প্রসঙ্গ মুফতিয়ে আজম; কেমন নেতৃত্ব চাই? ॥ যারওয়াত উদ্দীন সামনূন
এক.
মুফতিয়ে আজম তথা দেশের একজন জাতীয় মুফতি নির্ধারণের একটা দাবি উঠেছে বেশ জোরেশোরে। তরুণরা মতামত দিচ্ছে, পিছিয়ে নেই প্রবীনরাও। কেমন হবেন তিনি?
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বলে নেই, এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পক্ষে আমি নই। কিন্তু যদি হয়, তবে এই পদ ছাড়াও সামগ্রিকভাবে কেমন নেতৃত্ব চাই আমি – এ নিয়েই লিখছি।
সত্য বলতে কী, কৈশোর থেকেই আমি বিষয়টা দেখছিলাম, মানুষকে তার মতই আরেকটি মানুষকে কী সহজেই বিভ্রান্ত করে ফেলে। সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ হয়েও মানুষের কী অসহায় আত্মসমর্পণ, বুদ্ধির দৈন্যতা, মেধার স্থবিরতা – এসব কে আমার স্রষ্টার মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যের বিপরীত মনে হতো। তখন থেকেই আমি ঠিক করে ফেলি, কেউ যেন আমাকে আমার নিজের বুদ্ধি-বিবেকের বাইরে পরিচালিত না করতে পারে।
কিন্তু নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে বিশেষত ধর্মীয় ক্ষেত্রে পথ চলতে গেলে তো আবুল আলা মওদুদীর অবস্থা হবে। আর তাই মাদরাসা শিক্ষা সমাপনের পর আমি নিজের ‘চিন্তা ও সিদ্ধান্ত’ সমর্পনের জন্য এমন একজনকে খুঁজতে থাকি…. কাকে?
১. যার থাকবে অগাধ জ্ঞান।
ধর্মীয় তো বটেই, পাশাপাশি সমাজের অধিভুক্ত বিষয় ও সমাজের অধিবাসীদের সম্পর্কে তাঁর পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। সমাজের অধিভুক্ত বিষয় যেমনঃ অর্থনীতি, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও দর্শন ইত্যাদি সম্পর্কে জানাশোনা।
সমাজের অধিবাসী মানুষের মন ও মানসিকতা সম্পর্কে জানাশোনা থাকা। তাদের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানা থাকা। সমাজের মানুষের আগ্রহের বিষয়বস্তু যেমন, সাহিত্য, খেলাধুলা ইত্যাদি কোন একটা সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য ও দক্ষতা তাঁর থাকতে হবে। অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত জানাশোনা।
২. খুবই উঁচু স্তরের পর্যবেক্ষণ শক্তি তাঁর থাকতে হবে।
৩. প্রবল শক্তিশালী ও হিমালয়সম ব্যক্তিত্ব থাকা।
উদাহরণত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলা যায়। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তাঁকে খুন করতে আসার পরও, সদ্যই কিছু মানুষকে খুন করার পরও, মানুষ খুন করতেই ট্রেনিং পাওয়া খুনীর তাঁর সামনে এসে অস্ত্র নামিয়ে ফেলা। ২য় জনও যদি তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করতো, তবে সেও গুলি চালাতে পারতো না। ধর্মীয় ব্যাখ্যার প্রয়োজন, নইলে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গাছের নিচের ঘটনাটি দিয়েও উদাহরণ দেয়া যেত। ব্যক্তিত্ব এটা নেতৃত্বের আবশ্যকীয় গুণ।
এই সেদিন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের সাথে হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ আস’আদ মাদানী সাহেব ও দেওবন্দের মুহতামিম সাহেব সহ আলেমদের (দামাত বারাকাতুহুম) ভিডিও কনফারেন্সটি দেখুন। অনেক প্রশ্নের সমাধান আপনি পাবেন, যদি পর্যবেক্ষণ শক্তি থাকে।
৪. খুব সহজেই প্রভাবিত হওয়ার দোষ না থাকা।
একটা বই বা একটা বক্তৃতা শুনেই কোন বিষয় বা ব্যক্তির প্রতি সুধারণা বা ভক্তি চলে না আসা। এটা অত্যন্ত বিশ্রি একটা জিনিস। সেই সাথে এটা ব্যক্তিত্বহীনতার আলামতও। চিন্তার স্থিতিশীলতা না থাকার ফলে এটা ঘটে।
৫. ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা
স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি উঁচু স্তরের প্রবলেম সলভিং স্কিল থাকতে হবে। যদি উত্তর গেইটে হাঙ্গামা না বাঁধান, তবে একটা উদাহরণ দেই।
নাহ, দেবো না। কেবল সেই একটা রাতকে উপজীব্য করে জম্পেশ একটা থ্রিলার লিখে ফেলা যায়। ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা কী? উত্তর দিয়েছেন হযরত মাওলানা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ (নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু) তাঁর হাতে গড়া শিষ্য মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে, “তিনি তো এখন বাতাসে গিঁট দিতে জানেন”।
৬. যেকোন ধরণের প্রভাবকের উর্ধ্বে উঠে স্বচ্ছ ভাবে চিন্তা করার সক্ষমতা থাকা।
একজন নেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণে নানা কিছু তাঁর সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। গোষ্ঠীপ্রীতি, জনগণের ভাবাবেগ – এসবের উর্ধ্বে উঠে তাঁকে স্বচ্ছ ভাবে চিন্তা করতে হবে। ‘স্বচ্ছ চিন্তার সক্ষমতা’ এটা আসলে চেষ্টা করে খুব একটা অর্জন করা যায় না, যদি না ছোটবেলা থেকেই চর্চা থাকে, নইলে এটা স্রেফ আল্লাহ্ তা’আলা যদি ভাগ্যে রাখেন তবেই পাওয়া যায়।
৭. অসাধারণ বাগ্মীতা।
মরে রাখবেন, তাঁকে নেতৃত্বস্থানীয় আলেমদের কিছু বুঝাতে হবে না। তাঁরা বুঝেন বলেই তিনি আজ মুফতিয়ে আজম, অথবা জাতীয় নেতৃত্বের অধিকারী। তাঁকে বুঝাতে হবে সাধারণ আলেম ও জনসাধারণকে। ১ নং পয়েন্টের তৃতীয় অংশটি এ ক্ষেত্রে তাঁকে সাহায্য করবে, ‘সমাজের অধিবাসী মানুষের মন ও মানসিকতা সম্পর্কে জানাশোনা থাকা’।
৮. যে কোন বিষয় ‘তলিয়ে দেখার’ অভ্যাস থাকা।
এটা যেকোন মানুষের, যে কথা বলা শিখেছে, তারই থাকার কথা। এটাকে প্রায় মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয় ধারণের যোগ্যতা বলে চিহ্নিত করা যায়। অথচ এই সাধারণ গুণটাই আমাদের হুযুর সমাজের মাঝে অনুপস্থিত।
৯. একপাক্ষিক চিন্তা ও দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত দেয়ার প্রবণতা না থাকা।
এ ক্ষেত্রেও একই কথা, এটা মানুষের আবশ্যিক গুণ। হযরত দাউদ (আলা নাবিয়্যিনা ওয়া আলাইহিস সালাম) এর ঘটনাটা আরো উঁচু স্তরের। তবে ছোটখাটো বিষয়ে এসবের চর্চা না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পা পিছলে যাবেই।
১০. বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির কমপক্ষে ৩ টি (হজ্জ-ওমরা ব্যতিত) মুসলিম প্রধান দেশ ও ২ টি (ভারত ছাড়াও) অমুসলিম প্রধান দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
১১. সামান্য সময়ের জন্য বা কোন একটা ইস্যুতে হলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছাকাছি জীবনে একবারের জন্য হলেও অবস্থান করা।
এটা ‘জাতীয় নেতার’ স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই অর্জিত থাকতে হবে। শুধু এটা না, সবগুলো পয়েন্টই। একটা দেশ কিভাবে চলে, তা জানা না থাকাটা আমাদের কওমী অঙ্গনের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।
১২. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উঁচু স্তরে যোগাযোগ থাকা।
‘গোষ্ঠী প্রধান’ আর ‘জাতীয় নেতার’ মাঝে এই পয়েন্টটাই মূল পার্থক্য গড়ে দেয়। এর ফায়দা ও প্রয়োজনীয়তা বলে বুঝানোর মত জিনিস না। এর গুরুত্ব বুঝতে শায়খুল হিন্দ (রহ.) এর কোন একটা জীবনী পড়লেই তা আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
তবে ‘প্রাসঙ্গিকতার’ খাতিরে একটা উল্লেখ করি, এতে যেকোন ইস্যুতে পর্দার অন্তরালে মূল ঘটনা জানার সুযোগ থাকে। ফলে ৮ নং পয়েন্টের ‘তলিয়ে দেখা’ ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। যে সঠিক সিদ্ধান্ত আবার জমহুর মানুষের মনপূত হয় না সাধারণত। কারণ তাদের সামনে পর্দা থাকে, পর্দার আড়ালের খবর তাদের কাছে পৌঁছে না। তবে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে যখন ধীরে ধীরে পর্দা অপসৃত হয়ে আসে, তখন সেই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
১৩. সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস বা মেরুদণ্ড।
একজন নেতাকে নানা সময়ে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যে সিদ্ধান্তের পেছনে জাতির বেঁচে থাকা থেকে শুরু করে সাধারণ সাফল্য পর্যন্ত নির্ভর করে। অথচ জাতি এটা জানে না, উল্টো আরো কখনো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় প্রাণ দিতে পর্যন্ত প্রস্তুত থাকে। এ সম্পর্কে যেকোন মাদরাসা ছাত্র অবগত। ইতিহাসে এর ভুরিভুরি নজীর রয়েছে। আমার সবধরণের সব যোগ্যতা থাকলো, কিন্তু উঁচু পদে বসে জনগণের মর্জি মাফিকই সিদ্ধান্ত দিলাম, এর কী ফায়দা? এই প্রসঙ্গে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. এর একটা কথা উল্লেখ করি, তিনি বলেছিলেন, ‘নেতা হবেন এমন একজন, যিনি যুগকে প্রবাহিত করবেন, নিজে প্রবাহিত হবেন না’।
১৪. বয়স ৪০ এর উর্ধ্বে ও ৮৫ এর নিচে থাকা
তবে অন্যসব কিছুর সাথে ‘স্বচ্ছ চিন্তা’ করার দারুণ সক্ষমতা ও বিপুল ‘অভিজ্ঞতা’ থাকলে কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ধরা যায়।
জাতীয় পর্যায়ের একজন আলেম নেতার এ সমস্ত গুণাবলী থাকলেই কেবল তাঁকে মানা যায়। সবধরনের ধর্মীয় অবস্থান যেমন ইলম, তাকওয়া ইত্যাদির সাথে ‘কমপক্ষে’ উপরোক্ত গুণাবলী কারো থাকলে, নিজের বিদ্যাবুদ্ধির বাইরে গিয়েও তাঁকে অনুসরণ করা যায়। সেই সাথে যোগ হবে তাঁর সম্পর্কে কিছু প্রশ্নোত্তরঃ
১. তাঁর ছাত্র জীবন কেমন ছিলো?
২. তিনি কেমন পরিবার ও পরিবেশ থেকে এসেছেন?
৩. দেওবন্দের ছাত্র কি না?
৪. তাঁর উস্তাযদের তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য কী?
৫. তিনি কাকে আদর্শ মানেন?
৬. তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ কি?
৭. তিনি কার হাতে গড়ে উঠেছেন?
৮. তাঁর দূরদর্শিতা কতটুকু? উল্লেখযোগ্য কোন ইস্যুতে ইতোপূর্বে তাঁর দূরদর্শীতার প্রমাণ মিলেছে কি না?
৯. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি দশ বছর আগে কি বলেছিলেন আর এখন কি বলছেন? অর্থাৎ, তাঁর পল্টি দেয়ার অভ্যাস আছে কি না?
সহু সেজদা দেয়াটাকে মহান করে দেখার কিচ্ছু নেই। হ্যাঁ, প্রমাণিত সত্যের পরও সহু সেজদা না দেয়াটা মূর্খতা ও অযোগ্যতা। সহু সেজদার অর্থ হচ্ছে, তিনি প্রথমে যে কথা বলেছেন, যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ভেবেচিন্তে নেন নাই। এই যেমন, মাওলানা সা’দ সাহেব যদি ভেবেচিন্তে কথা বলতেন, তবে কি আর আজকে তাঁর রুজু করতে হতো? এই যে বাংলাদেশের কওমী আলেমরা উঠতে-বসতে সহু সেজদা দেন, এর কারণ কী? তারা প্রথম বক্তব্য বা সিদ্ধান্তটা ভেবেচিন্তে যাচাই করে, তলিয়ে দেখে, জ্ঞান-বুদ্ধি খাটিয়ে নেন নাই। তাই থুক্কু দিতে দিতে জীবন পার, জাতিকে নেতৃত্ব দিবেন কখন?
এই কঠিন ছাঁকনিতে ছেঁকে গোটা বাংলাদেশে মাত্র একজন আলেমকেই পেয়েছিলাম। এখন যাচাই করছি আরেকজনকে, দেখা যাক কতদূর কী হয়!
দুই.
তবে যাচাইয়ের সবচেয়ে সহজ সূত্র হচ্ছে ১২ নং পয়েন্টটা। নেটওয়ার্কিং, যোগাযোগ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাব। যার এটা আছে, তাঁর বাকি সবগুলো এমনিতেই আছে। কারণ উপরের কোন একটা পয়েন্টের অনুপস্থিতি থাকলেও, কোন একটা প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তর আসলেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে কেউ কাউকে গণ্য করবে না।
মনে রাখবেন, নেতৃত্ব মূলত সমাজের শিক্ষিত ও অগ্রসর জনগোষ্ঠীর আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করে। সমাজ, একটা চেইন অভ ট্রাস্ট মেনে চলে।
ধরুন, আপনার বাসার দারোয়ান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে। তাঁকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায়। কেন? এই বেচারার তো চা স্টলে উজির-নাজির মারা ছাড়া (আল্লাহ্ ক্ষমা করুন, আমি তাঁকে খাটো করছি না। কেবল আল্লাহ্ জন্ম দিয়েছেন বলে, নইলে আমার স্থলে সে, আর তাঁর স্থলে আমি আজ থাকতে পারতাম।) তাঁর তো যোগ্যতা নেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবে ভাল আর কে খারাপ তা নির্ণয়ের। এখানেই এই আস্থার শেকলটা কাজ করে।
তাঁর আস্থা এলাকার পরিচিত সচেতন ‘বড় ভাই’ এর উপর। সে একটা দল করে, কারণ দলের নেতা ভাল মানুষ। সেই সূত্রে এমপি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। যেই এমপি আসলামুল হকের মত, ডা. আব্দুর নূর তুষারের মত কঠোর সমালোচকরা যার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়। তাঁর ভরসা হচ্ছে শেখ হাসিনার উপর। কেন? কারণ তিনি যোগ্য নেতৃত্বের অধিকারী, যে যোগ্যতা বিচারের যোগ্যতা আসলামুল হকের আছে।
অন্যভাবে বললে, এই যে আপনি মাদরাসার ছাত্র। পান থেকে চুন খসলে উত্তর গেইটে ছুট লাগান, কারণ আপনার আস্থা আপনার নিজের উস্তাযের উপর। তাঁর আস্থা দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের উপর, যাদের একজনেরও জাতীয় নেতা হওয়ার যোগ্যতা নেই। সেখানে গিয়ে আপনি দেখবেন সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে। কেন? কারণ এই আলেমদের আস্থা যাদের উপর, তাদেরকে মামুনুল হক খুশী রাখতে পেরেছেন। এমন না যে, সরাসরি সবার আস্থা তার উপর, মাঝখানে চিকন বুদ্ধির কেউ কেউ আছে। উপস! স্পর্ষকাতর বিষয়। এর বেশী বলা যাবে না। কেউ আপনার মাথা বিক্রি করে চললে তাতে আমার কি! আমি তো আপনাকে সচেতন থাকতে, বুদ্ধিমান হতে বলেছিলামই!
সে যাক, আপনার নেতৃত্ব বিচার করবে সমাজের শিক্ষিত, অগ্রসর ও অভিজ্ঞ এলিট শ্রেণী তথা সুশীল সমাজ। সুশীলতা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও হতে পারে। আর তাই লক্ষ্য করবেন, যদি কোন দেশে সামরিক শাসন চলে, তখন সুশীলদের কদর বেড়ে যায়। কারণ গণতন্ত্রের অভাবে সেই চেইন অভ ট্রাস্ট তখন কার্যকর থাকে না। জনতার আস্থা তাই সামরিক সরকারকে সরাসরি অর্জন করতে হয়, দাম বেড়ে যায় গালফোলা ডক্টরদের। প্রসঙ্গত, পেট্রোল বোমাবাজি আর দেশের শত্রু যুদ্ধাপরাধী জামায়াতীদের আশ্রয় দিয়ে বিএনপির পুরো দলীয় আস্থার শেকল ধ্বসে পড়েছিলো। গেলবার নির্বাচনে বিএনপির তাই জনমানুষের আস্থা অর্জন করতে স্বৈরশাসকদের মতই সেই সুশীলদের আশ্রয় নিতে হয়েছিলো।
বলছিলাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের কথা। একজন জাতীয় নেতার কেমন যোগাযোগ থাকতে হবে? প্রশ্ন হতে পারে এটাও, বাংলাদেশের একজন কওমী মাদরাসার হুযুরের দ্বারা আসলেই কি সম্ভব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উঁচু স্তরে প্রভাব বিস্তার ও যোগাযোগ রাখা?
হ্যাঁ, সম্ভব। জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে। আমি ৩ টা উদাহরণ দেবো, তবে দুটোর ক্ষেত্রে ঝেড়ে কাশতে পারবো না।
১লা ডিসেম্বর ১০১৮-তে বাংলাদেশের জমহুর আলেমদের নির্বুদ্ধিতা ও নিজের ছাত্রদের টয়লেট পেপার মনে করার কারণে টঙ্গীতে মুসলমানদের রক্ত ঝরার পর পরিবেশ খুব উত্তপ্ত ছিল। মুহুর্মুহ সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছিল। নির্বাচনের কারণে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। আমি কি কোন ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছি? হ্যাঁ, মামুনুল হকরা ‘গাছেরটাও খাবো তলেরটাও কুড়াবো’ নীতিতে বিশ্বাসী।
সে যাক, এর সপ্তাহ খানেক পর হঠাৎ একদিন ফেইসবুক সরগরম। কী হয়েছে? দেওবন্দের মাকবারায়ে কাসেমীর দিকে হযরত মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব দা.বা. কে দেখা গিয়েছে। মুহুর্তেই তোলপাড়। কারণ সাউন্ড গ্রেনেডকে বাজারজাত করা হচ্ছিল ‘মেইড ইন দেওবন্দ’ স্টিকার লাগিয়ে, অথচ ঘটনা দেখা যাচ্ছে উল্টো!
নানা জন নানা ব্যাখ্যা বাজারে আনছিলেন। আমি সেসব দেখছিলাম আর হাসছিলাম। এরা নাকি হবে একদিন জাতির কান্ডারী! এরা নাকি শতাব্দী শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান শায়খুল হিন্দের (রহ.) মানসপুত্র! এরা নাকি মাঝেমধ্যেই মাওলানা মাহমুদ মাদানী (দা.বা.) কে খালি চোখে সামনাসামনি দেখার সুযোগ পায়!
একটা বুদ্ধিমান ছেলে কি করতো? সে ভাবতো। গভীর ভাবে চিন্তা করতো। ব্যক্তি মাওলানা ফরীদ সাহেবের জীবনটাকে উল্টেপাল্টে দেখে নিতো। সেই মুহুর্তে তাঁর মাথায় টুপ করে নিউটনের আপেল পড়তো। সে উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যেতো খোঁজ নিতে যে, দেওবন্দ এলাকায় ঢুকে সর্বপ্রথম মাওলানা ফরীদ সাহেব কোথায় গিয়ে থাকতে পারেন। সোজা চলে গেছেন মাকবারায় কাসেমীতে, তা তো হতে পারে না।
সর্বপ্রথম সে হয়ত মাদানী মঞ্জিলে খোঁজ লাগাতো। হয়ত জানতে পারতো যে, হযরত মাওলানা মাহমুদ মাদানী (দা.বা.) তখন দেওবন্দে নেই। এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে সে সিনিয়র উস্তাযদের খোঁজে নামতো। সেই মুহুর্তে তাঁরা কে কোথায় ছিলেন। বুম! ( ওহ, এটা সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হওয়ার আওয়াজ!)
সে আবিষ্কার করতো, পদ ও দায়িত্বশীলতার দিক থেকে দারুল উলূম দেওবন্দের প্রথম তিনজন সম্মানিত উস্তাযগণ লম্বা সময় কোথায় যেন একসাথে ছিলেন। আরেকটু খোঁজ নিলেই…
নাহ! জাতির ভবিষ্যত কাণ্ডারীরা এরচেয়ে বরং কম্বলের নিচে শুয়ে দুলাইনের একটা পোস্ট দিতেই স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করবেন।
সে যাক, পুরো মুসলিম বিশ্বে বড়জোর টেনেটুনে হয়ত ৪-৫ জন আলেম আছেন, যারা স্বশরীরে উপস্থিত না হয়েই এমন মহা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রচন্ড রকমের ব্যাস্ত মানুষদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন। তাও যখন সেই আলেমের দেশে তাঁকে নিয়ে দেওবন্দকে জড়িয়ে ঝামেলা পাঁকাতে চাচ্ছে একদল। যারা ভাবেন যে, বাংলাদেশের কোন খবর দেওবন্দে পৌঁছায় না, তারা কি এখনো কবুতর দিয়ে চিঠি পাঠানোর যুগে বাস করেন? এই হলো ‘আন্তর্জাতিক প্রভাবের’ প্রথম উদাহরণ। যেহেতু মুসলিম জাতীয় নেতা খুঁজছি, তাই বিশ্ব মুসলিমের সবচেয়ে আস্থার জায়গাটি নিয়ে প্রথমে বলা।
তারপর ধরুন, একজন জাতীয় নেতার বৈশ্বিক যোগাযোগ হতে হবে প্রচন্ড মজবুত। তাঁর দেশে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। উইকিলিকসের কল্যাণে আজকাল সবাই জানে, একটা দূতাবাস কেবল একটা বিল্ডিং নিয়েই বসে থাকে না। আপনার ব্যক্তিগত অবস্থানের চেয়ে দূতাবাসের উপরই একটা দেশ আস্থা রাখবে। বিশেষত এই গ্লোবাল ভিলেজ বা ‘এক বিশ্ব এক গ্রাম’ তত্ত্বের যুগে বৈশ্বিক যোগাযোগের গুরুত্ব বুঝানো বাতুলতা। সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশে কূটনৈতিক যোগাযোগ কে কেন্দ্র করে এক ধরণের নোংরা বা ডার্টি গেম খেলা হয়। সমস্যাটার শুরু বাংলাদেশে সামরিক শাসন শুরুর কাল থেকে। তাই আমি সম্পূর্ণ বিপরীত মুখি দুটো রাষ্ট্রের উদাহরণ দিচ্ছি।
একজন জাতীয় নেতার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কেমন প্রভাব থাকতে হবে? কয়েক বছর আগের কথা। মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা. যাচ্ছেন এক মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে। তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে সেদেশের পাশের দেশটির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ এলো, তিনি যেন এক ফাঁকে সীমান্ত পেরিয়ে সেদেশেও কিছু প্রোগ্রামে যোগদান করে আসেন। দেখা গেল সুপরিচিত মুসলিম প্রধান দেশটির ভিসা হচ্ছে একক প্রবেশাধিকার সম্বলিত। যেদিন সকালে ভিসা নেয়া, সেদিন বিকালেই তাই রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ করে আগের ভিসা ক্যান্সেল করিয়ে নতুন করে মাল্টিপল ভিসা নেয়া হয় সেদিনই। অবশ্যই দেশটি পথের ফকীর না যে, তাঁর পাশের দেশে প্রবেশ করে আবার ফিরে আসার সুবিধা দিতে এই হ্যাপা সামলাবে, তার কোন জ্যাত্যাভিমান থাকবে না।
সাগর-মহাসাগর পেরিয়ে এক অমুসলিম প্রধান রাষ্ট্র। তিনি যাবেন কিন্তু তাঁর সহযাত্রীদের সেদেশের ভিসা নেই। রাষ্ট্রদূতকে জানানো হলো, ৩ দিনের ভেতর একাধিক বছরের মাল্টিপল ভিসা চলে এলো সবার নামে। এতোটাই প্রভাব থাকতে হয় একজন জাতীয় নেতার।
এ তো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, কিন্তু বিদেশী রাষ্ট্রের জনসাধারণের মাঝেও তো প্রভাব থাকতে হবে। যেমনটা এদেশের অনেকে পারলে জাস্টিন ট্রুডোকে গিয়ে জাল ভোট দিয়ে আসে, যদিও নিজের দেশে লাইন ধরে বাসে উঠতেই তারা রাজি না। এক কথায় এর উত্তর, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা ছাড়া দেশের বাইরে সমস্ত রাষ্ট্রে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দা.বা. এর সফর হয়েছে স্থানীয় আমন্ত্রণে, প্রবাসী বাংলাদেশীরা সেই সুযোগে তাঁর প্রোগ্রাম নিয়েছেন। আমার তো ধারণা, একসময় বাংলাদেশের চেয়ে তাঁর মুতা’আল্লিকীনের সংখ্যা ইংল্যান্ডে বেশি ছিল। কারণ ফিদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানী (নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু) তাঁকে সেদেশের মানুষের সামনে হাতে ধরে স্থানে স্থানে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
