- আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
এক যামানা ছিল যখন আমরা নওল কিশোর, নানা স্বপ্ন উঁকিঝুঁকি দেয়, ভাষা খোঁজে আবির্ভাবের, শব্দ খোঁজে বিকাশের। তখন মাতৃভাষা চর্চা কি জানি কী কারণে আলিম ওলামাদের মাঝে ছিল খুবই বিরল। বিশেষ করে কওমী মাদরাসাসমূহের আঙিনায় প্রবেশ ছিল বলতে গেলে নিষিদ্ধ দ্রাক্ষারস। অনেক মাদরাসার পরিবেশ ছিল এমন, কারো সম্পর্কে কোনো ছাত্র সম্পর্কে এ ধরনের মনোভাবের আঁচ পাওয়া গেলে বেচারাকে বহিষ্কারাদেশের গ্লানি নিয়ে তওবা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। বিপ্লব অন্বেষণা নিয়ে আমরা কিছু নওল কিশোর ঝাঁপিয়ে পড়লাম ‘যা হয় হোক’ মনোভাব নিয়ে।
এরপর তারুণ্যের মধ্য গগনে, কৈশোরের আবহ সামনে রেখে মাতৃভাষা চর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুতে ‘লাজনা’ নামে মাটি কর্ষণ শুরু হলো। গড়ে উঠল বেশ সচেতনতা। কৈশোরের চাঞ্চল্য নিয়ে এগিয়ে এল তালীবুল ইলম ছাত্রসমাজ। আসাতিযায়ে কেরামের মাঝেও পরিলক্ষিত হলো আশ্চর্য নমনীয়তা। যারা বাংলার ব-ও জানতেন না তারাও হলেন উৎসাহিত। আলোড়িত হলো জঙ্গম। দেখা গেল আলোর রেখা। কিন্তু মাঠ কই? প্রকাশের বাহন কই? বাহন ছিল না তেমন, একটি দুটো যা-ও ছিল সেখানে তো পরিসরের অভাব।
আল্লাহ পাক বলছেন খাইরা যাদ আত- তাকওয়া উত্তম পাথেয়, শেষতক পাথেয় নামটিই স্থির হলো। সব ঝামেলা পোহায়ে ডিক্লারেশন নেয়া হলো। হাঁটল পাথেয়।
আবারও এগিয়ে এল স্বপ্নপ্রকাশের গর্ভযন্ত্রনায় ‘লাজনা’। নামকরণ অভিষেক হলো ‘ইনকিলাব’। প্রথম একটা সংখ্যা বেরও হলো এই নামে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যুদ্ধাপরাধের তালিকায় আসা জনৈক মন্ত্রণালয়াধিকারী ছিনতাই করল নামটিকে। দুর্বলরা হামেশাই ছিনতাই হয়ে আসছে। সুতরাং লাইসা বি নিরাশা। নো হতাশা। আল্লাহ পাক বলছেন খাইরা যাদ আত- তাকওয়া উত্তম পাথেয়, শেষতক পাথেয় নামটিই স্থির হলো। সব ঝামেলা পোহায়ে ডিক্লারেশন নেয়া হলো। হাঁটল পাথেয়।
এক কুড়ি ছয় বছর* আগের এই ছিল পাথেয়ের সংক্ষিপ্ত তারিখে পয়দায়েশ জন্মবৃত্তান্ত। কিন্তু পাথেয় কি মসৃণভাবে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে?
না বলা সংকোচের হলেও তা বলা ছাড়া দূষিত কথনের বেড়াজালে নিপতিত হতে হবে। বারবার, অনেক বার থামতে হয়েছে এ যাত্রা পথে। পা ভেঙে পড়েছে এলিয়ে। তবে মারা পড়েনি, হামদ ও তারীফ সব আল্লাহর। কেন হলো তা, এ বিষয় সবিস্তার বলতে পারবে পাথেয়কে আঁকড়ে থাকা আলহাজ হযরত মাওলানা রুহুল আমীন সিরাজী প্রমিত লেখক, সাহিত্যিক, সৃষ্টির দিক থেকে যদিও তাকে বন্ধ্যা বলা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
শেষে হাল যামানায় এসে পাথেয়কে আবেগাশ্রত হয়ে স্কন্ধে তুলে নিয়েছে খ্যাতিমান ছড়াকার কবি মাসউদুল কাদির। নাচীজ অধমকে পরম উৎসাহে প্রতিশ্রুতি দিল, শরীরের রক্ত বেঁচে হলেও পাথেয় বের করব। এমন প্রতিশ্রুতিই তার পক্ষে স্বাভাবিক। এককালে তিনিই পাথেয়ের কিশোর বিভাগটি দেখভাল করতেন। পাথেয়- এর সঙ্গে তার ডিএন-এর সম্পর্ক।
অধম যেন মৃত লাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো।
বললাম, তথাস্ত, তবে তাই চল। হ্যাঁ, চলছে। তাই তো এই সম্পাদকীয় লেখার সুযোগ পেলাম। ধন্যবাদ, মুবারকবাদ পাঠক, লেখক, সহায়কসংশ্লিষ্ট সবাইকে। আল্লাহপাক কবুল করে নিন কিয়ামত তক।
শুকরিয়া তো আল্লাহর, ভরসা করি মহামহিম সুবাহানাহু ওয়াতাআলার চিরন্তন ওয়াদার। লা ইন শাকারতুম লা আযীদান্নাকুম, শুকরিয়া আদায় নেয়ামত বৃদ্ধির মহা উপায়। এ-ও জানি, বিশ্বাস করি কাদিরে মুতলাক আরহামুর রাহিমীনের কাছে শর্ত-মর্ত কিছু নেই। আবদার শুধু অপরিমেয় করুণার, আবেদন শুধু অসীম রহমতের। শুধু ইহলোকে নয় আখিরাতেরও যেন এর দেখা পাই। আমীন।
সম্পাদকীয়, মাসিক পাথেয়, ফেব্রুয়ারী ২০১২
*২০১২ সালের হিসেবে ২৬ বছর।