গড়ে তিন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন অনুপস্থিত

গড়ে তিন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন অনুপস্থিত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা। প্রশ্নফাঁস ছাড়াও পরীক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়েও রয়েছে তাদের আপত্তি। সাড়ে তিন লাখের বেশি পরীক্ষার্থী থাকলেও গত শুক্রবার পরীক্ষায় অংশ নেয়নি দেড় লাখের বেশি। গড়ে তিনজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজনই ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি করেছেন তারা। পরীক্ষায় নানা অভিযোগ তুলে গতকাল সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছেন পরীক্ষার্থীদের এক অংশ।

সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছেন পরীক্ষার্থীদের এক অংশ। অপর দিকে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আদালতেরও দ্বারস্থ হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক প্রার্থী। গত বছর সফলভাবে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আসছে এবারের প্রথম ধাপের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে। গত শুক্রবার প্রথম ধাপে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় একযোগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপের এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন তিন লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন চাকরিপ্রার্থী। তবে কতজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তা এখনো জানায়নি অধিদপ্তর।

এ দিকে গতকাল সোমবার ঢাকায় মানববন্ধনে অংশ নিয়ে প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেন নানা অনিয়মের বিষয়ে। তারা বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় দেড় লাখেরও বেশি প্রার্থী অংশ নিতে পারেননি। একই সাথে ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ তুলে এ পরীক্ষা বাতিলের জন্য মানববন্ধন থেকে দাবি করেছেন তারা।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বরিশাল বিভাগের প্রার্থী ফাতেমা আক্তার সাথী মানববন্ধনে বলেন, কয়েক দফা পিছিয়ে হরতাল-অবরোধের মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। অথচ একই কারণে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। সমন্বিত ৭ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাও পেছানো হয়। তিনি আরো বলেন, তড়িঘড়ি পরীক্ষা নেয়ায় অনেক প্রার্থী প্রবেশপত্র ডাউনলোডের এসএমএসও পাননি। প্রবেশপত্র তুলতে না পেরে অনেকে পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারেননি। আবার পরীক্ষায় প্রক্সিসহ ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে। এটা গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা আইনগতভাবে এ পরীক্ষা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিটও করব।

এর আগে সকালে আন্দোলনকারীরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বরাবর পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের পরীক্ষায় মোট প্রার্থী ছিল তিন লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন। হরতাল, অবরোধ ও বৈরী আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে দূরপাল্লার গাড়ি, বিভাগীয় গাড়ি, রেলের টিকিট না পাওয়ায় ১ লাখ ৫৮ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। অনেক প্রার্থীর আবেদনের সাথে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে পরীক্ষা সংক্রান্ত এসএমএস না যাওয়ার কারণে পরীক্ষা সম্পর্কেও জানতে পারেননি। যার কারণে তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারেননি।

আবেদনে আরো বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের তথ্যানুযায়ী-পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নফাঁস, উত্তরপত্র জালিয়াতি ও বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতচক্র। এতে নিয়োগ পরীক্ষায় চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের পরীক্ষা বাতিল করে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ জানান তারা।

এ দিকে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আইনি পথেও হাঁটছেন প্রার্থীদের একটি অংশ। গত রোববার তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তবে আদালত তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ পূর্ণাঙ্গ নিয়ম মেনে আবেদন করার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে তাদের প্রতিনিধিদল ও আইনজীবী প্রস্তুতি নিয়ে রিট আবেদন করতে হাইকোর্টে যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে এক লাখ ৫৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি, এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। নিয়োগ পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের পরিচালক মনীষ চাকমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপপরিচালক বলেন, সংখ্যাটা ঠিক কত তা যারা তত্ত্বাবধানে ছিলেন তারা বলতে পারবেন। আমি শুনেছি, এক লাখের বেশি অনুপস্থিত ছিলেন। সেটাও নির্দিষ্ট করে বলার মতো তথ্য আমার কাছে নেই। এক লাখ ৫৮ হাজার প্রার্থী পরীক্ষা অংশ নিতে পারেননি, এটা কিভাবে তারা নিশ্চিত হলেন। মানববন্ধন চলাকালে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে জবাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ফাতেমা আক্তার সাথী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আমরা এ তথ্য জেনেছি। এটা সঠিক। অবশ্য এর আগে পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে রংপুর বিভাগের ৯৬ জন এবং বরিশাল বিভাগের ২৮ জন। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *