অন্যদের কাঁপাচ্ছেন চরমোনাই পীরের দুই ভাই

অন্যদের কাঁপাচ্ছেন চরমোনাই পীরের দুই ভাই

অন্যদের কাঁপাচ্ছেন চরমোনাই পীরের দুই ভাই

পাথেয় রিপোর্ট : সময় বদলে গেছে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ভোট ব্যাংকে হানা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দেশের অন্যান্য ইসলামী দলগুলো সে পরিমাণ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারলেও ইসলামী আন্দোলন সেটা করে দেখাতে পেরেছে। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় দুই দলের পরেই চরমোনাই পীরের এ পার্টি। বরাবরই জাতীয় নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া দলটি এবার প্রার্থী দিয়েছে তিনশো আসনেই। তারা প্রচার করছে জিতলেও হাতপাখা আর হারলেও হাতপাখা। হারজিত বড় নয়, সঠিক জায়গায় ভোট প্রয়োগই বড়। তবে আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বরিশাল কাঁপাচ্ছেন চরমোনাই পীরের দুই সহোদর।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। কোথাও কোথাও আওয়ামীলীগ বিএনপির চেয়েও প্রচারে এগিয়ে আছে তারা।হিজলা থানাধীন মেমানিয়া ইউনিয়ন টেকের হাট বাজারে পথসভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিতে দেখা যায় বরিশাল-৪ (হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ কাজিরহাট) আসনে চরমোনাই পীরের ভাই ইসলামী আন্দোলন মনোনীত হাত পাখা মার্কার প্রার্থী  মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ নুরুল কারিমকে। এদিকে বরিশাল সদর আসনেও আগের চেয়ে আরও দুর্বার গতিতে প্রচারে আছেন মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম।

এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরিশাল ৫ ও বরিশাল ৪ ইসলামী আন্দোলনের চেহারা বদলে দিতে পারে। তুমুল অস্বস্তিতে রয়েছে বড় দলগুলো। বিশেষত সারা জীবন ইসলামের নামে ভোট পাওয়া বিএনপি। যেহেতু আলেম উলামা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করছে সেই হিসাবে ইসলামী আন্দোলনকে অনেক বড় হিসেবেই দেখছেন খালেদা ভক্তরা।

দলীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন. বরিশালে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে একজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বরিশালের আসনগুলোতে তাঁরা শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। কারণ, এখানে রয়েছে তাঁদের নিজস্ব ভোটব্যাংক। চরমোনাই মরহুম পীরের নিজেদের মাতুলালয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের ছেলে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। ওইবার তিনি ২৭ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। এবারও তিনি বরিশাল সদর আসনে প্রার্থী হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঝালকাঠি-২ (সদর) আসনেও।

২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। পরে খুলনা এবং গাজীপুর নির্বাচনেও দলের মেয়র প্রার্থী ছিল। চার সিটি নির্বাচনেই তৃতীয় অবস্থানে ছিল তাদের প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৮ হাজার, দক্ষিণে ১৫ হাজার, খুলনায় ১৪ হাজার ও গাজীপুরে ২৬ হাজার ভোট পেয়েছে দলটি।

ইসলামী আন্দোলন সূত্র জানায়, বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে বরিশাল সদর আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। গত ১০ বছরে এই আসনে তাদের ৪ থেকে ৫ গুণ ভোট বেড়েছে। এ ছাড়া বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-মুলাদী) তাদের ভোটার আছেন। তাই এই দুটি আসনে জয়ের আশা করছেন তাঁরা। বাকি আসনগুলোতে আশানুরূপ ভোট পাবেন বলে আশা নেতাদের।

বরিশাল বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ইসলামী আন্দোলনের ভোট তাঁদের জন্য চিন্তার বিষয়, এটা ঠিক। বিগত দিনের নির্বাচনী ফলাফল থেকে বলা যায়, ইসলামিমনা ভোটারদের ভোট বিএনপির বাক্সে পড়ে। হাতপাখা (ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক) নির্বাচন না করলে ওই ভোটগুলো বিএনপি পেত। সে ক্ষেত্রে এবার ইসলামী আন্দোলন আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিএনপির জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর। তারপরেও তাতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ, মানুষ বিএনপির পক্ষে এবং বর্তমান সরকারের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মানুষ স্বাধীনভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।

নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, তারা (ইসলামী আন্দোলন) ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বরিশাল সদর আসনে ভালো ভোট পেয়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু ওইবার এই আসনে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার জয়ী হয়েছিলেন। আগের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা। গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *