- মাওলানা মুহা. সারোয়ার আলম ভূঁইয়া
প্রতি জুমআয় কোননা কোন জামে মসজিদে মিম্বরে দাঁড়িয়ে মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে মাদক, বাল্যবিবাহ, জুয়া, ইভটিজিং, জঙ্গীবাদ, কিশোর গ্যাং, পারিবারিক- গোষ্ঠীগত ও রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে সচেতনামূলক বক্তব্য রাখেন কোতয়ালী মডেল থানা, কুমিল্লার অফিসার ইনচার্জ জনাব আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ।
বিষয়টি শুনে কিছুটা অবাক লাগলো। থানায় আইন শৃঙ্খলার দায়ীত্বে নিয়োজিত ওসিরা সাধারনত মসজিদের মিম্বরের সামনে দাড়ীয়ে দ্বীন-ধর্মের বিষয়াদীর প্রসঙ্গে কথা বলার যোগ্যতা রাখেন না। আজীবন আমরা এমনটিই দেখে আসছি। একদিন জামেয়া রশিদিয়া রানীর বাজার মাদরাসা মসজিদে জমুআ পড়তে গিয়ে নিজ কানেই শুনলাম তাঁর বয়ান।
দেখলাম পরিস্কারভাবে দরজায় লেখা আছে ‘আমি আপনাদের সেবক, আমার অফিসে প্রবেশের জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই’।
মসজিদের মুসল্লীদের সামনে দেয়া তাঁর বক্তব্য ও নিজ অফিসের দায়ীত্ব পালনে নৈতিক মুল্যবোধ পরখ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলাম। একদিন কোতয়ালী মডেল থানায় তাঁর অফিসে গেলাম। কক্ষের সামনে কোন পুলিশ সদস্যকে পাহারারত দেখতে পেলাম না। মনোযোগ সহকারে প্রবেশদ্বারটি অবলোকন করলাম। দেখলাম পরিস্কারভাবে দরজায় লেখা আছে ‘আমি আপনাদের সেবক, আমার অফিসে প্রবেশের জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই’।
বিস্ময়াভিভুত হয়ে তাকিয়া থাকলাম কিছুক্ষণ। ভাবলাম কথা তো সঠিক। পুলিশ তো প্রজাতন্ত্রের একজন এমপ্লয়ী, জনগণের সেবক। পুলিশের কাছে মানুষ বন্ধু সুলভ আচরণই আশা করে।
আগেও এখানে এসেছি, সবসময় এই দরজাটিকে পুলিশ প্রহরারত অবস্থায় বন্ধ পেয়েছি। অনুমতি সাপেক্ষে অনেক করজোর করে প্রবেশ করতে হতো। আজ পুরোই ভিন্ন চিত্র। কিন্তু কেন ?
সহজেই প্রবেশ করলাম। ওসি সাহেবের সাথে কথা বললাম। পরিচয় ও কুশল বিনিময়ের পর চা পান করলাম। তিনি বল্লেন, আমার বাড়ী কিশোরগঞ্জ সংলগ্ন নেত্রকোনায়। এ দেশের শীর্ষস্থানীয় শাইখুল হাদীস ও বিশিষ্ট বুজুর্গ, শোয়ালাকীয়া ঈদ গাহের গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব কে চিনেন ? আমি হযরতের এলাকার ও সোহবতের মানুষ। আমার বাড়ী ও বাসায় হুজুর কে বেশ কইয়েকবার দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছি। দ্বীনি বিষয়ে শিক্ষা-দিক্ষা হযরতের কাছ থেকেই আমি পেয়েছি।
তিনি বল্লেন, আমার বাড়ী কিশোরগঞ্জ সংলগ্ন নেত্রকোনায়। এ দেশের শীর্ষস্থানীয় শাইখুল হাদীস ও বিশিষ্ট বুজুর্গ, শোয়ালাকীয়া ঈদ গাহের গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেব কে চিনেন ? আমি হযরতের এলাকার ও সোহবতের মানুষ। আমার বাড়ী ও বাসায় হুজুর কে বেশ কইয়েকবার দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছি। দ্বীনি বিষয়ে শিক্ষা-দিক্ষা হযরতের কাছ থেকেই আমি পেয়েছি।
কথা শেষ করতে গিয়ে ভাবলাম, আমাদের কুমিল্লা ৬ আসনের এম পি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার যেমন নামাজ কালামে অভ্যস্ত, নৈতিক মুল্যবোধ সম্পন্ন একজন পরহেজগার মানুষ তেমনি তিনি আমাদের থানার জন্য একজন নম্র-ভদ্র বিনয়ী ও দ্বীনদার মানুষকে কুমিল্লার ওসি’র চেয়ারে বসিয়েছেন।
প্রাসঙ্গিক আলোচনায় অবগত হলাম, ওসি সাহেবের শশুর হাজী এলাহী নেওয়াজ তালুকদার সাহেবও বড় হুজুরের ঘনিষ্টজন। হুজুরের প্রতি মাসের শবগুজারীতে তিনি নিয়মিত আসেন। এরপর সত্যি সত্যি একদিন তার সাথে একদিন হুজুরের শবগুজারিতে দেখা হলো। পরিচিত হলাম। আলাপচারিতায় ঘনিষ্টতা বাড়লো। পর্যায়ক্রমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলো।
এক পর্যায়ে তিনি বল্লেন,
শাহীন (ওসি, আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ) খুব ভাল ফ্যামেলীর ছেলে। সে নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও দ্বীনি মেজাজে গড়ে উঠা ছেলে। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে। তাঁর এক ছেলেকে সে হাফেজে কুরআন বানিয়েছে। অন্যান্য ছেলে-মেয়ে কেও সে দ্বীনি ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে উঠাচ্ছে।
আমি বলাম, আপনি কি জানেন, আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ সাহেব প্রতি মাসে কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে ক্রেষ্ট পেয়ে সম্মানিত হচ্ছেন। এ ধারাবাহিকতা প্রায় বছর পূর্তির কাছাকাছি। হ্যাঁ জানি। ও ভাল ছেলে। ভাল দেখেই তো ওকে জামাই হিসাবে বরণ করেছিলাম।
উপসংহারে যে কথাটি বলতে চাই, পুলিশের মধ্যে এমন গুণসম্পন্ন পুলিশ অফিসার প্রতিনিয়ত গড়ে উঠুক। কুমিল্লা জেলার মতো, এ দেশের প্রতিটি থানা উপজেলায় আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ এর মতো সৎ ও কর্মদক্ষ পুলিশ অফিসার দায়ীত্ব প্রাপ্ত হয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাক। আমি কুমিল্লা মডেল থানার সম্মানিত ওসি আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ এর সু স্বাস্থ্য-সফলতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। এবং যার সান্নিধ্যে তিনি আজ সোনার মানুষ সেই আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা. কেও আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন।
লেখক, আলেম ও সাংগঠনিক ব্যাক্তিত্ব