পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: নিয়ন্ত্রণহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার। চাহিদা বিবেচনায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। রোজা ঘিরে লেবু, বেগুন ও শসার দাম নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। এগুলো দেখারও যেন কেউ নেই।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম রমজান। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এ রোজা ঘিরে অস্থির করে তুলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে। এরই মধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনীতি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানেও আলোচনায় উঠে আসে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগেই বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি বছরের মতো লেবু, শসা, বেগুনের দাম বেড়ে গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। ইফতারে ব্যবহার হয় এমন অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে গত দু’দিনে। রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন বেশির ভাগ কাঁচা পণ্যের দাম বাড়তির দিকে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়।
লেবুর এমন আগুন দামে আশ্চর্য হয়েছেন খোদ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। রোববার ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে কাঁচাবাজার বণিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে দেখলাম এক হালি লেবুর দাম ৬০ টাকা। তাতে একটির দাম পড়ে ১৫ টাকা। অথচ একটু আগে আমার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে ফোন করে জানলাম, সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি লেবু ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে একটা লেবুর দাম হয়ে যাচ্ছে তিনগুণ।’
তিনি বলেন, এসব নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। তবে রাতারাতি নয়, কয়েক মাসের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তদারকির জন্য নিয়মিত টিমের পাশাপাশি আলাদা টিম বাজারে কাজ করবে। বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও কোনো পণ্যের সংকট নেই। পেয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি বেগুন সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। কয়েকদিন আগেও পণ্যটি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাওরান বাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৮০ টাকা কেজিতে বেগুন বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
রমজানে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে, তবে সেগুলোর আমদানি সংকট ও ডলারের দাম বাড়ার মতো কারণ আছে। তবে দেশের উৎপাদন দিয়েই চাহিদা মেটে লেবুর। আমদানির প্রশ্ন না থাকায় লেবুর সঙ্গে ডলারের দর বাড়ার সম্পর্ক নেই। তবু অস্বাভাবিক লেবুর দাম।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে যে লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে গত দু’দিন ধরে তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
তারা বলেন, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রোজার আগে পণ্যগুলোর দাম বাড়ার কারণ জানেন না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, রোজা আসলে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছরই রোজা এলেই জিনিসের দাম বাড়ে। পরে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষগুলো কিছুদিন লোক দেখানো অভিযান চালাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে এবং পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়ার পর ৫ টাকা কমবে। এটাই নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এতে সাধারণ জনগণের কষ্ট ভোগ করতে হবে।
ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন তিন ধরনের শসা পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি ১১০ থেকে ১২০ দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়েকদিন আগেও দেশি ও হাইব্রিড দুই জাতের শসার কেজি কেনা গেছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।