পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। পাশাপাশি জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপের বিষয়ে উভয়পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
শনিবার (২৭ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সভায় চীনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হওয়া ১২তম সভায় ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বেইজিংয়ের পক্ষে ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তারা সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক সফর বিনিময় ও বৈঠকের কথা স্মরণ করা হয়, যা দুই দেশের সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করেছে।
বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এক চীন নীতিতে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার সভায় তার দশ বছর পর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন নিয়ে মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন।
উভয়পক্ষ বাংলাদেশে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মাসেতুর রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায়। এছাড়া বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও প্রবাহিত করতে সম্মত হয়েছে।
উভয়পক্ষ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া বাংলাদেশি ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্ক এবং কোটা ফ্রি প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা করে।
এছাড়া চীনের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্পেসিফিকেশন মেনে বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবারের বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
ঢাকার পক্ষ থেকে বেইজিংয়ের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রির আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, লেদারের মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে দেশটির বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা খামারিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-গুয়ানঝু সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানোর পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দুই পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উভয়পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে অবদান রাখার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
এছাড়া বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং নিয়মিত স্টাফ পর্যায়ের আলোচনা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে।
সভায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানায়।
সভায় রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
সভায় চীনের ভাইস মিনিস্টার বলেছেন, দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে। পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে ‘গো অ্যান্ড সি’ সফর বিনিময়ে চীনের পক্ষ বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব চীনকে তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অব্যাহতভাবে টেকসই প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।