কথা হচ্ছিল, বাংলাদেশের একজন কওমী মাদরাসার হুযুরের দ্বারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উঁচু স্তরে প্রভাব ও যোগাযোগ রাখা আদৌ কি সম্ভব কি না তা নিয়ে। এরই উদাহরণ এতোক্ষণ দেখালাম। জেনে রাখা ভাল, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. কিন্তু আপনার মতই আপাদমস্তক একজন কওমী মাদরাসার হুযুর। এতো সাফল্যের গল্প শুনে ভাববেন না যে, মাওলানা তকী উসমানী সাহেবের মত তাঁরও বুঝি সাধারণ শিক্ষার ডিগ্রী আছে। এর মানে হচ্ছে, আপনার দ্বারাও সম্ভব এই স্তরে পৌঁছা।
কেবলমাত্র নিজের বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে তিনি আজকের এই অবস্থানে। অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান একবার এক টকশোতে বললেন, কওমী মাদরাসার এমন আলেমও আছে, যাদের সাথে বিতর্ক করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরাও পারবেন না। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব বক্স রিপোর্ট করেছিলো। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম তাঁর এই মন্তব্য পড়ে। কারণ নিজে কওমী মাদরাসার ছাত্র হয়েও এমন আলেম-‘দের’- খোঁজ জানি না। এর বহুদিন পর, একটা বিশ্লেষণধর্মী রচনা তৈরী করতে ঘাঁটাঘাটি করছিলাম, এক সূত্রে ইউটিউবে ৫১ মিনিটের এক টকশো দেখতে হলো। হঠাৎ দেখি, এই সেই টকশো যেখানে ড. সলিমুল্লাহ খান এই মন্তব্য করেছেন। এবার আমার বিস্ময় কাটলো, কারণ তিনি তাঁর এই মন্তব্যে উদাহরণ দিয়েছেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. কে দিয়ে। যে আলাপে তিনি তাঁর সাথে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ (রহ.) ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদাহরণ টেনেছেন। ভুলটা তিনি এখানেই করেছেন, একজনকে দিয়ে তিনি গোটা অঙ্গনকে বিচার করেছেন। ভেবেছেন, এমন শত শত জ্ঞানী বুঝি এই অঙ্গনে আছে। (লেখার শেষে ড. সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্যের লিংক সংযুক্ত)
তবে তাঁর আজকের অবস্থানে পৌঁছতে ছোট বেলা থেকেই মেহনত শুরু হয়েছিল। উপরের ১৪ টা পয়েন্টের যেসব জন্মগত অর্জন হওয়ার, সেগুলো আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে দান করার পর বাকিগুলো অর্জন করতে তাঁর উস্তাযগণ তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন সাহেব (নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু) তাঁর লেখা বাংলা বই নিজে উর্দূতে অনুবাদ করে ছাপিয়েছেন। তাঁর পরীক্ষার উত্তরপত্র পাকিস্তানে হযরত মাওলানা ইউসুফ বান্নুরী সাহেব (নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু) এর কাছে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি পাকিস্তানে গিয়ে পড়তে পারেন। হযরত মাওলানা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ সাহেব (নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু) তাঁকে নিজে সাথে করে নিয়ে গিয়ে দেওবন্দে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছেন। হুযুরের সহপাঠী তৎকালীন উস্তাযকে বলে তাঁর একার জন্য কামরা বরাদ্দ করা, তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি জানিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস আদায় করে দেশে ফিরেছিলেন। আর তাঁর সহপাঠীরা তো, যেসব বর্ণনা আমি শুনেছি, এর ভিত্তিতে বলা যায় তাঁকে উস্তাযের মত খেদমত করতেন। দুঃখিত পাঠক, পূর্বে আপনাকে আশা দেখালেও এখন আশাহত করতে হচ্ছে, আপনার দ্বারা এই স্তরে পৌঁছা সম্ভব না।
তাই আপনি যেটা করতে পারেন, আপনার পরিচিত এমন কোন অতুলনীয় মেধাবী কিশোর থেকে থাকলে তাঁকে পথপদর্শন করতে পারেন। উম্মতের দিকে তাকিয়ে তাঁর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন। আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ.) ও নিকট অতীতের শায়খুল হিন্দ থেকে শুরু করে উলামায়ে দেওবন্দের জীবনের আলোকে সেই কিশোরের জন্য একটা গাইডলাইন তৈরী করে দিতে পারেন। উপরে যে কয়টা পয়েন্ট উল্লেখ করেছি, এসব তাঁদের জীবনে থেকেই নেয়া। এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চর্চা হচ্ছে, স্বচ্ছ ভাবে চিন্তা করা ও প্রশ্ন করতে শেখা।
তিন.
যে করোনা পরিস্থিতি ‘মুফতিয়ে আজম’ নির্ধারণের প্রস্তাব সামনে এনেছে, সেই পরিস্থিতিই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা কতটা অযোগ্য। দুনিয়া বিমুখ হাটহাজারীর মুফতি আব্দুস সালাম সাহেব (দা.বা.) থেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রিয়ভাজন মুফতী আব্দুল মালেক সাহেব পর্যন্ত, প্রত্যেকেই ব্যার্থ।
মুফতি আব্দুস সালাম সাহেব (দা.বা.) এর ফতওয়াটি দেখলে তো গলার দড়ি দিতে আপনার মন চাইবে কওমী অঙ্গনের অসচেতনতা ও অযোগ্যতা উপলব্ধি করে, আর এদিকে পাকিস্তান থেকে ভয়েজ মেসেজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্য নেই মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব ও তার উপদেষ্টা মণ্ডলীর। কোনমতে একটা সিদ্ধান্ত নিলেও পাকিস্তান থেকে ভয়েজ মেসেজ আসলে দৌড়াতে হয় সহু সেজদা দিতে।
দ্বিতীয় আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে ফিকহী বোর্ড গঠনের, এক হাইয়াতুল উলয়া আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে গোটা একটা দেশের একটা সম্মিলিত পরিষদও কতটা অথর্ব হতে পারে। (কারো হাইয়াতুল উলয়ানুভূতিতে আঘাত লাগলে দুঃখিত।)
সামনে কঠিন দিন আসছে, গত ফেব্রুয়ারীতে লিখেছিলাম, ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের সাথে একজন হুযুরের পার্থক্য কেবল নামায ও অন্যান্য ইবাদতে। যেখানে তেলাওয়াতের শুদ্ধতা ও একেবারে মৌলিক কিছু মাস’আলা-মাসায়েলের প্রয়োজন পড়ে। এই বাঁধাটা যখন আওয়ামের একজন ডিঙিয়ে ফেলতে পারে, তখন আর সে দুই পয়সা দিয়েও একটা হুযুরকে পুঁছে না। বাংলাদেশে আহলে হাদীস, জঙ্গী ও বিদ’আতীদের উত্থান ও শক্তিমত্তা কিংবা হালের এতায়াতীদের কোনভাবেই আলেমদের না মানাতে পারার পেছনে এই অনুচ্চারিত সত্যটি বিরাট আসন দখল করে আছে’।
এই করোনা কালে, যখন আমাদের হুযুররা ইয়াবার মিশ্রণের সন্দেহযুক্ত জর্দা (‘দেশের বাজারের সকল জর্দা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হোক গাঁজা বা ইয়াবার মিশ্রনের সন্ধানে’ – এমন একটি দাবিও কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে এই করোনা কালে। আমিও এই দাবি জানাই। দেশে ইয়াবার বিস্তারের পরপরই আমাদের বক্তাদের উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু হয়েছে।) পান খাচ্ছিলেন, দেশের ধর্মসচেতন তরুণরা তখন ইসলামের মর্মবাণী নিয়ে একেরপর এক লিখে গিয়েছে। আমাদের এক গ্রুপে দশের অধিক এই ধরণের লেখা শেয়ার করা হয়েছে। এক মাওলানা সাহেবের একটা লেখা কয়েকদিন আগে বেশ ছড়িয়ে ছিল, অথচ ইসলামের যে শিক্ষার কথা সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঠিক এটাই কেবল কোন উদ্বৃতি/সূত্র ছাড়া এক মেডিকেল ড্রপআউট লেখক এই আলেমের ১২ দিন আগে লিখেছিলো।
এই যখন অবস্থা, তখন আমি এই প্রস্তাব রাখতে বাধ্য হচ্ছি, বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের যাবতীয় ধর্মীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার তুলে দেয়া হোক দারুল উলূম দেওবন্দের হাতে।
( মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় লেখকের )
ড. সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্য-
https://youtu.be/0diXnZjsiA0