মীরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি হাজারো পরিবার

মীরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি হাজারো পরিবার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :  টানা ছয় দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে অন্তত এক হাজার পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না করায় ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত। এ অবস্থায় বুধবার (৩ জুলাই) সকালে পানিবন্দি ৪৫০ পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মীরসরাই সদর, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ডুবে গেছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে। গর্তের কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বড়দারোগাহাট-বগাচতর সড়ক, জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাপুনি, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তানা ও খিলমুরালী গ্রামের হাজারো পরিবার। চুলায় পানি ওঠায় রান্নাও বন্ধ আছে।

খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাফুনী গ্রামে পানিবন্দি আছে অনেক পরিবার। কোমর পরিমাণ পানি হওয়ায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

দুর্ভোগের কথা জানিয়ে ফেনাফুনী গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, ‘ফেনাফুনী খালটি ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে ফেনাফুনী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টি হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। অনেকের রান্নাঘরের চুলায় পানি উঠায় রান্না-বান্না হয়নি।’

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা শিহাব শিবুল বলেন, ‘পাহাড়ি তিন ছড়ার পানি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হয়ে এক ছড়া দিয়ে যায়। কিন্তু ছড়ার মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করে দখলের কারণে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর বৃষ্টি হলে আমাদের গ্রাম পানিতে ডুবে যায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাল পার্শ্ববর্তী হাট-বাজারগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা। এগুলোর কারণে বিভিন্ন খালে পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে প্রতি বছর নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ফেনাফুনী ও সৈদালী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি ওই এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। মূলত মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের লোকজন খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করবো।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ও সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ‘মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুদিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা ছয় দিন বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্য চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও চাষি আমাকে ক্ষতির বিষয়ে এখনও জানাননি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘গত ছয় দিন টানা বৃষ্টিতে মীরসরাইয়ের অনেক এলাকায় পানি উঠে গেছে। বুধবার উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার ও ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের ২০০ পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও সহায়তা করা হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles