তিন জিম্মির মুক্তির পর ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল

তিন জিম্মির মুক্তির পর ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আরও তিন জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।

মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলিরা হচ্ছেন, এলি শারাবি, ওহাদ বেন আমি ও অর লেভি। তাদের শনিবার সকালে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা ইসরায়েলে তাদের পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হন।

তবে তাদের সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যে থাকা শারাবির পরিবার তাকে অস্থিচর্মসার অবস্থায় দেখা কষ্টের বলে বর্ণনা করেছে। অন্যদিকে, ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের নিয়ে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় উৎসব চলছে। তাদের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে তাদের সবার ‘স্বাস্থ্য সেবা’ প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বা সুনির্দিষ্ট আর কিছু বলা হয়নি।

গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১ জন ইসরায়েলি জিম্মি ও ৫৬৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত ৩৩ জন জিম্মি ও এক হাজার ৯০০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য জানিয়েছে যে ৩৩ জন জিম্মির মধ্যে আট জন মারা গেছে।

গতকাল শারাবি, বেন আমি ও লেভিকে মধ্য গাজায় দেইর আল-বালাহ এলাকায় রেড ক্রসের কাছে দেওয়া হয়। এ সময় সশস্ত্র যোদ্ধারা কয়েক সাড়িতে সমবেত জনতাকে ঘিরে রাখে, যারা দেখতে এসেছিল কিংবা মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিল। তখন হামাস ও ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানো হয় সেখানে।

একজন হামাস কর্মকর্তা ও রেড ক্রস প্রতিনিধি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে জিম্মি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করেন। এরপর জিম্মিদের মঞ্চে আনা হয়। এ সময় সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাদের ঘিরে ছিল। তিন জিম্মি হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে পোজ দেন এবং একটি মাইক্রোফোন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর রেড ক্রসের গাড়িতে ওঠার আগে হাত নাড়ান।

তাদের শারীরিক অবস্থায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ, সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, আমরা আবারও দেখলাম হামাস কতটা দানব।

তিনি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বারবার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। তবে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

শনিবার বিবিসি আরবি বিভাগকে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেছেন, ইসরায়েলি জিম্মিদের ভদ্র আচরণের মাধ্যমেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি বরং যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

নেতানিয়াহুর বন্দি ও নিখোঁজ ব্যক্তি বিষয়ক সমন্বয়ক বলেছেন, তারা এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন এবং এটি যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীদের কাছে উপস্থাপন করবেন।

শারাবির শ্যালক স্টিভ ব্রিসলি বিবিসিকে বলেছেন তিনি জীবিত আছেন এটি নিশ্চিত হতেই তারা গত ১৬ মাস কাজ করেছেন। ‘তাকে এমন অস্থিচর্মসার অবস্থায় হামাসের প্যারেড করানোর দৃশ্য দেখাটা খুবই কঠিন ছিল।’

৫২ বছর বয়সী এলি শারাবিকে তার ভাইয়ের সঙ্গে কিবুৎজ বিরি থেকে নেওয়া হয়েছিল। তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এলির স্ত্রী লিয়ানে যিনি ব্রিটেনে জন্ম নিয়েছেন এবং তাদের দুই কন্যা নোইয়া ও ইয়াহেল হামলায় মারা গিয়েছিল।

মুক্তির সময় শারাবিকে বলতে শোনা যায়, খুবই খুশি আজ আমার স্ত্রী ও কন্যাদের কাছে ফিরছি। ফলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে তিনি হয়তো জানেনই না যে তার পরিবার জীবিত নেই।

দ্য হোস্টেজ ও মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, যেসব অস্বস্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে এটি নিশ্চিত যে জিম্মিদের জন্য আর অপচয় করার মতো কোনও সময় নেই।

ওদিকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) মুক্তি কার্যক্রমকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

Related Articles