গ্রাম্য রাজনীতি | মুহাম্মাদ আইয়ুব
আব্দুল গফুরের দীর্ঘ দিনের আশা, যুবকদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটা মাহফিল করার। এমনিতে ছাত্র তার উপর গরীব ঘরের ছেলে। চাইলেই কি একটা মাহফিল দেওয়া যায়? তাছাড়া আজকালকার মাহফিলের খরচ জেমস, মমতাজদের কনসার্ট থেকে কোন অংশে কম নয়! গরম, সুরেলা বক্তা না হলে মাহফিল পানসে। আর গরম সুরেলা বক্তা মানেই ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার।
আজকালের মাহফিল মানে ‘ফেলো কড়ি মাখো তেলের’ দশা। টাকা আছে তো জাঁকজমক মাহফিল নইলে পান্তাভাত। তারপরও অদম্য মনোবল আর উদ্দীপ্ত তারুণ্য আব্দুল গফুরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ছুটিতে বাড়ি এসে এলাকার যুবা তরুণদের মন মস্তিষ্ক মাহফিলের জন্য প্রস্তুত করেছে। তারপর মাদ্রাসা খোলার পর শহরে বসেই ফোনে ফোনে বক্তা ম্যানেজ করেছে। গ্রামের পরিচিত শহুরে বাসিন্দাদের বাসা বাড়িতে যেয়ে আচ্ছামত দাওয়াত দিয়ে এসেছে। অনুমান, আইডিয়া আর শহরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাহফিলের দুই মাস আগে চমৎকার পোস্টার ও বানিয়ে ফেলেছে সে।
তবে সরল মনের আব্দুল গফুর ঠিক এখানেই এসে হোঁচটটা খেলো। গ্রামের ছেলে হলেও এখানকার লোকদের নীচু মানসিকতা আর হীন রাজনীতির ব্যাপারটা সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। তবে এ যাত্রায় টের পেতে দেরি হলো না মাত্র দুইটি শব্দের কারিশমায়।
-পোষ্টারটা খুব সুন্দর হইছে, কিন্তু তোমরা মারাত্মক একটা ভুল করছ যা ক্ষমার অযোগ্য, নাহ আমি এটা মানতে পারলাম না। চৌদ্দগ্রামের সবাই জানে আমি হাজী, দলবল সহ হজ কইরগা আইছি, তোমরা কি এটা জানো না? এই গ্রামে থাকো না? ছি! ছ! ছি! এটা কেমন কথা? হোয়াট? চেয়ারম্যান সাবের নামের শুরুতে হাজী নাই! তোমরা কি আমার নির্বাচনী পোষ্টার দেখ নাই, সেখানে বড় বড় করে লেখা ছিল হাজী তৈমুর মোল্লা।
আমি তোমাদের মাহফিলে কোন টাকা দিতে পারছি না দুঃখিত।
-চেয়ারম্যান সাব! ছোড পুলাপাইন পোস্টার করছে তো বুইঝগা উঠতে পারে নাই।
-খসরু, তুমি এখানে নাক গলাবা না, একটা হজ করতে কত কষ্ট তুমি জান? এত কষ্টের পরও যদি এটার মূল্য না পাই তখন কেমন লাগে বল?
-চেয়ারম্যান সাব, কষ্টের মূল্য তো দিবেন আল্লাহ।
-কালাই! ওয়াজ শুরু কইরগা দেছ তাই না ?
-আল্লাহর টা আল্লাহ দিবে তাই বইলে তোমরা হাজীর ইজ্জত দিবে না?
কোন কথা নাই বুঝলা কালাই। আমার এলাকায় থাইকা তোমরাই কেবল এই ধৃষ্টতা দেখাইলা। সুতরাং এই মাহফিলে আমি একটা পয়সাও দিবার পারবো না।
: দিলরুবা, এগে চা আইনগা দাও।
: না চেয়ারম্যান সাব, আমাগো হগলডির চা-নাস্তা হইয়া গেছে, আমরা এখন উঠি। স্লামুলাইকুম।
লেখক : খতিব, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক