পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বোমা ও গোলা হামলা শুরুর পর থেকে গতকাল বুধবার প্রথমবারের মতো কিছু বেসামরিক লোকজনকে এলাকাটি ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন এমন গুরুতর অসুস্থ লোকজন এবং পশ্চিমা দেশ ও ফিলিস্তিনের দ্বৈত নাগরিকদেরই শুধু রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে মিসরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার বৃহত্তম শরণার্থীশিবির জাবালিয়ায় ৫০ জন নিহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল আবারও সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আট হাজার ৭৯৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।
এদিকে গাজায় গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৭৬ জন ফিলিস্তিনি রোগী অ্যাম্বুল্যান্সে সীমান্ত পার হয়ে মিসরে গড়ে তোলা অস্থায়ী হাসপাতালে যায়। এ ছাড়া ৩৩৫ বিদেশি পাসপোর্টধারী (ফিলিস্তিনি দ্বৈত নাগরিকসহ) অতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠা গাজা ছাড়তে পেরেছে।
গতকাল সীমান্তে সব মিলিয়ে কয়েক শ লোক অপেক্ষায় ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, প্রথম ধাপে ৮০ জন আহত ফিলিস্তিনি, দ্বৈত নাগরিকসহ প্রায় ৫০০ জনকে গাজা ছাড়তে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে গাজা ছেড়ে মিসরে পৌঁছতে পারা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া সেখানে বাস থেকে বর্ষীয়ান লোকদেরও নামতে দেখা গেছে।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের অধ্যাপক তামের কারমাত বলেন, কয়েক শ লোকের জন্য রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার বিষয়টি ‘সাগরে এক ফোঁটা পানির সমতুল্য’।
সীমান্ত ক্রসিংয়ে পারাপারের জন্য ফিলিস্তিন, ইসরায়েল ও মিসর তিন পক্ষেরই সম্মতি লাগে। তবে গাজার ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন দলে দলে ঢুকে পড়তে পারে—এ আশঙ্কায় মিসর রাফাহ দিয়ে লোক পার হতে দিতে গড়িমসি করছিল।
৭ জিম্মি নিহতের দাবি
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হামাস জানিয়েছে, জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে মঙ্গলবার বিমান হামলায় সাত জিম্মি নিহত হয়েছে। হামাসের অভিযোগ, জিম্মিদের নিরাপত্তা নিয়ে ইসরায়েল আসলে উদ্বিগ্ন নয়।
এদিকে গাজার ভেতর চলমান লড়াইয়ে উত্তর গাজার বেইত হানুনে ইসরায়েলের চারটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করার দাবি করেছে বাহিনীটি। ইসরায়েল মঙ্গলবার থেকে গাজার লড়াইয়ে তাদের ১৫ সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েলে রপ্তানি বন্ধের আহ্বান
এদিকে ইসরায়েলে তেল ও খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। এ ছাড়া গাজায় হামলা অব্যাহত থাকলে কঠোর পরিণতি হবে বলে আবারও সতর্ক করেছে দেশটি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ান বলেছেন, গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না হলে এবং হামলা অব্যাহত থাকলে পরিণতি খুবই কঠিন হবে।
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী হোসেইনি খামেনি বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে লোকজন রাস্তায় নেমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। তারা এরই মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে।’
বলিভিয়ার সম্পর্ক ছিন্ন
এরই মধ্যে লাতিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলিভিয়া। এর কারণ হিসেবে গাজায় মাত্রাতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত সোমবার বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আরসে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইলালওয়ানির সঙ্গে সাক্ষাতের পর গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বলিভিয়ার এই পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ’ আখ্যা দিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ কর্মকর্তার পদত্যাগ
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা, শিশুসহ বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের নিউ ইয়র্ক কার্যালয়ের পরিচালক ক্রেগ মুখিবার।
সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি