পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ইয়েমেনের আমরান প্রদেশে ফিলিস্তিনি ও ইয়েমেনি পতাকে নেড়ে একটি সশস্ত্র কুচকাওয়াজ করেছে দেশটির ইরান সমর্থিত হাউছি গোষ্ঠীর আনুমানিক ২০ হাজার সমর্থক।
লোহিত সাগরের সমুদ্র পথে হাউছিদের হামলার জবাব দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ বাহিনী ঘোষণা করার সাথে সাথে সোমবার পুরুষরা মিছিল করে।
ইয়েমেনি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরাইল যদি গাজায় তাদের হামলা বন্ধ করে তবে তারা তাদের হামলা বন্ধ করবে।
লোহিত সাগরের উত্তেজনা কমাতে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাউছিদের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
হাউছি মুখপাত্র বলেন, ‘লোহিত সাগর ও আরব সাগরে আমাদের কার্যক্রম নিয়ে ওমানের মধ্যস্থতায় আন্তর্জাতিক কয়েকটি পক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।’
তিনি ওই আন্তর্জাতিক পক্ষের পরিচয় প্রকাশ করেননি। এ সময় সামুদ্রিক বাণিজ্য রক্ষার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌ টাস্ক ফোর্স ব্যবস্থার দরকার নেই বলেও মত প্রকাশ করেন।
হাউছি নেতা বলেন, আমাদের আঞ্চলিক জলসীমায় কোনো সামরিক জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ প্রবেশ করলে তাকে প্রতিহত করাকে আমরা বৈধ বিবেচনা করব। তখন তাদের জাতীয়তা খেয়াল করা হবে না।
এ সময় তাদের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের লক্ষ্যে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, হাউছিদের হামলার কারণে অনেক বাণিজ্যিক জাহাজের কোম্পানি তাদের শিপিং বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। তাই সামুদ্রিক বাণিজ্য নিরাপত্তার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন নৌ টাস্ক ফোর্স চালু করার কথা রয়েছে।
এদিকে, লোহিত সাগরে ইয়েমেনভিত্তিক হাউছিদের মোকাবেলায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন ‘অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান’-এ আরব দেশগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত যে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি দেশ তথা বাহরাইনের নাম আছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, মিসরের মতো মার্কিন মিত্রদের অনুপস্থিতি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব দেশ এই কোয়ালিশনে যোগ দেবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব দেশের অংশগ্রহণ করা বা না করা নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অব্যাহত হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে হাউছিরা।
ইরান-সমর্থিত হাউছিরা বলছে, ইসরাইল যদি গাজায় হামলা অব্যাহত রাখে, তবে লোহিত সাগর দিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কিত কোনো জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। তারা এর আগে দুটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করেছে বলে খবরে প্রকাশ।
হামাসের সমর্থনে হাউছিরা যাতে এগিয়ে না আসে, সেজন্য তাদের সাথে আপসের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু, মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইয়েমেনভিত্তিক হাউছিরা লোহিত সাগরে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানপন্থী হিসেবে পরিচিত হাউছিদের পলিটব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আল-বুখাতি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ পরোক্ষভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে লোহিত সাগরে অব্যাহতভাবে জাহাজে হামলা না চালাতে বলেছিল। কিন্তু তারা তা মানেননি। হাউছিদের মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র একটি আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গঠন করছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার মধ্যে তিনি এই ঘোষণা দিলেন।
আল-বুখাতি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব দিয়েছে যে লোহিত সাগরে হাউছিরা যদি তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ করে তবে তার বিনিময়ে ইয়েমেনে স্থায়ী শান্তির পথে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাধা দেবে না।
তিনি তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে তিনি জানান।
হাউছিদের হুমকির পর বেশ কয়েকটি বহুজাতিক জাহাজ চলাচল এবং তেল কোম্পানি লোহিত সাগর দিয়ে তাদের জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
তবে হাউছিদের মুখপাত্র জানিয়েছে, ইসরাইল ছাড়া অন্য সব দেশের জাহাজ লোহিত সাগর দিয়ে নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।
তিনি বলেন, ইসরাইল যেহেতু গাজা উপত্যকায় নৃশংস আগ্রাসন এবং অন্যায় অবরোধ চালাচ্ছে, সে কারণে তারা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সোমবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, হাউছিদের হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘একটি আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গঠন করার উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাহরাইন, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, সেশ্যালস ও স্পেন এই কোয়ালিশনে যোগ দেবে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে লোহিত সাগর এবং গালফ ও এডেনে যৌথ টহল প্রদান। এই অভিযানের নাম হবে ‘অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান।’
উল্লেখ্য, ইউএসএস কারনে, ইউএসএস স্টেথেম, ইউএসএস ম্যাসন এবং কয়েকটি ডেস্ট্রোয়ার ইতোমধ্যেই বাব আল-মানদেবের দিকে অবস্থান নিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য এই জোটে যোগ দেয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য। হাউছিদের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে রয়েছে এসব দেশের তেলক্ষেত্র। আবার হাউছিদের সাথে একটি শান্তিচুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশটি। এমন অবস্থায় হাউছিবিরোধী জোটে যোগ দিলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।
এদিকে কয়েক দিন শিথিল থাকার পর লোহিত সাগরে হাউছিদের হামলা শুরু হয়েছে। সোমবার এমটি সোন আটলান্টিক ফ্রান্স থেকে রিইউনিয়ন দ্বীপে বায়োফুয়েল পরিবহন করার সময় আক্রান্ত হয় বলে নরওয়ের ইনভেন্টর ক্যামিক্যাল ট্যাঙ্কার্স জানিয়েছে।
কোম্পানিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৌভাগ্যবশত ভারতীয় ক্রুদের কেউ আহত হয়নি, জাহাজটিও সামান্য ক্ষতি হয়েছে।’
এত আরো বলা হয়, ‘ক্রুরা এবং জাহাজটিকে সহায়তা করছে মার্কিন নৌবাহিনী। এটি নৌবাহিনীর পাহারায় এগিয়ে যাবে।’
ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে হাউছিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য তারা লোহিত সাগর দিয়ে অতিক্রমকারী জাহাজে হামলা চালাবে।
ইয়েমেন এবং ইরিত্রয়া ও জিবুতির মধ্যবর্তী বাব আল-মানদেব প্রণালীতে প্রায় প্রতিদিনই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হচ্ছে।
ফলে অনেক কোম্পানি তাদের জাহাজগুলোকে আফ্রিকা ঘুরে চলাচল করাচ্ছে। এতে করে সময় ও খরচ উভয়টিই বেড়ে যাচ্ছে।
ইনভেন্টর ক্যামিক্যাল ট্যাঙ্কার্স জানিয়েছে, তাদের জাহাজের মালিকানার সাথে ইসরাইলের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এটি পরিচালনা করে একটি সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান।
সোমবার ব্রিটিশ ওয়েল জায়ান্ট বিপি জানিয়েছে, তারাও লোহিত সাগর দিয়ে তাদের তেল পরিবহন স্থগিত করবে।
কোম্পানিটি জানায়, আমাদের জনসাধারণ এবং আমাদের হয়ে যারা কাজ করে, তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাবে।
তারা আরো জানায়, লোহিত সাগরে অবনতিশীল নিরাপত্তাগত অবস্থার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে তাদের জাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে।