জামায়াত-শিবিরের গোপন তৎপরতা স্কুল ঘিরে!

জামায়াত-শিবিরের গোপন তৎপরতা স্কুল ঘিরে!

পাথেয় ডেস্ক ● এক আওয়ামী লীগ নেতাকে সামনে রেখে কক্সবাজারে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে গোপন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। স্কুল দুটি হল খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল।

এলাকাবাসী জানান, ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। কিছুদিন পর বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট নামে আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই দুই স্কুলের পরিচালনা কমিটি একটি। কমিটির প্রায় ১৪ জন সদস্যের মধ্যে সভাপতি হাজী এনামুল হক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। আর প্রথম সদস্য মোস্তফা কামাল স্থানীয় বিএনপি নেতা। বাকি ১২ জনের সবাই জামায়াত-শিবিরের কর্মী ও ক্যাডার। খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৬ শিক্ষকের মধ্যে দুজন হিন্দু ছাড়া অন্যরা সবাই জামায়াতকর্মী। এর মধ্যে মাস্টার ওবায়দুল হক বাবুল ও ফয়সাল নাশকতা মামলার জেলফেরত আসামি। কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ছয় শিক্ষকের মধ্যে পাঁচজনই জামায়াত সমর্থিত। বাকি একজন হিন্দু শিক্ষক।

বিষয়টি স্বীকার করে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সভাপতি এনামুল হক আওয়ামী লীগ নেতা। আর কমিটির বাকি সবাই জামায়াত সমর্থিত লোকজন।’

জানতে চাইলে সভাপতি হাজী এনামুল হক বলেন, ‘স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীর কথা ভেবে স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। তবে আমি আর মোস্তফা কামাল ছাড়া কমিটির সবাই জামায়াত-শিবিরের কর্মী। সম্প্রতি আমার কানেও এসেছে স্কুল দুটি ঘিরে জামায়াত-শিবিরের গোপন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি। নজরদারি চলছে। জামায়াত-শিবিরের খপ্পর থেকে বাঁচতে আমিও উপায় খুঁজছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ওই দুই স্কুলের দিকে তেমন কারো নজর নেই। আর খরুলিয়া হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি। অতীতে তিনবার ওই স্কুলের সামনে হামলার শিকার হন বর্তমান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। বিএনপির আন্দোলনের সময়ে ওই এলাকায় একাধিকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছিল। এমনকি দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে পাঠানোর নামে সহিংসতার সূত্রপাত হয় খরুলিয়া স্কুলের সামনে থেকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খরুলিয়া স্কুলে জামায়াতের গোপন বৈঠক হয় নিয়মিত। কর্মীদের দিক নির্দেশনাও দেওয়া হয় এখানে। দলীয় কর্মীদের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আর এসব অপকর্ম ঢাকতে সামনে রাখা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী এনামুল হককে। তাঁকে পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘খরুলিয়া এলাকা জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। সেখানে অনেক নাশকতা মামলার পলাতক আসামির বাড়ি। আলোচ্য আয়াত উল্লাহর বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতাসহ আটটি মামলা রয়েছে।’

তিনি জানান, খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল দুটি জামায়াত সমর্থিত লোকজনের বলে বিভিন্নভাবে জানা গেছে। ওই বিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের গোপন বৈঠক বা সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড চলছে কিনা সেই বিষয়ে নজরদারি চলছে।

 

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে তিন দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (দ.) মাহফিলের আয়োজন করা হয় ওই স্কুলমাঠে। কমিটির লোকজন ওই মাহফিলের আয়োজন করেন। মাহফিলে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াত সমর্থক আলেম আব্দুল কাদের জিহাদী। তিনি সরকারবিরোধী বিভিন্ন কথাবার্তা বলেছিলেন মাহফিলে। এমনকি শিবিরের স্লোগানও দেওয়া হয় সেখানে।’

এদিকে স্কুলের টাকার ভাগবাটোয়ারা ও নেতৃত্ব নিয়ে জামায়াত-শিবিরের মধ্যেও রয়েছে বিরোধ। এরই জের ধরে রবিবার সকালে জামায়াত নেতা ও খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের নেতৃত্বে দড়ি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে মারধর করা হয় জামায়াতকর্মী ও অভিভাবক আয়াত উল্লাহকে।

এ প্রসঙ্গে জহিরুল হক বলেন, ‘আয়াত উল্লাহ একজন সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতাসহ প্রায় আটটি মামলা রয়েছে। প্রায়ই তিনি স্কুলে এসে হুমকি-ধমকি দেন। রবিবারও শিক্ষকদের গালিগালাজ করেন তিনি। এক পর্যায়ে কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন ও আমার গায়ে হাত তুলেন। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা দেখে এগিয়ে এসে তাঁকে মারধর করে।’

আর আয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছেলে খরুলিয়া কেজি অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট মডেল স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। রবিবার সকালে ছেলের নতুন শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে জানতে স্কুলে যাই। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাসিক বেতন ২৫০ টাকা। আর ভর্তি ফি ১০০০ টাকা। যা গত বছর ছিল যথাক্রমে ২০০ ও ৬০০ টাকা।’

‘কাউকে না জানিয়ে কেন এতো টাকা বাড়ানো হল-এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে দড়ি নিয়ে এসে আমার হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। এরপর লাথি, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে নির্যাতন। পরে এলাকাবাসী এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’ যোগ করেন তিনি।

ওই ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ছয়জনকে আসামি করে সোমবার কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন আয়াত উল্লাহ।

খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মানুষ তৈরির কারখানার বদলে মানুষ মারার কারখানা হিসেবে গড়ে ওঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গরুর মতো একজন অভিভাবককে হাতে-পায়ে ও গলায় দড়ি বেঁধে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত।’

-কালেরকণ্ঠের একটি প্রতিবেদন অবলম্বনে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *