সুনামগঞ্জ প্রতিনিনিধি : সুনামগঞ্জের ৫০টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষের চূড়ান্ত নির্দেশনা থাকলেও ওই সময়ে মাত্র ৫০ ভাগ করতে সক্ষম হন সংশ্লিষ্টরা। পরে দ্বিতীয় দফায় ১৫ দিন (১৫ মার্চ পর্যন্ত) সময় বাড়ানো হয়। তবে এখনো দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুরে অর্ধেকের বেশি কাজ হয়নি বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। কৃষকরা এবার হাওরের ফসল রক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ অপচয়েরও অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া অনেক প্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়ায় হাওর অরক্ষিত রয়েছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে হাওর রক্ষা বাঁধের জন্য ৯৬৪টি প্রকল্প নেওয়া হয়। নতুন কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) নীতিমালায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন, অনুমোদন ও বরাদ্দ বণ্টনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) প্রায় ১২০ কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল। পানিসম্পদমন্ত্রী, পাউবোর মহাপরিচালকসহ ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার হাওরে এসে সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশনা দিয়ে গেছে। কিন্তু পিআইসি গঠনে বিলম্ব, স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কাজের গড় অগ্রগতি ৮১ ভাগ। তবে দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুরে ৬৫-৭০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ প্রকল্পেই প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন, ড্রেসিং না করা, দূর্বা ঘাস না লাগানো, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রাক্কলন অনুযায়ী মাটি না ফেলা, পুরনো বাঁধে ড্রেসিং দিয়ে বরাদ্দ লোপাট করাসহ নানা অনিয়মে জড়িয়েছে পিআইসি। ইতিমধ্যে ধরমপাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুরসহ কয়েকটি উপজেলার একাধিক পিআইসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সাবধান করে দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত বছর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সরকার কাবিটা নীতিমালা পরিবর্তন করার পর এবার বাঁধের কাজ শুরু হয়। উপজেলা প্রশাসনকে একক দায়িত্ব দেওয়ায় ইউএনওরা সংশ্লিষ্টরা ইউপি চেয়ারম্যানদের সুযোগ দেন পিআইসি গঠনের জন্য। এই সুযোগে চতুর জনপ্রতিনিধিরা হাওরের বাঁধের বদলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে একাধিক প্রকল্প নেন, যা হাওরের ফসল রক্ষার কোনো কাজে আসেনি বলে সরেজমিন ঘুরে জানিয়েছেন ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতারা।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুরে কাজ কিছুটা কম হয়েছে। প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে আমরা বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত নতুন আর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি।