শাস্তির আওতায় মহানবীকে কটূক্তিকারীরা

শাস্তির আওতায় মহানবীকে কটূক্তিকারীরা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী সা.-কে নিয়ে কেউ কোনো কটূ কথা অথবা রাসূল সা.-কে অপমানজনক কোন কথা বা ইসলাম ধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়ালে আইনের মাধ্যমেই তার বিচার হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য কাউকে আইন হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেয়ায় ০৪ নভেম্বর ১৮ রবিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিল করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া। সেখানেই প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় তিনি সামাজিক মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। এই অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না।…নবী করিম সম্পর্কে কেউ কোনো কথা বললে আইন দ্বারা বিচার করা হবে। আমরা সেভাবেই এই সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো রকম অপপ্রচার যেন করতে না পারে, সেটা বন্ধের জন্য আমরা সাইবার ক্রাইম আইন করে দিয়েছি।…কেউ কেউ যদি অপপ্রচার করে সাইবার ক্রাইম আইন দ্বারা বিচার করা হবে।’

‘আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। আইনের দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দেব, যাতে কখনও তারা এই ধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে।’
‘দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক, তা আমরা চাই না। দেশের শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে, উন্নতি থাকলে সবাই লাভবান হবে। আপনারা দেখেছেন আমাদের উন্নতি তৃণমূলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত।’

ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নবী করিম (সা.) যে শিক্ষা আমাদেরকে দিয়েছেন, সেই শিক্ষা নিয়েই আমরা পথ চলব। কারও প্রতি বিদ্বেষ না, কারও প্রতি ঘৃণা না, কারও প্রতি কোনো খারাপ চিন্তা না, আমরা সব সময় মনে করি, মানুষের কল্যাণ মানুষের উন্নতি, মানুষের মঙ্গল, এবং মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।’

বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটির কারণে যারা অস্ত্র তৈরি করে এবং যারা বিক্রি করে তারা লাভবান হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর রক্ত ঝরে আমাদের মুসলমানদের।’

‘এই কথাটা আমি ওআইসির সেক্রেটারির কাছে তুলে ধরেছি। আমি একটা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী সম্মেলন করেছিলাম জাতিসংঘে। তখনও আমি বলেছিলাম, সারা বিশ্বের সব মুসলিম উম্মাহ এক হয়ে শান্তির পথে আমাদেরকে যেতে হবে। কারও মধ্যে যদি কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব আমাদের মধ্যে থাকে, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সমাধান করব।’

‘বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদের স্থান হবে না, সন্ত্রাসের স্থান হবে না, মাদকের স্থান হবে না, দুর্নীতিবাজের স্থান হবে না। বাংলাদেশ হবে একটা শান্তিপূর্ণ দেশ, উন্নত দেশ, সমৃদ্ধশালী দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামান্য কয়েকটা লোক আমাদের ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ইসলাম ধর্মের বদনাম দেয়। আমি যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেউ যদি বলে, ইসলাম টেরোরিস্ট, আমি তাখে সাথে আপত্তি জানাই, এটা বলতে পারবেন না। কারণ, সবাই টেরোরিজমে বিশ্বাস করে না।’

‘যারা টেরোরিস্ট, যারা সন্ত্রাসী, তাদের কোনে ধর্ম নেই, তাদের দেশ নাই, তাদের কোনো সমাজ নাই। তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী। যারা সত্যিকারের ইসলামে বিশ্বাস করে তারা কখনও সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী হতে পারে না।’

পৃথিবীর সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষের কাছেই পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মহান মানুষটি হলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ সা.। মুসলমানদের কাছে যিনি নিজেদের প্রাণের চাইতেও বেশী প্রিয়। ভালেবাসার সর্বোচ্চটুকু যার পায়ে নিবেদন করা প্রতিটি মুসলমানের। তার জন্য সবারই জীবন উৎসর্গ। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ সর্বকারের শ্রেষ্ঠ এ মানুষটিকে নিয়ে কেউ কোন কটু কথা বললে মুসলমানরা অস্থির হয়ে পড়েন। তাদের হৃদয় টুকরো টুকরো হয়। ব্যাথায় কেঁপে ওঠে অন্তর। শুধু মুসলমানরাই বা কেন অন্য ধর্মালম্বীরাও রাসুল সা.-কে নিয়ে কোনরকম অসম্মানজনক বক্তব্য সহ্য করবে না। তারা মানবে না। কয়েকদিন আগেও ইউরোপে এ নিয়ে নতুন অাইন জারি কারা হয়েছে। বাক স্বাধীনতার নামে কেউ ইসলাম ধর্ম বা ইসলামের নবী রাসূল সা.কে উস্কানীমূলক বা অপমানজনক কিছুই বললে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত।

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মোহাম্মদকে (সা.) অবমাননা করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমালঙ্ঘন বলে রুল জারি করেছে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত ।

রুলে বলা হয়েছে, গঠনমূলক তর্কবিতর্কের ক্ষেত্রে মোহাম্মদকে (সা.) অবমাননার বিষয়টি অনুমতিযোগ্য সীমার অধীন। কারণ এটা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এবং ধর্মীয় শান্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এটি হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *