বিদ্যুৎ বিলের অনিয়ম থেকে সমাধান চাই
ইয়াছিন নিজামী ইয়ামিন : মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশবাসী দিশেহারা দিকভ্রান্ত, তখন দেশের বাজেট ঘোষণা করায় এদেশের বোদ্ধামহলের স্বাভাবিক দৃষ্টি বাজেটে আটকে গেছে। চলছে এনিয়ে তুমুল বিতর্ক। মতান্তরের শেষ নেই। কাজেই এখন তাদের থেকে জনগণের দুর্যোগ কিংবা দুর্যোগ নিরসনের কোন প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট ভয়াবহ দুর্যোগে মানুষের আয় কমছে; বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের অন্নের সংস্থান ক্রমশ কঠিন ও জটিল হয়ে পড়ছে। কারণ এই শ্রেণীর হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, নয়তো বেতন পাচ্ছেন না কিংবা যেখানে চাকরি করছেন, সেখানে বেতন কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। চাকরিজীবীর বাইরে ছোট কিংবা মাঝারিগোছের ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্তদের সংসারে টানাপোড়া লেগে গেছে। যার কারণে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সঙ্গে জীবন যুদ্ধে টিকতে না পেরে, যারা এই শহরে বসবাসের রঙিন স্বপ্ন নিয়ে সংসার পেতেছিলেন তারা এখন বর্ণিল স্বপ্ন গুটিয়ে, সুখের শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে ছুটছেন। তাদের এই অধিকাংশের শহর ত্যাগ করার কারণ হচ্ছে, আয়হীনতা ও অন্ন যোগাড়ের দুশ্চিন্তার করুণ সময়েও পুরো বাসাভাড়া দেয়া। তাই অনেকেই রাতের আঁধারে শহর ছাড়ছেন নিরবে। আবার অনেকেই বিল্ডিং ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন টিনশেড বাড়িতে। এই যখন রাজধানীবাসীর অবস্থা, —তখনই মরার উপর খাড়ার ঘাঁ— হয়ে আসছে বিদ্যুৎ বিল। এটা কে অনেকেই অভিশপ্ত বা ভুতুড়ে বিল বলে হালকা রসিকতা করার চেষ্টা করলেও এখানে কিন্তু মোটেও রসিকতা করার সুযোগ নেই কারণ। কারণ এই দুঃসময়ে কয়েকগুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল অবশ্যই দৃশ্যমান এক সংকট ও অভিশাপ হিসেবেই আবির্ভূত হচ্ছে জনগণের ওপর।
কেন এমন বিল…? এমন প্রশ্নে কর্তৃপক্ষের অযৌক্তিক ও অমানবিক এক উত্তর আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। তারা বলছে : লকডাউনের কারণে তাদের কর্মীরা মিটার রিডিংয়ে যেতে পারছেন না। তাই শীততাপ অফিসের আরাম কেদারায় বসে অনুমানে বিল তৈরি করছেন। এটা কেমন কথা? সুস্থ মস্তিষ্কের (?) মানুষ এমন প্রলাপ বকে কিভাবে? আর যদি সত্যিই তাদের মাথা খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে তারা এখানে কেন? আমরা এর যথাযথ ও সুষ্ঠু বিচার কামনা করি।
প্রায় সকলের বিল-ই এবার কয়েক গুণ অতিরিক্ত আসছে। কেন…! যদি অনুমানেই বিল তৈরি করতে হয় তাহলে এই দুর্যোগের ক্রান্তিকালে কম কেন নয়? কিংবা আগের মাসের বিলগুলো সামনে রেখে সমন্বয় করাও কেন হল না? লোভের একটা সীমা থাকা চাই! যেখানে প্রতিদিনই প্রত্যেকটা মানুষ প্রত্যেকটা মুহূর্ত আতঙ্ক ও মৃত্যু ভয়কে সাথে নিয়ে দিন অতিবাহিত করছে সেখানে এই অনিয়মকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যায়না। এদের কে আর সুললিত ভাষায় প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী আওড়ানোর সময় নেই। এখানে ‘চোরা শোনেনা ধর্মের কাহিনি’ একথাটির বাস্তব স্ফুটন ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে কিছুদিন পূর্বে এক দৈনিক পত্রিকায় একটা কৌতুক পড়েছিলাম। এক ভদ্রলোক রাস্তার পাশ থেকে একটা ডাব খাওয়ার পর ডাবওয়ালাকে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট দিলেন। ডাবের দাম ত্রিশ টাকা, তাই বিশ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু ডাবওয়ালা ফেরত দিলেন দশ টাকা। ভদ্রলোক জানতে চাইলেন দশ টাকা কম দেওয়া হল কেন? ডাবওয়ালা যৌক্তিক কোন উত্তর না পেয়ে বললেন : ‘যা রোইদ উঠছে, মাথামুথা ঠিক নাই, পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে। কয় টাকা ফেরত দেওয়ার দরকার ছিল আর কয় টাকা দিছি, কিছুই কইতে পারমু না’ ভদ্রলোক বললেন : ‘রোদে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে ভালো কথা, কিন্তু দশ টাকা কম দিলেন কেন? দশ টাকা বেশি দিতে পারলেন না? ডাবওয়ালা বলল : ‘মাথা নষ্ট হইছে বইলা এত নষ্ট হয় নাই যে, বেশি দিমু’।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের ঠিক একই অবস্থা। তারা অনুমানে বিল বানালেও কয়েকগুণ বেশি বানিয়েছে। তাদের অনুমান শক্তি এতটা খারাপ হয়ে যায়নি যে, তারা বিদ্যুৎ বিল কম বানাবেন।মানুষের জীবন-মরণ তাদের কাছে নিতান্তই তুচ্ছ হয়ে উঠেছে পার্থিব লোভ-লালসার কাছে।
আমরা জানি, করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকার যথেষ্ট সদ্ভাব বজায় রেখে জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং জনগণের জীবনাচারকে সহজ করতে অনেক পরিশ্রম করছেন। তবে এই পদক্ষেপ উদ্যোগের ফায়দা প্রকৃত অভাবী ও প্রয়োজনগ্রস্তদের নিকট পৌঁছে না শুধু কিছু স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিদের কারণে। পেছনের একটা সময় ছিল যখন গ্যাস পানি ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীদের সাথে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তাদেরকে মারধর করা হতো, অফিস ভাঙচুর করা হতো।
আমরা চাই না সেই বিশৃঙ্খল সময়টুকু আবার ফিরে আসুক। তবে এই দুর্যোগকে অবলম্বন করে অনেকেই অনৈতিক মুনাফা লাভের সন্ধানে বিশৃংখলার দিকে খুব দ্রুতই অগ্রসর হচ্ছে। আমরা চাই সেবাদানকারী কর্মী ও সেবাগ্রহণকারী গ্রাহক; উভয়ের মাঝে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। তবে এর জন্য উভয় পক্ষের আন্তরিকতা খুবই প্রয়োজন। না হয় পেছনের ঐসময়ে ফিরে যেতে বেশিদিনও লাগবেনা, লাগবেনা কোন টাইম মেশিনও….।
লেখক : শিক্ষার্থী