পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আগামী অক্টোবরেই পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাওয়া যাবে। তখন কম খরচে বিলাসবহুল ট্রেনে করে পর্যটকেরা কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। এ লক্ষ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ট্রেনের ছয়টি বগি এবং একটি ইঞ্জিন।
এ প্রসঙ্গে পটিয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, “১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে ওই সেতু দিয়ে ট্রেন এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে তার আগেই ছয়টি নতুন বগি এবং একটি ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন আনা হয়। এগুলো এখন পটিয়া রেলস্টেশনের সামনে রাখা আছে।”
তিনি বলেন, “এসব বগি ও ইঞ্জিনের মাধ্যমে কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথে ট্রায়াল রান এবং উদ্বোধন করা হবে। এজন্য বগি ও ইঞ্জিন আগেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতুটি দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে। সেতুটি মজবুত করা হচ্ছে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।”
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টন ওজনের ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। সেতু পার হওয়ার সময় ট্রেনের গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। তবে কক্সবাজারগামী ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২ থেকে ১৫ টন। ট্রেনের গতি হবে সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, “দোহাজারী-কক্সবাজারে ৯২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৮%। চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার টার্গেট আছে। অক্টোবরেই প্রকল্পের উদ্বোধনের প্রস্তুতি রয়েছে।”
এদিকে, গত ৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনের টানা বৃষ্টিতে ডুবে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা। এতে তেমুহনি এলাকায় ২৫০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেললাইন থেকে পাথর-মাটি সরে যায়। এ কারণে দেবে যায় রেললাইনের বেশ কিছু অংশ। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন সংস্কার করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮, হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮, হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন