ভারতীয় মুসলমানরা মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার প্রয়োগেও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে : মাওলানা মাহমুদ মাদানী (১ম পর্ব)

ভারতীয় মুসলমানরা মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার প্রয়োগেও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে : মাওলানা মাহমুদ মাদানী (১ম পর্ব)

গত ৪ ও ৫ জুলাই ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভারতের সর্ববৃহৎ ও শতবর্ষী ইসলামী সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পরিচালনা পর্ষদের দুই দিনব্যাপী মজলিস। এতে ভারত ও বিশ্ব মুসলিমের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও এ থেকে উত্তরণসহ সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছেন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

এতে সভাপতির ভাষণে সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধ্যাত্মিক রাহবার, মুসলিম নেতৃত্বের প্রতিভূ, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি হযরত মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানী দা.বা.। পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম কর্তৃক পাঠকদের জন্য বক্তব্যটির চুম্বকাংশ বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে। তিন কিস্তিতে প্রকাশিতব্য ভাষণটির ১ম পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো।

হামদ ও সালাতের পর—

আজকের এই মজলিসে উপস্থিত মুহতারাম ওলামায়ে কেরাম, বিশেষত সর্বজন শ্রদ্ধেয় হযরত মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী সাহেব (প্রিন্সিপাল, দারুল উলূম দেওবন্দ —পাথেয়) ও জমিয়তের সর্বস্তরের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ।

আমরা ভীষণ সঙ্কটাপন্ন একটি সময় অতিবাহিত করছি। কিছুক্ষণ পূর্বে মাওলানা সালমান বিজনৌরি সাহেব ফিলিস্তিন নিয়ে কিছু কবিতা আবৃত্তি করেছেন। নিজের মনের ব্যথাগুলো তিনি কবিতার ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।

বাস্তবতা হচ্ছে এই— মনের ব্যথা ও আবেগ প্রকাশ করতে গেলে কখনো কখনো শব্দমালা সব হারিয়ে যায়। ঠিক কোন শব্দে সেই আবেগ ব্যক্ত করতে হবে— তা বোধগম্য হয়ে উঠে না। খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। হতাশা আর নিরাশা আমাদের পেয়ে বসে।

আমরা ভারতীয় মুসলমানরা এমনই এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি যে, ফিলিস্তিন নিয়ে আমরা আমাদের মনের ক্ষোভ ও দহন গণতান্ত্রিক উপায়েও প্রকাশ করতে পারছি না। গঠনমূলক সমালোচনা করার মৌলিক অধিকারটুকুও আজ আমরা পাচ্ছি না।

ফলশ্রুতিতে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে (মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে) দুনিয়ার অন্যান্যরা যে চাপে আছে, আমরা তার দ্বিগুণ চাপ অনুভব করছি। যদি বলি তাহলে তো বলতে হয়, নিজ দেশের অভ্যন্তরেই রয়েছে দলভিত্তিক ঘৃণা-বিদ্বেষের ছড়াছড়ি।

সংখ্যালঘুরাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ

আমি সবসময়ই একটা কথা বলি এবং আজও বলতে চাই— ক্ষমতার পটপরিবর্তনে সংকটময় পরিস্থিতির উন্নতিসাধন হবে না। পরিস্থিতির উন্নয়ন যদি ঘটে, তবে জনগণের নিজেদেরকে বদলে ফেলার মাধ্যমেই তা ঘটবে।

আমাদের হযরত রহ. (ফিদায়ে মিল্লাত রহ.) বলতেন, “এই দেশ সংখ্যালঘুদের সংখ্যাধিক্যের দেশ। মাইনরিটিই হলো এখানে মেজরিটি।” হযরত বারবার এ ব্যাপারে বলেছেন, “আমাদের জিম্মাদারি এটা যে, অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সাথে মিলে কাজ করা। যদি সংখ্যালঘুদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে গিয়ে তোমরা সফল হয়ে যাও তখন ঘৃণা ও বিদ্বেষের মোকাবেলা করা যাবে।”

আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলছি— একটি সুন্দর দেশ গড়তে প্রত্যয়ী আমাদের সমমনা স্বদেশী ভাই যারা আছেন, তাদের সাথে সংলাপে বসা উচিত। তারা হিন্দুদের মধ্য থেকে হতে পারেন, শিখ হতে পারেন বা রাষ্ট্রের অন্যান্য সম্প্রদায়ের কেউও হতে পারেন।

যদি ঘৃণার জবাব ঘৃণার দ্বারা দেয়া হয়, তাহলে দিনশেষে ঘৃণারই জয় হবে। ঘৃণার জবাব ঘৃণার দ্বারা দিতে হয় না। আগুনকে আগুন দ্বারা নেভানো যায় না৷

আমি এটাও বলি; আজ সকালেও সাথীদেরকে বলছিলাম— এটা জিম্মাদারদের মজলিস, এটা কোনো গণসমাবেশ নয়, যদি আমার কোনো কথায় ভুল থাকে তাহলে আপনাদের এই অধিকার অবশ্যই আছে যে তা ঠিক করে দেবেন, আমার বক্তব্য ভুল হতে পারে, তবে আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলছি— একটি সুন্দর দেশ গড়তে প্রত্যয়ী আমাদের সমমনা স্বদেশী ভাই যারা আছেন, তাদের সাথে সংলাপে বসা উচিত। তারা হিন্দুদের মধ্য থেকে হতে পারেন, শিখ হতে পারেন বা রাষ্ট্রের অন্যান্য সম্প্রদায়ের কেউও হতে পারেন।

তাদের সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে যত ভুল ধারণা ও প্রোপাগান্ডা আছে, সে ব্যাপারে আলোচনা করা অপরিহার্য। যারা ভিন্নমত পোষণ করে তাদের সাথেও কথা বলা উচিত। যাদের সাথে ঐকমত্য আছে তাদের সাথে সংলাপের প্রয়োজন নেই।

এমন অনেকেই আছে যারা আমাদের সাথে মতবিরোধ পোষণ করে। তাদের সাথে কথা বলা উচিত। অনেক সম্প্রদায় আছে যারা আমাদের ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাদের সাথেও কথা বলা উচিত। মোটকথা, আলোচনা হওয়া উচিত। যদি পরস্পর আলাপ-আলোচনা হয় তাহলেই কেবল ঘৃণা ও বিদ্বেষের মোকাবেলা করা যাবে৷

আপনাদের কাছে এটা আমার বিনীত আরজ।

(আগামীকাল পড়ুন ২য় পর্ব)

অনুবাদ : আব্দুস সালাম ইবন হাশিম, মুহাম্মাদ আইয়ুব
সম্পাদনা : যারওয়াত উদ্দীন সামনূন

Related Articles