ওমানের সুলতানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

ওমানের সুলতানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদের ইন্তেকালে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১১ জানুয়ারি) তিনি এক শোক বার্তায় সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শুক্রবার সুলতান কাবুস ৭৯ বছর বয়সে মারা যান। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। আরব বিশ্বের শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেছেন।

রাজত্বকাল : আরব নৃপতিদের মধ্যে ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ সবার থেকে ব্যতিক্রম। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যে কোনো রাজার চেয়ে বেশি দিন রাজত্ব করছেন। তার রাজত্বের ৪৮ বছর চলছে। তিনি ক্ষমতায় আসার আগে শুধু রাজধানী মাস্কাটেই বাঁধানো রাস্তা ছিল। কলের পানি কিংবা বিদ্যুৎও পাওয়া যেত না ওই সময়। আজ ওমানের রাস্তাঘাট দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তগুলো অবধি চলে গেছে। সবচেয়ে দূরের বসতিগুলোতেও স্কুল ও হাসপাতাল আছে। সারা দেশে ২০টির বেশি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রের মৌলিক বিধি উপস্থাপন করেন ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ। এটিই হলো ওমানের প্রথম লিখিত সংবিধান। এই সংবিধান ইসলামী আইন ও প্রচলিত আইনের কাঠামোয় বিভিন্ন অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে কোনো সরকারি শেয়ার হোল্ডিং সংস্থার কর্মকর্তা হওয়া যাবে না। এর সবচেয়ে বড় সফলতা হলো সুলতানের উত্তরাধিকার আইন বিধিবদ্ধ করা। হরমুজ প্রণালির ওপর ওমানের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে নেন ওমানের সুলতান। যা পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথে প্রায় ৩৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে ওমান সর্বদা সচেতন থাকে।

ইরাকের সঙ্গে ওমানের সুলতান একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন যখন তারা একই সঙ্গে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জাতিসংঘ জোটকেও সমর্থন দিচ্ছিলেন। ওমান ওই জোটে সৈন্য পাঠিয়েছিল এবং তাদের দেশকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের জন্য উন্মুক্ত রেখেছিল। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওমানের মজলিশ আল শূরার জন্য প্রায় ১ লাখ ওমানি নারী ও পুরুষ মিলে দুজন নারীসহ মোট ৮৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত করেন।

২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে সুলতান কাবুস ৪৮ জনকে মজলিশ আল দাউলায় নিযুক্ত করেন। এটা তাদের দেশের রাষ্ট্রীয় পরিষদ। এই পরিষদে পাঁচজন নারী সদস্যও ছিলেন। পরিষদটি ওমানের দ্বিকক্ষীয় প্রতিনিধি পরিষদের উচ্চকক্ষ হিসেবে কাজ করে। ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর মতো নারীদের পিছিয়ে রাখার পক্ষে নন। তার ব্যাপক আধুনিকায়ন প্রকল্পের ফলে দেশটি বাইরের দুনিয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশের সঙ্গে একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ওমানের সুলতানের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য হলো সব মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।

সুলতানের রাজতন্ত্র : ওমানের রাজনীতি একটি পরম রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়। ওমানের সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারের প্রধান। ওমানের সুলতানরা বংশানুক্রমে ক্ষমতায় আসেন। বর্তমানে কাবুস সাঈদ আল সাঈদ দেশটির সুলতান এবং তাকে সহায়তা করার জন্য একটি মন্ত্রিসভা আছে।

২০০০ সালের অক্টোবরে প্রায় ২ লাখ ওমানি প্রথমবারের মতো আইনসভার সদস্যদের নির্বাচিত করেন। মোট ৮৩ জন সদস্য নির্বাচিত হন এবং এদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা সদস্যও ছিলেন।

ওমানে ক্ষমতার পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই। সব ক্ষমতা সুলতানের হাতে রয়েছে। সুলতান সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। এ ছাড়াও তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের মৌলিক আইনসহ সব আইন ১৯৭০ সাল থেকে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে প্রচলিত হয়ে আসছে। সুলতান বিচারকদের নিয়োগ করেন এবং সাজা রহিত বা হ্রাস করতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *