- ইলমের বড়ত্ব নয়, ইলমের নূর আসুক অন্তরে : মাওলানা মাহমুদ মাদানী
- বিজ্ঞানের চূড়ান্ত উন্নতি হলে, ইসলামের সাথে বিজ্ঞান মিলে যাবে: আল্লামা মাসঊদ
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম অধ্যাত্মিক রাহবার, জমিয়তে উলামা হিন্দের কেন্দ্রীয় সভাপতি, আওলাদে রাসূল মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানীর পবিত্র বুখারী শরীফের শেষ দরস প্রদানের মাধ্যমে রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত জামিআ ইকরা বাংলাদেশের দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষাসমাপনী, পুরস্কার বিতরণী ও খতমে বুখারী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বাদ মাগরিব জামিআ ইকরা বাংলাদেশ সংলগ্ন ঝিল মসজিদে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের উপস্থিতিতে—বুখারী খতমের দুআও পরিচালনা করেন মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী।
দরস প্রদানের পর ফারেগীন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, মাদরাসায় পড়াশোনা করার যে সুযোগ আপনাদের হয়েছে, আজ আলেম হয়েছেন, এজন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আমি দুআ করি, ইলমের বড়ত্ব নয়, ইলমের নূর আসুক আপনাদের অন্তরে।
আল্লাহ তাআলা যোগ্যতা দেখেন না, অন্তর দেখেন জানিয়ে আওলাদে রাসূল বলেন, যোগ্যতা কোনো বড় ব্যাপার নয়, অন্তর বিশুদ্ধ থাকাই বড় বিষয়। অন্তর বিশুদ্ধ থাকলে আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে ইসলামের বড় বড় খেদমত আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক দেবেন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কম যোগ্যতাসম্পন্ন আলেমদের দ্বারাও আল্লাহ তাআলা বড় বড় কাজ নিয়েছেন। সুতরাং আপনারা আপনাদের অন্তর পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করুন।
মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে নবুওয়তের কাজের জন্য নির্বাচন করেছেন। মুসলিম ঘরে জন্ম দিয়েছেন। দীনের ইলম শেখার জন্য মাদরাসায় আসার তাওফিক দিয়েছেন। এটা আপনাদের উপর আল্লাহ তাআলার বড় মেহেরবানী। আপনাদের বুঝতে যে, আপনারা কোনো সাধারণ মানুষ নন। আপনারা আল্লাহ তাআলার নির্বাচিত বিশেষ বান্দা। তাই আল্লাহ তাআলা আপনাদের যে জন্য নির্বাচন করেছেন, সেদিকে আপনাদের মনযোগী হতে হবে। নবুওয়তের কাজ করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে, সেই লক্ষ্যে গড়তে হবে নিজেদের।
দুনিয়াতে দুই ধরণের লোক আছে উল্লেখ করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, আমাদের দুনিয়াতে দুই ধরণের লোক রয়েছে—
এক. যারা সত্যিকারের বিরোধী
দুই. যারা না বুঝে বিরোধিতা করে
কেউ যদি না বুঝে বিরোধিতা করে, তাহলে যতক্ষণ না তাকে ভালোভাবে বুঝানো হবে—ততক্ষণ তাকে পরিপূর্ণ বিরোধী বলা যাবে না। বিরোধীতাকারী ব্যক্তিকে ভালোভাবে বুঝাতে পারাই আসল সফলতা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বিজ্ঞানীরা এক সময় বলতো, যেসব জিনিসের আকৃতি নেই, দৈর্ঘ্যপ্রস্থ নেই, সেসব জিনিসের ওজন করা যায় না, মাপা যায় না, তাই আমলনামাও মাপা যাবে না। কিন্তু এখন তারা তাদের মত থেকে ফিরে এসেছে, কারণ তারা নিজেরাই এখন বাতাস পরিমাপ করতে পারে। এজন্য বলি, বিজ্ঞানের যত উন্নতি হচ্ছে, ততো তারা ইসলামের সাথে মিলে যাচ্ছে। কারণ বিজ্ঞান চূড়ান্ত সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছালে, তারা ইসলামের সাথেই মিলবে। এজন্য বিজ্ঞানের উন্নতি ইসলামের জন্য মঙ্গলজনক।
দুআ মাহফিলে উপস্থিত সবাইকে নেক ও এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেছেন, উম্মাহের এই দুর্দিনে আমাদেরকে নেক ও এক হতে হবে। নেক ও এক হতে হলে ৩টি কাজ করতে হবে—
এক. দিলের সাথী আল্লাহকে বানাতে হবে
দুই. আমলের সাথী বানাতে হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
তিন. পথচলার সাথী বানাতে হবে সাহাবায়ে কেরাম রা.কে।
কাকরাইল সার্কিট হাউজ মসজিদের খতীব ও জামিআ ইকরা বাংলাদেশের রঈস মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফের উপস্থিতিতে খতমে বুখারী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা হুসাইনুল বান্না।
আরও পড়ুন: খতমে বুখারীকে বিদআত বলার সুযোগ নেই
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদরাতুল উলুম মাদরাসা মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ আলী, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার মহাসচিব ও জামিআ ইকরা বাংলাদেশের সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমী, খুলনা মাদানী নগর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, জামিআ ইকরা বাংলাদেশের সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান কাসেমী, মুফতি সাইফুল ইসলাম, মুফতি হামিদুল ইসলাম, মুফতি মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াইয়া, মুফতি রিয়াজুল ইসলাম, মাওলানা শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।