৌতুক নিতেই হবে। বাধ্য হয়ে আমি যৌতুক হিসেবে ১০০১টি ফলজ গাছের চারা চেয়ে বসলাম।’
সবুজ চারাগাছের যৌতুক দাবিদার বিসওয়াল দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশের কথা চিন্তা করে গাছের চারা লাগানোর কথা ভেবে আসছিলেন। অবশেষে শ্বশুরের সহযোগিতায় সেটা বাস্তবায়ন হলো। ২১ জুন বিয়ের আগের দিন বিসওয়ালের শ্বশুর ১০০১টি গাছের চারার ব্যবস্থা করেন। বিয়ের পরের দিন বর সেগুলো ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে যান।
১০০১টি গাছের চারার মধ্যে তিনি ৭০০টি আম ও বকুল গাছের চারা নিজ গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছেন। বিয়েকে শব্দ দূষণ ও পরিবেশ দূষণ থেকে দূরে রাখতে ডিজে মিউজিক ও আতশবাজিও বন্ধ রাখেন এই বর।
যখন তিনি তার বাড়ি থেকে ৬০ কি.মি. দূরে বেলানাতে পৌঁছান, যেখানে কনে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কোনো আতশবাজি বা ব্যান্ড মিউজিক বাদেই তিনি সেখানে হেঁটে যান। এখানেও গ্রামবাসীদের মধ্যে কিছু গাছের চারা বিতরণ করেন তিনি।
‘আমার স্বপ্ন ছিল যতদূর সম্ভব আমার বিয়েটা যেন সবুজ পরিবেশে হয়। ‘গাছা তি পাই সাথী তিয়ে’ (গাছের জন্য বন্ধু) সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে আমি প্রত্যেকের মাঝে এ বার্তা দিয়ে যাচ্ছি যে, পৃথিবীকে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বাঁচাতে গাছ লাগানো খুবই জরুরি,’ জানান সবুজ যৌতুকের দাবিদার বিসওয়াল।
বিসওয়ালের এ ধরনের কাজে যারপনরাই খুশি তার স্ত্রী রেশমি খেরা পাইতাল। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এই নববধূ বলেন, ‘প্রত্যেকে যদি তার এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, তাহলে আমরা পরিবেশকে বাঁচাতে পারব।’
পাত্রের বাড়িতে কনের সম্মানার্থে কনে বরণ অনুষ্ঠানে ৩০০ চারাগাছ গ্রামবাসীর মাঝে বিতরণ করে দেন বিসওয়াল। এমনকি বন্ধু ভাবাপন্ন পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিয়ে পরবর্তী সকল অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার পরিত্যাগ করেন এবং এটা যেন অতিথিরা তাদের জীবনে অনুসরণ করে, সেই অনুরোধও করেন তিনি।
স্বামীর পরিবেশবান্ধব কাজে খুশি শ্বশুরও। তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ’আমি আমার মেয়ের জামাইয়ের জন্য সত্যিই গর্বিত। সে দেখিয়ে দিয়েছে-পরিবেশ রক্ষা হয় আসলে কাজে, কথায় নয়।’ সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস