অর্থ সংকট : এই প্রথম ‘হজ কোটা’ ফেরত পাঠাল পাকিস্তান

অর্থ সংকট : এই প্রথম ‘হজ কোটা’ ফেরত পাঠাল পাকিস্তান

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান ডলারের মজুত বাঁচাতে চলতি বছর সৌদি যে হজ কোটা দিয়েছিল — তা থেকে ৮ হাজারেরও বেশি কোটা ফিরিয়ে দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম ঘটল এ ঘটনা।

কোন দেশ থেকে কতজন হজ পালন করতে পারবেন— প্রতি বছরই তা নির্দিষ্ট করে দেয় সৌদি আরবের সরকার; এই ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘হজ কোটা’। বিভিন্ন দেশের হজ কোটা নির্ধারণের পর তা সংশ্লিষ্ট সরকারকে জানিয়েও দেওয়া হয়।

সেই অনুযায়ী চলতি ২০২৩ সালে পাকিস্তানের কত জন নাগরিক হজের উদ্দেশে সৌদি যেতে পারবেন— তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল দেশটি। কিন্তু তীব্র অর্থনৈতিক চাপ ও ডলার সঙ্কটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান সেই সংখ্যা পূরণ করতে না পারা এবং অর্থ সাশ্রয়ের জন্য সেই কোটা ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর মাধ্যমে অন্তত ২৪ লাখ ডলার সাশ্রয় করতে পারবে দেশটি।

পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি ২০২৩ সালের কোটায় ১ লাখ ৭৯ হাজার পাকিস্তানিকে হজের জন্য অনুমতি দিয়েছিল সৌদি সরকার। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজে যাবেন তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৬০৫টি কোটা, বাকিগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজে যাবেন— তাদের জন্য।

কিন্তু তীব্র ডলার সংকটের কারণে চলতি বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজের আবদেন পড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। বিগত বছরগুলোতে যেখানে কোটার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি আবেদন জমা পড়তো— সেখানে চলতি বছর দেশটিতে হজের আবেদন পড়েছে মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ, সৌদির দেওয়া কোটার চেয়েও আবেদন কম হয়েছে ৮ হাজারের বেশি।

ব্যাপারটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জানানো হলে মন্ত্রিসভা বাড়তি এই কোটা সৌদিকে ফেরত দেওয়ার পরামর্শ দেয়। সেই পরামর্শ মেনে শনিবার সেই কোটা ফিরিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর যেসব পাকিস্তানি হজ করতে যাচ্ছেন, হজ পালন বাবদ তাদের প্রত্যেকের ব্যয় হবে প্রায় ১২ লাখ পাকিস্তানি রুপি। দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ যেখানে প্রায় তলানিতে ঠেকে গেছে— সেখানে বর্তমানে এটা অনেক বড় একটি অঙ্ক।

কোনো দেশের ন্যূনতম অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে যেখানে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলারের মজুত থাকতে হয়, সেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যয় মেটানোর মত ডলার আছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। টালমাটাল অর্থনীতিকে সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরি ঋণ চেয়েছিল পাকিস্তান, কিন্তু সেই ঋণ এখনও মেলেনি। কবে মিলবে— তা ও অনিশ্চিত।

এ পরিস্থিতিতে ডলার সংরক্ষণ ও সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটির সরকার। রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— যেসব হজযাত্রী ডলারে তাদের ব্যয় পরিশোধ করবেন— সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিশেষ কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সূত্র : পাকিস্তান অবজার্ভার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *