অনির্দিষ্ট বন্ধের বেড়াজালে কিন্ডারগার্টেন-শিক্ষক

অনির্দিষ্ট বন্ধের বেড়াজালে কিন্ডারগার্টেন-শিক্ষক

অনির্দিষ্ট বন্ধের বেড়াজালে কিন্ডারগার্টেন-শিক্ষক

কাদির চৌধুরী বাবুল

আমারমতো এদেশে লক্ষাধিক বেসরকারি শিক্ষক আজ অবহেলিত। বেসরকারি/কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক বলে এদেশে আমাদের মূল্য নেই। এদেশে শিক্ষা বিস্তারে আমাদের অবধানের কোনো স্বীকৃতি নেই।

এবার প্রমাণ হলো করোনাকালীন সময় নয় মাস ধরে আমাদের কর্ম ও অধিকার কেড়ে নিয়ে সরকার একবারে হাত পা বেঁধে আমাদের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে বলছে “কীভাবে তুমি বাঁচবে সেটা তুমি জানো”। এবছর মার্চের ১৭ তারিখ স্কুল বন্ধ ঘোষণার পর বারবার একমাস বর্ধিত করে ছুটি ঘোষণা দিয়ে আমাদেরকে বিদ্যালয়ের কুঠির সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে। না পারছি শিক্ষকতা ছাড়তে, না পারছি ধরে থাকতে।

এপর্যন্ত নয় মাস ধরে সরকার আমাদের কর্ম পরিবর্তন করার সুযোগটাও দেয়নি। যদিও কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাঁচার জন্য নানান উপায় অবলম্বন করেছেন৷ কেউ চা বিক্রি, হকারী, ফল বিক্রেতা, কৃষি খামারে মজুরী করেও বাঁচতে চাচ্ছেন। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী কেউ কেউ স্কুল ছেড়ে দিয়ে ঋণের বোঝা নিয়ে আত্মহত্যাও করেছেন অথচ সরকার বহু সেক্টরে প্রণোদনা দিয়েছে, কেবল এই সেক্টর ব্যতীত।

এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগক্তারা বছর শেষে ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি ১০ ভাগও আদায় না করতে পেরে বেকায়দায় পড়েছেন। কেউ কেউ হয় স্কুল ছাড়ছেন, নয়তো, ভাড়া, বিল প্রসঙ্গিক ব্যয় বহন করে মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে হাটছেন, বলাবাহুল্য মাসে মাসে শিক্ষদের বেতন পরিশোধ করা তো বিরাট কঠিন ব্যাপার। কেউ কেউ সামন্য সামান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চলমান কর্ম কেড়ে নিয়ে সরকার আজও তাদের জন্য কিছু ভাবেনি। নয় মাস ধরে এসব শিক্ষক কীভাবে পরিবার পরিজন, মা বাবা, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বেঁচে আছে তা কারও ভাবনায় নেই অথচ সরকার তাঁর সরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মানবিক কারণে বেতন বোনাস শতভাগ পরিশোধ করে যাচ্ছে। আমাদের বেলায় মানবাধিকার বলতে ন্যুনতম কিছুই নেই মনে হচ্ছে! আমাদের কর্ম কেড়ে নিয়ে সরকার আমাদের জন্য একবারও ভাবেনি, আমাদের এতোগুলা মুখের খাদ্য কোথায় হতে আসবে?
করোনার নামে আমাদের উপর চলছে স্ট্রিমরোল অথচ এমন কোনো সেক্টর বা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে করোনাকালীন বিধি বিধান, নিষেধ আছে বা কার্যকর আছে। এমনকি দেশের অর্ধেক শিক্ষাব্যবস্থা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, ইংলিশ সিডিয়ামও নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে।

আজ এটা প্রমাণীত হয়ে গেছে, এদেশে কিন্ডারগার্টেন/ বেসরকারি শিক্ষকদের কোনও অধিকার বা মূল্য নেই। জীবন বলতেও কোন কিছু নেই। অধিকারের কথা বলার সুযোগ নেই। মানবাধিকার বলতেও কিছু নেই।

আমার এ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার প্রজন্মকে বলে যাবো, অবহেলিত ও নিগৃহীত বেসরকারি/কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক হওয়ার চেয়ে একজন দিনমজুরই ভালো। এমন ভুল যেনো জীবনে ওরা না করে।

লেখক : প্রধান শিক্ষক, নিউ ভিশন কেজি এন্ড হাই স্কুল, বাহুবল, হবিগঞ্জ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *