বইমেলায় অক্ষরের— ‘গল্পাক্ষর’

বইমেলায় অক্ষরের— ‘গল্পাক্ষর’

আদিল মাহমুদ : বাংলা সাহিত্যের যত শাখা আছে, যেমন- কাব্য, মহাকাব্য, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি, এসবের মধ্যে ছোটগল্প বয়সে সবচেয়ে কণিষ্ঠ। কারণ বাংলা সাহিত্যে ‘ছোটগল্প’ শব্দটা ব্যবহৃত হচ্ছে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর থেকে। এরআগে শুধু ‘গল্প’ বলা হত। আর আকারে বড়ে হলে ‘উপন্যাসিকা’ বলার চল ছিল। ছোটগল্পের ব্যবহার ছিল না। কিন্তু বয়সে সবচেয়ে কণিষ্ঠ হলেও ছোটগল্প অল্প সময়ে মানুষের হৃদয়ের অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এখন ছোটগল্প। ছোটগল্পকে কোনো সংজ্ঞার নিয়মকানুনে বাঁধা যায় না। এর বিচরণ বহুমাত্রিক। তারপরও রবিঠাকুর তাঁর একটা কবিতায় যা বলেছেন, সে কথাটি ছোটগল্পের প্রকৃতি সম্পর্কে প্রামাণ্য ব্যাখা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি তাঁর কবিতায় লিখেছেন— ‘ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা ছোটো ছোটো দুঃখ কথা, নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতি রাশি, প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারি দু-চারিটি অশ্রুজল। নাহি বর্ণনার ছটা, ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ, অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হয়ে হইল না শেষ।’

ছোটগল্পে মানবজীবনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয়গুলো উঠে আসে। সমাজের চিত্রগুলো সুন্দরভাবে ফুটে উঠে গল্পের ভাষায়। সহজেই মানুষের বোধগম্য হয় ছোটগল্প।

তো যাই হউক, এখন মূল কথায় আসি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ১৯’এ আসছে জনপ্রিয় ওয়েব ম্যাগাজিন ‘অক্ষর বিডি ডটকম’ থেকে ছোটগল্পের একটি সংকলন। ছোটগল্পের এই সংকলনে আছে মোট ১০টি নির্বাচিত গল্প। ১০ গল্পের প্রথম ৫টি গল্প হল এসময়ের ৫ জন পাঠকপ্রিয় অন্যতম লেখকদের গল্প। তারা হলেন- ‘কিঙ্কর আহসান, সাদাত হোসাইন, মুহাম্মদ কামাল হোসেন, তকিব তৌফিক ও কাউসার মাহমুদ।’

আর বাকি ৫টি গল্প হল ‘অক্ষর বিডি ডটকম’-এর গল্পলেখা প্রতিযোগিতার নির্বাচিত ৫ জন গল্পকারের গল্প। তারা হলেন- ‘আতিক জামান ফাহিম, রাকিবুল রকি, তামিম আব্দুল্লাহ, মুহসিন আবির ও রিয়াজ মুহম্মদ।’

গল্পাক্ষর মূলত আসছে অক্ষর বিডির উদ্যোগে, শেখ মাহমুদুল ইসলাম মিজু’র সম্পাদনায়। বইটি প্রকাশ করছে পেন্ডুলাম পাবলিশার্স। বইমেলায় পরিবেশক হিসেবে থাকছে তিউড়ি প্রকাশনি, স্টল নং- ৫৮৯।

গল্পাক্ষরের গল্পগুলো পড়ে আমার অনুভূতিটা কেমন, সেটা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবো না। তবে একজন পাঠক হিসেবে শুধু এইটুকু বলেত পারি— ‘গল্পগুলো পড়ে আমার ভেতর থেকে অদ্ভুত রকমের এক ভালালাগা কাজ করছে। নিঃসন্দেহে বলতে পারি, গল্পাক্ষরের গল্পগুলো পাঠকদের হারিয়ে নিয়ে যাবে কল্পনা জগতে। কিঙ্কর আহসানের ‘কাদের আইসক্রীম’ গল্পটি যখন পড়ি, তখন বারবার বেদনার বেনোজলে ভেসে গিয়েছি। সাদাত হোসাইনের গল্পে হারিয়ে গিয়েছি মুগ্ধতায়, তাতে কী সুন্দর বাংলাদেশের ছোট্ট একটি গ্রামীণ পরিবারের বর্ণনা তুলে ধরেছেন তিনি। এই গল্পটি পড়ে নিজেকে বাংলাদেশী বলে খুব গর্ববোধ করা যায়। মুহাম্মদ কামাল হোসেন তার গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন, বেশ্যাবৃত্তি করে পেট চালানো একটি মেয়ের পরাবাস্তব জীবনের গল্প। তার গল্পের মেয়েটি আচমকা একটি ছেলের প্রেমে পড়ে যায়, সারাদিন ছেলেটিকে কল্পনা করতে ভাললাগে তার, পরক্ষণেই সে ভাবে বেশ্যাদের প্রেমে পড়া পাপ।

এছাড়া তকিব তৌফিক ও কাউসার মাহমুদের গল্পও হৃদয়ে দাগ কাটার মতো। গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত গল্পকার রাকিবুল রকির গল্পটি সম্পুর্ণ আলাদা একটি প্লটে লেখা, তার গল্পে সে লিখেছেন মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে এক লেখকের কথা।’

আমার মনে বলে, গল্পাক্ষরের প্রতিটি গল্প পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। গল্পাক্ষরের প্রতিটি গল্পই বাঙালিত্বের রং নিয়ে লেখা। একেকটি গল্পের একেকরকম ঘ্রাণ, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। আর এই একেকতরকম ঘ্রাণ, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্পরাজ্যে আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *