পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অনুমতি না নিয়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড লালবাগ শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠসংলগ্ন রাস্তা খনন করছিলো ঢাকা ওয়াসা। এ বিষয়টি নজরে এলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খননকৃত এলাকায় যায়। সেখানে খননকাজে নিয়োজিতদের কাছে রাস্তা খননের অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তারা অনুমতিপত্রও দেখায়। পরে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে খননকাজের অনুমতি সম্পর্কে অবগত করা হলে তিনি অনুমতিপত্র দেখতে চান। তখনই বেরিয়ে আসে ঢাকা ওয়াসার জালিয়াতি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখেন যে, তার স্বাক্ষর জাল করে ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা ভুয়া অনুমতিপত্র দেখিয়ে সেখানে রাস্তা খনন করছিল। ততক্ষণে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়েন খননকাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার কর্মী ও তদারকিতে থাকা কর্মকর্তারা। পরবর্তীকালে এই খননকাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে। জব্দকৃত মালামালের মধ্যে দুটি জেনারেটর, একটি ড্রিল মেশিন, দুটি অ্যালুমিনিয়ামের গামলা, দুটি শাবল, একটি কোদাল, একটি এলইডি লাইট ও পাঁচটি হেলমেট রয়েছে।
জানা যায়, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের আওতাধীন লালবাগ খেলার মাঠ (শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ) সংলগ্ন পানির মেইন লাইনে ইলেকট্রনিক প্রেশার রিডিউসিং ভালভ (ই-পিআরডি) স্থাপনকাজের জন্য রাস্তা খননের অনুমতি চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেল থেকে এই খননকাজের অনুমতি দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল করপোরেশনের অঞ্চল-৩-এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল স্বাক্ষরিত একটি অনুমতিপত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের (রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বরাবর প্রেরণ করা হয়।
অনুমতিপত্রে ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের উল্লিখিত রাস্তা খনন করতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খননের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল ২৩ মে পর্যন্ত খননকাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ওয়াসা আবেদন করে, যা ৩০ এপ্রিল করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রাপ্ত হয়।
পরে ঈদুল আজহা ও করপোরেশনসংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়াদি অবগতপূর্বক এ সময় রাস্তা খনন করলে জনভোগান্তির কথা জানিয়ে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই বার উদ্যোগ নেওয়া হলে অঞ্চল-৩-এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী গত ২০ মে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খনন করা যাবে না মর্মে চিঠি দেয়। গত সোমবার নাগাদ করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে খবর আসে যে, ওয়াসা সেখানে রাস্তা খনন করছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ৪.৬০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.৭০ মিটার প্রস্থ অর্থাৎ ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি চাওয়া হয় এবং ২১ এপ্রিল খননের অনুমতি দেওয়া চিঠিতে ওয়াসাকে ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে এবং অনুমতি না নিয়ে উল্লিখিত সড়কের দুটি স্থানে ১৩.২৯ বর্গমিটার ও ২.০৪ বর্গমিটার সড়ক খনন করে। অর্থাত্ অনুমতি চাওয়া হয়েছিল একটি স্থানে অথচ খনন করেছে দুটি স্থানে। এছাড়াও চাহিত অনুমতির বর্গমিটারের সঙ্গে খননকৃত অংশেরও ফারাক রয়েছে।
এ বিষয়ে অঞ্চল-৩-এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা অনুমতি না নিয়ে লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠসংলগ্ন সড়ক খনন করছিল। এ বিষয়ে অবগত হলে আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে যান। এ সময় সেখানে থাকা ঢাকা ওয়াসার লোকজন আমাদের কর্মকর্তাদের আমার স্বাক্ষরিত সড়ক খননের একটি অনুমতিপত্র দেখায়। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে তারা অনুমতিপত্রটি আমাকে পাঠান। তা দেখেই আমি নিশ্চিত হই যে, আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের লোকজন সেখান থেকে সরে যায়। এরপর খননকাজে ব্যবহৃত সেসব মালামাল আমরা জব্দ করি। আর যেহেতু আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।’