ইবরাহীম তুকান: ফিলিস্তিনিদের বিপ্লব ও দেশপ্রেমের গীতিকার

ইবরাহীম তুকান: ফিলিস্তিনিদের বিপ্লব ও দেশপ্রেমের গীতিকার

 

  • আব্দুস সালাম ইবন হাশিম

ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘স্বদেশ ও ইবরাহীম তুকান’ সমার্থবোধক দুটি শব্দ। যার কবিতা থেকে ফিলিস্তিনিরা শিখেছে বিপ্লব ও দেশপ্রেমের প্রেরণা। তিনি ১৯০৫ সালে ফিলস্তিনের নাবলুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  তার কবিতার হাত ধরে সৃষ্টি হয় বৃটিশ বিরোধী আন্দলোনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ। ১৯২৯ সালে বুরাক বিদ্রহ (Buraq Uprising) এবং ১৯৩৬ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ফিলিস্তিনিদের বিপ্লবের প্রেরণা যুগিয়েছিলো।

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক কবিতাগুলির মধ্যে একটি হল ‘ আস সুলাসা আল হামরা’ (The red Tuesday) যার মাধ্যমে তিনি বুরাক বিপ্লবের শহীদ, ইব্রাহিম হিজাজি, মুহাম্মাদ জামজুম এবং আত্তা আল-জিরের দুর্দশা ও বীরত্ব প্রকাশ করেছেন। যাদেরকে বৃটিশ ম্যান্ডেট সরকার ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলো। তুকানের লেখা ‘মাওতিনী’ বা (My Homeland) কবিতাটির কয়েক দশক ধরে আরবদের মুক্ত গলায় গাওয়া একটি সঙ্গীত হয়ে উঠেছিলো। মাওতিনী..মাওতিনী.. আল জালালু ওয়াল জামালু, ওয়াস সানা’উ ওয়াল বাহা, ফি রুবাক.. ফি রুবাক লাইনগুলো আরব দেশগুলোর আনঅফিসিয়াল জাতীয় সংগীতে পরিণত হয়েছিল।

ইব্রাহিম তুকান তার জীবদ্দশায় কোনো কাব্য সংকলন প্রকাশ করেননি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর, তার শুভানুদ্যায়ীরা তার কবিতা সংগ্রহ করে এবং ‘দিওয়ান ইব্রাহিম তুকান’ শিরোনামে প্রকাশ করে। কবি ইব্রাহিম তুকানকে নিয়ে অনেক বই ও গবেষণাপত্র লেখা হয়েছে, তার মধ্যে তার বোন ফাদওয়া তুকানের লেখা ‘আখি ইবরাহীম’ (My brother Ibrahim)  উল্লেখযোগ্য।

কবি ইবরাহী তুকান কৈশর থেকে নানান শারিরীক ব্যাধিতে জর্জরিত ছিলেন। পরিপাকতন্ত্রের জটিল রোগে তিনি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। তবে এই অল্প সময়ে আরব বিশ্বকে তিনি উপহার দিয়ে যান মাওতিনী এর মতো অমর একটিদেশাত্মবোধক গান । আজও আরবের স্কুলগুলো শুরু হয় তার এই গানটি দিয়ে। রোজ সকালে আরব দেশের রেডিওগুলোতে বেজে ওঠে এই সঙ্গিতটি।

 

ইবরাহীম তুকানের বিখ্যাত সেই মাওতিনী গীতিকাটি বাংলায় পড়ে আসা যাক –

আমার স্বদেশ, ও আমার জন্মভূমি..

গৌরব, সৌন্দর্য, মহিমা এবং জৌলুশ

তোমার পাহাড়ে, তোমার পাহাড়ে।

প্রাণ, পরিত্রাণ, আনন্দ এবং আশা

তোমার বাতাসে, তোমার বাতাসে।

আমি কি দেখতে পাবো, পাবো কি দেখতে তোমায়

নিরাপদ, শান্তিময়, বিজিত এবং সম্মানিত?

দেখবো কি তোমায়? মহিমায় তুমি

তারাদের স্পর্শ করছো, পৌঁছে গেছে তারাদের মেলায়?

আমার দেশ, আমার জন্মভূমি

আমার স্বদেশ , আমার মাতৃভূমি

তরুণরা ক্লান্ত হবে না, যতদিন না তোমাকে স্বাধীন করে

কিংবা তারা মারা যায়।

আমরা মৃত্যুর সুধা থেকে পান করব

তবুও শত্রুদের জন্য হবো না

দাস কিংবা গোলাম!

তবুও চাই না, কভু চাই না

চিরন্তন অপমান।

চাই না দুর্বিষহ জীবন।

তবে আমরা ফিরিয়ে আনব

সঞ্চিত গৌরব, সিঞ্চিত মহিমা ।।

আমার জন্মভূমি, আমার জন্মভূমি

হয় অসি, নয় মসি

তর্ক নয় বা যুদ্ধ নয়

আমাদের প্রতীক, এটাই আমাদের প্রতীক।

আমাদের আত্মসম্মান, আমাদের প্রতিশ্রুতি

এবং নৈতিক দায়িত্ববোধ

আমাদের চালায়, আমাদের দোলায়।।

আমাদের গৌরব, আমাদের কৃর্তি

আমাদেরকে সম্মানিত করে

আমাদের পতাকাকে উদ্বেলিত করে ।

 হে তাকাও!

উচ্চতায়

দেখো বিজয়ী

তোমার শ্ত্রুদের উপর

জন্মভূমি, আমার জন্মভূমি।।

লেখক, আরবী সাহিত্যামোদী ও পরিচালক আত তুরাস একাডেমী

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *