সাভারে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে সেবার নামে অপচিকিৎসা

সাভারে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে সেবার নামে অপচিকিৎসা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সাভার উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার নামে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থাপনা। চিকিত্সাসেবা নিতে এসে প্রতিনিয়তই অপচিকিত্সা এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে বেশির ভাগেরই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই।

অনুমোদনবিহীন এসব ক্লিনিক বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। অধিক মুনাফার লোভে প্রয়োজনীয় দক্ষ চিকিত্সক ছাড়া হাতুড়ে চিকিত্সক দিয়ে সেবা প্রদান করায় মাঝে মধ্যেই হাসপাতালগুলোতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার নার্সদের স্বল্পতা রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের আলমারিতে প্রচুর ওষুধ সংরক্ষণ করা হয়, যা নিয়ম বর্হিভূত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কালার কোর্ড মেনে করা হয় না। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। কোনোরকম একটি ভবন ভাড়া নিয়েই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও রি-এজেন্ট, ভুয়া রিপোর্ট, অদক্ষ ডাক্তার, নার্স ও নোংরা পরিবেশে পরিচালিত হয় এসব হাসপাতাল ক্লিনিক।

ইতিপূর্বে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে হাসপাতালের অপচিকিত্সার সংবাদ প্রকাশিত হলে সাভারের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং র্যাব-৪-এর যৌথ সমন্বয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে ছয়টি হাসপাতাল সিলগালা, ১০টিকে সাড়ে প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা জরিমানা, এক ক্লিনিক মালিককে কারাদণ্ড প্রদান করলেও থেমে নেই অর্থলোভী এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অপতত্পরতা।  অন্যদিকে ল্যাব না থাকলেও রোগীদের কাছ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করায় সেবা ক্লিনিকের পরিচালক আব্দুস সালামকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এসময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় হাসপাতালটির পরিচালক আমিনুল ইসলামকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে আশুলিয়ার গণি জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মমতাজ উদ্দিন জেনারেল হাসপাতাল এবং সাভারের পলাশ হাসপাতালে  অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখা, হাসপাতালের লাইন্সেস এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই রিপোর্ট প্রদান করার অভিযোগে হাসপাতাল তিনটি সিলগালা কারে দেওয়া হয়। মেসার্স অনন্যা এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড মেডিসিন কর্নারে অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং নকল ওষুধ রাখায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৭৫ হাজার জরিমানা করা হয়। পলাশবাড়ি এলাকার হাবিব ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে চিকিত্সাসেবা দেওয়ার অভিযোগে ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেবা দেওয়ার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর অপারেশন থিয়েটার, নিয়ম না মেনে অনভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার কারণে রোগীরা এসব হাসপাতাল থেকে যথোপযুক্ত চিকিত্সা পাচ্ছেন না। শিল্প এলাকায় অধিকসংখ্যক কর্মজীবী মানুষ বসবাস করলেও এখানে প্রয়োজনীয় চিকিত্সাসেবার সংকট রয়েছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিকিত্সা খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। আরো অভিযোগ, এসব  ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা এলাকাভিত্তিক মাস্তানদের মাসোহারা দিয়ে পুশে থাকেন। ক্লিনিকে ভুল চিকিত্সায় কোনো রোগী মারা গেলে কিংবা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে মস্তানরা রোগীর আত্মীয়স্বজনদের মামলা করা থেকে বিরত রাখা এবং এ বিষয় নিয়ে যাতে কোনো বাড়াবাড়ি না হয় তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা জানান, বিভিন্ন অভিযোগে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্যানেটারি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। নিবন্ধনবিহীন হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *